চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মায়েদের স্মৃতিতে ক্রিকেটার সন্তানেরা যেমন

সুদূর ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মাঠে তাদের পরিশ্রম-নিবেদন ব্যবধান গড়ে দেবে জয়-পরাজয়ের মধ্যে পার্থক্য। করবে হাজার মাইল দূরে ১৬ কোটি বাংলাদেশিকে আবেগময়।

তবে এই কোটি কোটি লাল-সবুজ সমর্থকদের মধ্যে কয়েকজন নারীর আবেগটা আবার অন্য সবার থেকে আলাদা। অন্য সবাই মাঠের ফলাফল নিয়ে মাথা ঘামালেও সেই বিশেষ কিছু নারীর চিন্তা থাকবে, সুস্থভাবে খেলাটা শেষ করেছেন তো মাশরাফী-সাকিব-মুশফিকরা!

পাঠকরা হয়তো বুঝেও ফেলছেন কাদের কথা বলা হচ্ছে! হ্যাঁ, এই বিশেষ নারীদের পরিচয় তারা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্রিকেটারদের মা। আর মা হওয়াতেই মাঠের খেলার সঙ্গে সঙ্গে টিভির পর্দায় তাদের চোখ থাকে ছেলেদের প্রতিটি কার্যক্রমের দিকেও। ভালো করলে এই মায়েরা যেমন হন খুশিতে উদ্বেল, তেমনি খারাপ করলে মন ভারী হয়। অনেকে তো খেলা দেখাই ছেড়ে দেন!

ক্রিকেটার ছেলেদের টুকরো এরকম নানা স্মৃতি নিয়ে গল্পের ঢালী সাজিয়ে বসেছিলেন ছয়জন মা। মা দিবস উপলক্ষে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, মোসাদ্দেক হাসান ও রুবেল হোসেনদের মায়ের সেই সব গল্পকে টুকরো আকারে সাজিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পৃষ্ঠপোষক লাইফবয়।

শুরুতেই ছেলেদের জন্মের মূহুর্তগুলো কেমন ছিল তা নিয়ে কথা বলেছেন গর্বিত মায়েরা। যেমন-জন্মের সময় সাদা কাগজের মত ধবধবে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চকচক করে ওঠে আরাফাত বেগমের চোখ।

ছয় মায়ের ছেলেদের মধ্যে ছোট থেকেই একটা বিষয়ে ছিল ভীষণ রকম মিল। প্রত্যেকেই ক্রিকেটকে করেছেন ধ্যানজ্ঞান। ছোটবেলায় ব্যাট-বল ছাড়া অন্য কোনো খেলনা দিয়ে খেলেননি মাশরাফী, এই তথ্যটা জানিয়েছেন মা হামিদা মোর্ত্তজা। আর সাকিবের মা শিরিন রেজার ভাষ্য, খেলাই ছিল তার ছেলের একমাত্র কাজ। অন্য সব খেলা খেললেও ক্রিকেটেই ভালোবেসেছেন রুবেল। সেজন্যই তার ছেলে আজ ক্রিকেটার বলে জানিয়েছেন মা মিনারা বেগম।

খেলতে খেলতে ভবিষ্যতে জাতীয় দলে খেলবে ছেলেরা- এমন ভাবেননি কোনো মা’ই। শিরিন রেজা যেমন টিভিতে দেখে অবাক হয়েছেন, পরদিন জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হতে যাচ্ছে সাকিবের! আরাফাত বেগম যেমন ভাবেননি কোনোদিন জাতীয় দলে খেলবেন তার ছেলে রিয়াদ!

ছেলে যে ম্যাচে খেলেন সে খেলা চলাকালীন সময়ে কখনোই টিভির সামনে থেকে ওঠেন না মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের মা হোসনে আরা বেগম। মুশফিকুর রহিমের মা রহিমা খাতুন ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন ছেলের খেলা দেখার সময় পর্যন্ত ছটফট করতে থাকেন তিনি। হামিদা মোর্ত্তজা জানালেন, ছেলে চোটে পড়ার থেকে আর খেলা দেখেন না!

ছেলেদের নিয়ে বিশেষ কিছু স্মৃতি এখনো গেঁথে আছে মায়েদের মনে। শিরিন রেজা যেমন ভাগাভাগি করলেন তেমনই এক স্মৃতি,‘একদিন আমি নামাজ পড়ছি। তখন খুব গরম। পেছন থেকে মনে হচ্ছে আমার শরীরে ঠাণ্ডা বাতাস লাগছে। নামাজ শেষ করে তাকিয়ে দেখলাম যে আমার ছেলে আমাকে বাতাস করছে!’

মায়ের সঙ্গে প্রতিনিয়তই যোগাযোগ থাকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। এমনকি দেশের বাইরে গেলেও দিনে অন্তত একবার মায়ের সঙ্গে কথা হয় তার। আর হামিদা মোর্ত্তজা অপেক্ষায় থাকেন, কখন শুনবেন ছেলের মুখে আম্মা ডাক!

আসছে ঈদে ছেলেদের পাশে পাবেন না এই মায়েরা। নিজেদের আনন্দ ভুলে বাংলাদেশের জনগণের মুখে হাসি ফোঁটাতে ব্যস্ত থাকবেন টাইগার ক্রিকেটাররা। ব্যস্ত থাকবেন বিশ্বকাপ নিয়ে। মায়েরা মেনে নিয়েছেন ঈদে ছেলেকে পাশে না পাওয়ার সেই কষ্ট। দলের প্রত্যেকেই তাদের সন্তান। তাই তাদের দোয়া-প্রার্থনা সমানভাবে বরাদ্দ থাকবে প্রত্যেক ক্রিকেটারের জন্য। সবারই একটাই চাওয়া, বিশ্বজয় করে আসুক তাদের সন্তানেরা!