১/১১ আমলে ডেইলি স্টার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া মিথ্যা গল্প ছাপিয়ে ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা বাস্তবায়ন করার যে চেষ্টা করেছিল তা ভুল ছিল বলে স্বীকার করেছেন সে পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম, চায়ের দোকান, পারিবারিক ও সামাজিক আড্ডা এবং জাতীয় সংসদে চলছে ব্যাপক বিতর্ক। মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে মানহানির মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দায়েরের জন্য সরকারের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তাঁর পক্ষে সাফাই গাইছেন সুশীল সম্প্রদায়। বিপক্ষে আবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সাল থেকে শুরু হওয়া নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে সোচ্চার কিছু সাংবাদিক এই বিতর্কে মাহফুজ আনামের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন যারা গত তিন বছর সুশীল সম্প্রদায়ের রাজাকার পাহারাদারি ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। ডেইলি স্টার এবং তার সহোদরা প্রথম আলো ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া জগতে এতটা শক্তিশালী যে চাকরী বাঁচানোর তাগিদে ডেইলি স্টারের সম্পাদকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস প্রায় কারো নেই।
পত্রিকা দুটি সুশীল সমাজ এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী চক্রের প্রচারযন্ত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে তাদের জন্মের সময় থেকে। তাদের এই ভূমিকা সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ১/১১’র সময়ে এবং ২০১৩ সালের হেজাবি (হেফাজত-জামায়াত-বিএনপি) উত্থানে। মুক্তিযুদ্ধের এবং ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষ শক্তি হিসেবে নিজেদের দাবী করা পত্রিকা দুটি প্রয়োজনে নিজেদের নীতি বিরুদ্ধ কাজ করতে দ্বিধা করে না। তারা যখনই স্ববিরোধী কোনো কাজ করে তখন তার পক্ষে তারা এমনভাবে যুক্তি উত্থাপন করে যে গভীরভাবে পর্যালোচনা না করলে সে যুক্তিতে সাধারণ পাঠক বিভ্রান্ত হয় এবং তাদের উত্থাপিত যুক্তিকে যথার্থ মনে করে। এই সূক্ষ্ম কারচুপিতে পারঙ্গম বলেই দীর্ঘকাল ধরে তারা বাংলাদেশের চেতনাজগতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বহুল প্রচারিত বলে তারা নিজেদের সংজ্ঞায় বাঙালির চেতনা সৃষ্টির সুযোগ পায়। তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির প্রধান কারণগুলো হচ্ছে ট্রান্সকম গ্রুপের অঢেল টাকা, প্রাক্তন বামপন্থীদের পত্রিকায় চাকরী দিয়ে সংগ্রহ করা রাজনৈতিক মেধা, মূলধারার রাজনীতি থেকে বিতাড়িত নেতাদের দ্বারা গঠিত জনসমর্থনহীন রাজনৈতিক দলগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পাওয়া রাজনৈতিক শক্তি, ব্যাপক মাত্রার আন্তর্জাতিক কানেকশন, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের দালালী, সাধারণের স্বার্থ বিসর্জন করে হলেও ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের স্বার্থ রক্ষা করার কারণে পাওয়া সমর্থন, ইত্যাদি।
পত্রিকা দুটি তাদের জনমত সৃষ্টি করার সক্ষমতাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে কাজে লাগায়। যখন যেভাবেই কাজে লাগাক না কেনো এরা কখনোই পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিপক্ষে যায় না। পশ্চিমারা যখন আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়ার প্রয়োজন মনে করে তখন তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়, যখন হেজাবি চক্রকে সমর্থন দেয়ার দরকার হয় তখন হেজাবি। এরা কোনো দলের দীর্ঘ মেয়াদী শাসন পছন্দ করে না। দীর্ঘমেয়াদে শাসন করলে দলগুলো নিজেদের শক্তিশালী করে ফেলতে পারে। তাই একবার জামায়াত-বিএনপি একবার আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে তারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বড়াই করে। ‘৯০ এর গণআন্দোলনে দেশব্যাপী সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে তারা ‘৯১’র নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি’র পালে হাওয়া দিয়ে তাদের জিতিয়ে দেয়। জামায়াত-বিএনপি আবারো তাদের সমর্থন পায় ‘০১ সালের নির্বাচনে। ‘৯৬ এবং ‘০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পালে হাওয়া দেয় এই পত্রিকা দুটি। এরা যখন যাদের সঙ্গে থেকেছে তখন তারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছে। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের ইশারায় তারা যখন যাকে সমর্থন দেবে তখন তারা জিতে যাবে এই ধারাটি শেষ হয় ‘১৩ সালে। ‘১৩ সালে এসে তাদের রাজনৈতিক অংকের সূত্র বদলে যায়। নতুন সূত্র তারা এখনো আবিষ্কার করতে পারেননি বা প্রয়োগ করেননি।
সুশীল সম্প্রদায় শুধু আওয়ামী লীগকে বা জামায়াত-বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে জিতিয়ে দেয়ার মধ্যে সীমিত থাকতে চায়নি। তারা ১/১১’র কুশীলবদের অন্যতম। ডঃ মুহম্মদ ইউনূস এবং ডঃ কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন সুশীল সম্প্রদায় এ সময়ে নিজেরাই ক্ষমতার মসনদে গিয়ে বসতে চেয়েছিল। সে লক্ষ্যে তারা সেনাবাহিনীর “মাইনাস টু” ফর্মুলায় সমর্থন যুগিয়ে বাংলাদেশকে রাজনীতি শূন্য করে দিতে চেয়েছে। এ ফর্মুলা বাস্তবায়ন করার জন্য রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের নামে সত্য এবং মিথ্যা কুৎসা রটিয়ে তাদের জেলে প্রেরণের পথ সুগম করেছে। দুই প্রধান দলের নেত্রীরা তাদের এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েননি। অন্যদিকে, সামরিক আইনে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকাকালীন সময়ে তারা ডঃ ইউনূসের রাজনৈতিক দল গঠনে তৎপর হয়েছে। সে দল গঠনের জন্য অতি উৎসাহী হয়ে তারা জনমত গঠনে কাছ করেছে। তাদের পত্রিকা ডঃ ইউনূসের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেছে। ডঃ ইউনূসের দল সাফল্য পেলে সুশীল সম্প্রদায়ের অনেককেই সে দলের নেতৃত্বে দেখা যেত।
আপাত দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি হিসেবে পরিচিত পত্রিকা দুটি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী হেজাবিদের সমর্থন দেয়া শুরু করে। সর্ব প্রথম তারা গণজাগরণকে বিতর্কিত করার জন্য গণগাজরণে যোগ দেয়া মানুষদের নষ্ট ছেলে হিসেবে পরিচিত করার জন্য হাসানাত আব্দুল হাই এর একটা গল্প ছাপে ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায়। এরপর হেজাবিদের সঙ্গে যোগ দিয়ে গণজাগরণ বিষয়ে বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য চলে দুই পত্রিকাতেই। মানবতাবিরোধী ট্রাইবুন্যাল যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মামলার রায় দিলে হেজাবি পত্রিকা ‘আমার দেশ’ ব্যাপক মিথ্যাচার করে ধর্মীয় উস্কানী দিলে জামায়াত-শিবিরের লোকেরা সারাদেশে শতাধিক মানুষ হত্যা করে, ঘর-বাড়ি, অফিস-আদালত-ব্যাংক জ্বালিয়ে দেয়, শত শত যানবাহন ধ্বংস করে। পরবর্তী কালে ‘আমার দেশ’ সম্পাদককে সহিংসতার দায়ে গ্রেফতার করা হলে ‘প্রথম আলো’ সম্পাদক মতিউর রহমান এবং ‘ডেইলি স্টার’ সম্পাদক মাহফুজ আনাম দুজনেই ‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে অন্যদের সঙ্গে সই করেন যৌথ বিবৃতিতে। শুধু মাহমুদুর রহমানই নয়, হেফাজতের সমাবেশ নিয়ে মিথ্যা রিপোর্টের কারণে গ্রেফতার হওয়া ‘অধিকার’ সম্পাদক আদিলুর রহমানের মুক্তি দাবি করে দেয়া বিবৃতিতেও সই করেছিলেন এই দুই সুশীল পত্রিকা সম্পাদক।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দেয়া শুরু হলে জামায়াত-বিএনপি দেশব্যাপী যে ব্যাপক নাশকতা চালায় তা আড়াল করার জন্য নাশকতার উপর রাজনৈতিক আবরণ দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয় এই দুই সুশীল পত্রিকা। তাদের প্রচারণা হেজাবিদের ১৩ দফার সমর্থকদের শক্তি যোগায়। তারা হেজাবির মধ্যযুগীয় বর্বরতা আড়াল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। তখনকার পত্রিকাগুলো পড়ার সময় এই দুই পত্রিকার পাঠক দেশ থেকে হেজাবিদের হত্যা-ধ্বংস দমন করার চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তাই বেশি উপলব্ধি করেছে। তারা একই কাজ করেছে ‘১৫ সালের মানুষ পোড়ানো আন্দোলনের সময়ে। রাজপথে শত শত সাধারণ পথচারী পুড়িয়ে রাজনৈতিক দাবি আদায়ের প্রচেষ্টাকে আড়াল করে এই দুই পত্রিকার তখনকার প্রচারণা দেখা যায় অগ্নিসন্ত্রাস দমনরত সরকারের বিরুদ্ধে। সরকারকে তখন তারা (সুশীল সম্প্রদায়) অগ্নিসন্ত্রাসীদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সন্ত্রাস দমনের পরামর্শ দিয়েছিল; অগ্নিসন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল; অগ্নিসন্ত্রাস দমনে সরকার ব্যর্থ বলে প্রচার করেছিল। তারা তখন অগ্নিসন্ত্রাসের উৎস জামায়াত-বিএনপিকে তথাকথিত আন্দোলন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেনি বরং অগ্নিসন্ত্রাস দমনে ব্যর্থ বলে সরকারকে পদত্যাগ করার আহবান জানিয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুন্যাল দঠন করার পর থেকেই এরা স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-বিএনপি-পাকিস্তানী-সৌদি-আমেরিকা চক্রের পক্ষে বিভিন্ন কৌশলে ট্রাইবুন্যালকে, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার প্রচেষ্টার পুরোভাগে কাজ করেছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির সংবাদ ভেতরের পাতায় ছোট করে ছাপিয়ে প্রথম পাতায় বড় করে ছাপিয়েছে ট্রাইবুন্যাল সম্পর্কে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিফেনের কটূক্তি, অযৌক্তিক সমালোচনা। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে এরা প্রাধান্য দিয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের টাকা খাওয়া তথাকথিত মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মন্তব্যকে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারবর্গের তুলনায় এদের পত্রিকায় জোড়াল হয়ে উঠেছে কাদের মোল্লা, কামারুজ্জান, সাকা চৌধুরী, গোলাম আযম পরিবারের সদস্যদের প্রতিক্রিয়া।
‘১৩ থেকে ‘১৫ সালের চরম রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এই দুই পত্রিকার ভূমিকা ছিল মুক্তিযুদ্ধ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে; হেজাবিদের সমর্থনে; অর্থাৎ বাংলাদেশের বিপক্ষে। এর প্রধান কারণ এরা মূলত সাম্রাজ্যবাদী। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা সেই একাত্তর থেকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে এরা সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। তাদের নিয়ন্ত্রণ এমনকি আওয়ামী লীগের ‘৯৬ থেকে ‘০১ সাল সময়ের সরকারের সময়েও হ্রাস পায়নি। ‘০৯ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের নিয়ন্ত্রণ খর্ব করতে শুরু করে। সাম্রাজ্যবাদীদের নিয়ন্ত্রণ যাতে খর্ব না হয় তার জন্য ন্যায়নীতি বিসর্জন দিয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে সুশীল সম্প্রদায়ের মুখপাত্র ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো। সাম্রাজ্যবাদীদের নিয়ন্ত্রণ অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থেই তারা সমর্থন যোগায় হেজাবির সন্ত্রাসবাদে, জঙ্গিবাদে, রাজনীতিতে।
সাম্রাজ্যবাদের মুখপত্র ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোর বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের পরিধি বিশাল। ‘১৩ থেকে ‘১৫ সালের চরম রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে হেজাবির প্রতি সমর্থন দিতে গিয়ে সুশীল সম্প্রদায়ের এই দুই মুখপাত্র ভূমিকা রেখেছে ৫ জানুয়ারী নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টায়। হেজাবি সমর্থনে সকল প্রকার কূটনৈতিক শিষ্টাচার জলাঞ্জলি দেয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার সমালোচনা করে বক্তব্য রাখলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে ডিসেন্সি শেখাতে ডেইলি স্টারে কমেণ্ট্রি লেখেন সম্পাদক মাহফুজ আনাম। ‘১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকাতে গোল টেবিল আলোচনার খবর ছাপেনি ডেইলি স্টার। ভারতের সমর্থন লাভের লক্ষ্যে বিএনপি নেতা ডঃ আসাদুজ্জামান রিপনের ভারত তোষণ মন্তব্য টপ কোট করে ছেপেছে ইংরেজি পত্রিকাটি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নারী লাঞ্ছনা ঘটনার দায় ছাত্রলীগের উপর চাপানোর ব্যর্থ চেষ্টা যারা করছে তাদের মধ্যে রয়েছে ডেইলি স্টার। ডেইলি স্টারের ১৬ এপ্রিল ২০১৪ সংখ্যাটি এ খবরের মধ্যে ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ এমনভাবে এনেছে যে পাঠকের ধারণা হবে – এই অপকর্মে ছাত্রলীগ জড়িত। ‘১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মাহফুজ আনাম কমেণ্ট্রিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটকে রুয়ান্ডার তুতসি এবং হুতুদের জাতিগত সমস্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর মতে তুতসি এবং হুতুরা যেমন পারস্পরিক জাতিগত ঘৃণা একে অপরকে হত্যা করছে তেমনি বিএনপি এবং আওয়ামী লীগও একে অপরকে হত্যা করছে। ডেইলি স্টার এবং তার সম্পাদক মাহফুজ আনামের ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করা যাবে না। বিগত তিন বছরে তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তাৎক্ষণিকভাবে তুলে ধরেছি ফেসবুকের টাইমলাইনে। সেসব ফিরিস্তি দিতে গেলে এই নিবন্ধের কলেবরে তা ধারণ করা সম্ভব হবে না; লাগবে কয়েকটি বই। সর্বশেষ একটি উল্লেখ করে এই পর্যায় শেষ করতে চাই।
ডেইলি স্টার জামায়াতকে একাত্তরের ভুলের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করার পরামর্শ দিয়েছে এ বছরের ৮ জানুয়ারির সম্পাদকীয়তে। যুদ্ধাপরাধী নিজামীর ফাঁসির আদেশ বহাল থাকার প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা হরতালের সমালোচনা করে পত্রিকাটি বলেছেঃ জামায়াতের উচিৎ আদালতের রায় মেনে নেয়া এবং একাত্তরের নৃশংস যুদ্ধাপরাধের জন্য জনগণের কাছে আন্তরিক ক্ষমা চাওয়া; যুদ্ধাপরাধের বিচার জামায়তের জন্য ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে; তাদের উচিৎ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মূল নীতিগুলোকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া; একাজ যত দ্রুত তারা করবে ততই তাদের মঙ্গল।
জামায়াতের মঙ্গল চিন্তায় ডেইলি স্টার এত চিন্তিত কেনো? জামায়াত যদি একাত্তরের নৃশংস গণহত্যার জন্য ক্ষমা না চায় এবং তার জন্য যদি জামায়াতের ক্ষতি হয় তাতে ডেইলি স্টারের অসুবিধা কি? বাংলাদেশের প্রতিটি স্বাধীনচেতা, ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক মানুষ যেখানে জামায়াতের ধ্বংস কামনা করে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবী করে তখন ডেইলি স্টার জামায়াতকে সদুপদেশ দেয় কেনো? কে কার মঙ্গল কামনা করে? অবশ্যই মানুষ প্রিয়জনের মঙ্গল কামনা করে; প্রিয়জনের মঙ্গলের জন্য চিন্তিত থাকে। ডেইলি স্টার যখন জামায়াতের মঙ্গল নিয়ে চিন্তিত এবং জামায়াতকে সদুপদেশ দিচ্ছে তখন এটা বুঝে নিতে হয় যে ডেইলি স্টার জামায়াতের প্রিয়জন।
বিগত তিন বছরে ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো যে সকল কর্মকাণ্ডে সমর্থন দিয়েছে তার অনেকগুলো কারণে হেজাবি’র লোকেরা জেল খেটেছেন এবং বিচারাধীন আছেন। সেসব অপরাধের অভিযোগে বিচার হচ্ছে হেজাবি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ারও। যারা বিরাট একটা জনগোষ্ঠীকে রাজনীতি বিমুখ করেছে; রাজনীতিবিদদের প্রতি গণঘৃণা সৃষ্টি করেছে; মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছে; অরাজনৈতিক লোকদের দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করেছে; ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার পরামর্শ দিয়ে একটা প্রজন্ম থেকে রাজনৈতিক নেতা সৃষ্টি বন্ধের চেষ্টা করেছে; জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, অযুক্তিকে যুক্তি বলে প্রচার করে সাধারণ পাঠককে ধোঁকা দিয়ে শত শত প্রাণহানী এবং হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্টের উস্কানি দিয়েছেন; নাশকতা এবং নৈরাজ্যকে আড়াল করে প্রশ্রয় দিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন; তাদের বিচার কিভাবে হবে, কবে হবে? মাহফুজ আনাম অন্তত একটির জন্য বাধ্য হয়ে হলেও ভুল স্বীকার করেছেন। অন্যদের ক্ষেত্রে কি হবে? তাঁরা কি জাতির কাছে তাদের ভুল স্বীকার করবেন? অপকর্মের জন্য ক্ষমা চাইবেন? ভুল স্বীকার করলে কি অপরাধের ক্ষতি কমে যায়? ক্ষমা চাইলেই কি ক্ষমা পাওয়া যায়?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)