গত বছর ১ নভেম্বর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ‘বর্ধিত-ভাড়া’ কার্যকর হয়। সে সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, মিটারবিহীন কোন সিএনজি অটোরিক্সা আর রাজপথে চলতে পারবে না। তিনি অনুরোধ করে বলেছিলেন, মিটারবিহীনভাবে কেউ যেন যাত্রী না হন। কারণ এসব কারণেই সিএনজি অটোরিক্সার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
কিন্তু কার্যত মন্ত্রীর এসব ঘোষণা ঘোষণাই রয়ে গেছে। রাজপথে উল্টো চিত্র। মিটারের ভাড়া বাড়ানোর পর বেড়ে গেছে সিএনজির আগের ভাড়ার পরিমাণও। অর্থাৎ, যেই লাউ সেই কদু; আসল ক্ষতি সাধারণ যাত্রীদের।
মিটার অনুসারে সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো যাচ্ছে কি না, রাজপথে যাত্রীরা কতটা উপকৃত হচ্ছেন কিংবা কতটা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এসব বিষয়গুলো দেখার জন্য আসলেই কেউ নেই। মন্ত্রীর লোক দেখানো কার্যকলাপে মানুষ আসলে বিরক্ত।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে প্রতিনিয়ত বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। কিছুতেই মিটারে যেতে রাজি নয় অটোরিকশা চালকেরা। সিএনজির গায়ে পুলিশ কন্ট্রোলরুমের যে নাম্বার দেওয়া থাকে তাতে ফোন করলে কেউ ফোন ধরেন না। তাই সিএনজি অটোরিক্সার চালকদের কাছে একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েন যাত্রীরা।
নতুন মিটার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর কিছুদিন মিটার এবং তারপর থেকে মিটারের ভাড়া থেকে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেশি ভাড়া চাইলেও সম্প্রতি আবারো তারা ভাড়া ঠিক করে গাড়ি চালাচ্ছে! সিএনজি ভাড়া মিটার অনুসারে হওয়ার কথা থাকলেও কম দূরত্বের যে কোন স্থানে যাওয়ার জন্যও ২৫০ টাকা দাবি করছে তারা।
গুলশান ১ থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত নতুন মিটার চার্জ অনুসারে সিএনজির ভাড়া আসে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। রাস্তা ফাঁকা থাকলে আরো কম টাকা। অথচ গুলশান মার্কেটের সামনে দাড়িয়ে থাকা যে কোন সিএনজি চালককে কারওয়ান বাজারে আসতে বললে তারা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দাবি করেন।
খিলখেতে থাকেন ফারহানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশুনা করছেন তিনি। চ্যানেল আই অনলাইনকে ফারহানা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্য সিএনজি ভাড়া করলে আমাকে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। মিটারে যাওয়ার ব্যাপারে কোন কথা শুনতে নারাজ চালকরা। অথচ নিকুঞ্জ থেকে জ্যাম ঠেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলেও মিটারে ভাড়া ওঠে ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা। আবার কোনদিন জ্যামে কয়েক ঘণ্টা বসে থাকলে মিটারে যদি ঠিক করা ভাড়ার থেকে বেশি বিল ওঠে তাহলে ৫০ টাকা বাড়িয়ে দিতে বলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএনজি চালক রফিকুল মিয়া বলেন, প্রতিদিন গাড়ির মালিককে জমা দিতে হয় ৯৫০ টাকা। মিটারে গেলে তাদের পক্ষে পোষানো সম্ভব নয়। তাই মিটারে যেতে চান না তারা।
বিষয়টি নিয়ে গাড়ি মালিকদের বক্তব্য জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চ্যানেল আই অনলাইনকে একজন গাড়ির মালিক বলেন, মন্ত্রী আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন সবকিছু। একটা সিএনজি যে দামে কিনেছি তাতে মাসে ২৫ হাজার টাকার মত না ওঠালে লাভ থাকে না। তাছাড়া গাড়ি বারবার ঠিক করাতে খরচাপাতিও লাগে। সবকিছু জোর করে চাপিয়ে দেওয়ায় আমাদের আর কিছু করার নেই। ৯৫০ টাকার কম নেওয়া অসম্ভব ব্যাপার।