একটা বল হলেই লাঞ্চ বিরতিতে যাবে দুদল। বল হাতে দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শেষ ডেলিভারির আগে কী একটু যেন ভাবলেন। এরপর কিছুটা টেনে ছুঁড়ে দিলেন সেই বল। যাকে স্লিপের ফাঁক গলে বের করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন হাসমতউল্লাহ শাহিদী। সৌম্য সরকারের চোখ ধাঁধানো ক্যাচে লাঞ্চের ঠিক ‘সুতো মুহূর্তে’ আফগানিস্তান ইনিংসে ‘লাঞ্চ আঘাত’ হানলেন মাহমুদউল্লাহ। তার আগে অবশ্য তাইজুলের বলে দারুণ এক ক্যাচও নেন তিনি।
আফগানিস্তান: ৭৭/৩ (৩২.৪)
চতুর্মুখী স্পিন আক্রমণে আফগানিস্তানের উপর বেশ চাপই বজায় রেখেছে বাংলাদেশ। এই পথে অবশ্য আফগানিস্তান তাদের উইকেট উপহার দিয়ে স্বাগতিকদের সহায়তাও করেছে! টেস্টে ১০০তম উইকেট পাওয়ার জন্য তাইজুলের বিষয়টিই প্রথম সেশনের প্রধান আকর্ষণ।
রহমত শাহকে অত্যন্ত সাবলীল দেখা গেছে এবং তার এই ঠাণ্ডা কৌশলের কারণেই আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তিনি সেরা। তবে অপরপ্রান্ত থেকে সহযোগিতার অভাবে অনেকবেশি সাবধানী হতে হচ্ছে তাকে।
চট্টগ্রামে এদিন আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে স্পিনারদের উপরই ভরসা রাখে বাংলাদেশ। একাদশে কোনো পেসার না রেখে চার স্পিনার নিয়ে নামে তারা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে বাংলাদেশ একাদশে স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম এবং নাঈম হাসান। যার মধ্যে অন্যতম ভরসার নাম তাইজুল।
আস্থার প্রতিদানও দেন তাইজুল। একইসঙ্গে বল হাতে উইকেটের সেঞ্চুরি করে ফেলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টেস্ট ক্রিকেটে ১০০ উইকেটের মালিক বনে যান তাইজুল। ক্যারিয়ারের ২৫তম টেস্টে উইকেটের ‘সেঞ্চুরি’ পূর্ণ করলেন তিনি। যা বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম। টাইগারদের দ্বিতীয় সাফল্যটিও আসে তার হাত ধরে।
কিংসটন থেকে চট্টগ্রাম, তাইজুলের জন্য কতই না মিলের। সঙ্গে সেপ্টেম্বরের ৫ পাঁচ তারিখটাও। মজার ব্যাপার হল সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ যেন তাইজুলের জীবনে সৌভাগ্যের দিন। ২০১৪’র ৫ সেপ্টেম্বরই সাদা পোশাকে অভিষেক হয়েছিল তার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। আরেক ৫ সেপ্টেম্বর তুলে নেন টেস্টের শততম উইকেট।
ইসানুল্লাহ জানাতকে সরাসরি বোল্ড করে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। স্টাম্পের বেশ দূরে বল পিচ করে টার্ন করান তাইজুল। সেই বল সামনের পায়ে না খেলে পেছনের পায়ে খেলতে যান ইসানুল্লাহ। কিন্তু বল তার ব্যাটে না লেগে সরাসরি আঘাত হানে মিডল ও অফস্টাম্পে।
তাইজুলের আগে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ১০০ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ রফিক ও সাকিব আল হাসান। ৩৩ টেস্ট খেলে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ১০০ উইকেট নিয়েছিলেন রফিক। আর ২৮তম টেস্টে উইকেটে সেঞ্চুরি করা সাকিব এই টেস্টের আগে ৫৫ ম্যাচে ২০৫ উইকেট নিয়েছেন। টেস্টে ২০০ উইকেট নেয়া বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধিও সাকিব আল হাসান।
ইনিংসের ১২.২ ওভার ও দলীয় ১৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ইনিংসের প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই অন্তত এক বা তার বেশি ওভার করে বল করেছেন বাংলাদেশের চার স্পিনারের সবাই।
পরে বাংলাদেশ আরও একটি সাফল্য এনে দেন তাইজুল। ইহসানউল্লাহ জানাতের পর আরেক আফগান ওপেনার ইব্রাহীম জানাতকেও ফেরান তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাচে ২১ রানে থাকা জাদরানকে বিদায় করেন তাইজুল।
জাদরানের পর শাহিদীকে ফিরিয়ে লাঞ্চের আগে দলকে আরও স্বস্তি এনে দেন মাহমুদউল্লাহ। ফেরার আগে ১৪ রান করতে পারে শাহিদী। ৩১ রানে অপরাজিত রয়েছেন রহমত শাহ। লাঞ্চের পর তাকে সঙ্গ দিতে নামবেন আজগর আফগান অথবা মোহাম্মদ নবির যেকোনো একজন।