শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের অভিষেক ওয়ানডে ও টেস্ট খেলেছেন মাশরাফী। ১৭ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে একযুগ কাটিয়েছেন এখানকার আলো-বাতাসে। খেলেছেন অসংখ্য ম্যাচ। অথচ এখনও মিরপুরের উইকেটের প্রকৃত চরিত্র বুঝে উঠতে পারেননি বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক!
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার ভাষায়, মিরপুরের উইকেট ক্রিকেটারদের কাছে আনপ্রেডিক্টেবল।
প্রতিটি দেশই নিজেদের শক্তি-দুর্বলতা মাথায় রেখে উইকেট বানায়। ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ কাজে লাগিয়ে জয়ের পাল্লা ভারী করে। কিন্তু মিরপুরের উইকেটের যে বৈশিষ্ট্য, তাতে মাশরাফী-মোস্তাফিজদের ঘরের মাঠের সুবিধা নেয়ার সুযোগ থাকে কমই। ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলানো উইকেট থেকে সুবিধা নেয়ার আশা ছেড়ে মানিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জও এখন বাংলাদেশ।
বিপিএলের গত আসরে মিরপুরের উইকেট নিয়ে হৈচৈ কম হয়নি। ধারাবাহিকভাবে রানখরার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিলেন প্রধান কিউরেটর গামিনী ডি সিলভা ও বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটি। সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে ছাপা হয়েছিল উইকেটের বাজে অবস্থার চিত্র। উইকেট নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে জরিমানা গুনতে হয়েছিল তামিম ইকবালকে।
খেলোয়াড়দের উইকেট বানানোর সুযোগ নেই। যে কারণে মন্দের পেছনে যতটুকু ভালো লুকিয়ে থাকে, তা নিয়েই পথ চলা ছাড়া উপায় নেই টাইগারদের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফী জানালেন, তার দল এমন উইকেটে খেলতে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
‘আমি ধন্যবাদ দেবো আমাদের যারা খেলোয়াড় আছে তাদের। এটা কিন্তু আমরাও বিশ্বাস করি মিরপুরের উইকেট আনপ্রেডিক্টেবল। কেননা হঠাৎ করেই আচরণ বদলে যায়। আপনারাও দেখেছেন হঠাৎ করে টার্ন বা বল নিচু হয়ে আসছে। তখন যারা ব্যাটিং করে তাদেরও মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হচ্ছে। বাইরে যারা ড্রেসিংরুমে থাকে, তাদেরও মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হয়। আনপ্রেডিক্টেবল হলেও আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কারণ বেশিরভাগ সিনিয়র প্লেয়াররাই ১০ বছর যাবত এই উইকেটে খেলছে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও যারা খেলছে, অভ্যস্ত হয়ে গেছে।’
‘যদি দেখেন, একক্ষেত্রে সুবিধাও থাকে। আচরণ যখন বদলাতে থাকে তখন প্রতিপক্ষের জন্য একটু কঠিন হয়। আমরা যখন ২০১৫ থেকে জেতা শুরু করেছি, তখন থেকে আমার বিশ্বাস এই মাঠে আমাদের রেকর্ড ভালো। কিছু ম্যাচে মানসিক দুর্বলতার কারণে হেরে গিয়েছি। এশিয়া কাপ ফাইনাল, সেটাও বলতে পারেন। সেটা ছাড়া আমার মনে হয় এই উইকেটে আমার অ্যাডজাস্টমেন্ট একেবারে খারাপ হবে না।’ যোগ করেন অধিনায়ক।
‘চট্টগ্রামের যেটা হয়; সাধারণভাবেই আমরা জানি ব্যাটিং উইকেট হবে। আপনি যদি স্লো না তৈরি করেন, টার্নিং উইকেট না তৈরি করেন, ওটা ব্যাটিং সহায়ক হবে। এই উইকেটটা একেবারে ওই রকম না। প্রথম ইনিংসের পরে অন্যরকম আচরণ শুরু করে। এজন্য বলছিলাম আনপ্রেডিক্টেবল। কিন্তু আমি নিশ্চিত আমাদের ছেলেরা এতদিন খেলার পরে এমন কোন অজুহাত না দেয়াই উচিত। এখানে ২৫০-২৬০ করলে ওদের (জিম্বাবুয়ে) জন্য কঠিন হবে।’ এভাবেই ব্যখ্যা করলেন মাশরাফী।
দেশের বাইরে ওয়ানডে খেলতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা ধরেই নেন জিততে হলে দলের রান ছাড়াতে হবে তিনশ। ঘরের মাঠ মিরপুরে খেলা হলে লক্ষ্য নামিয়ে আনা যায় আড়াইশ’তে।
মিরপুরে সবশেষ ওয়ানডে হয়েছে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার দেয়া ২২২ রানের লক্ষ্য টপকাতে পারেনি বাংলাদেশ। হেরে যায় ৭৯ রানের বড় ব্যবধানে। এবার দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সহজ প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হলেও ব্যাটসম্যানদের সামনে চ্যালেঞ্জ থাকছে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার। ৯ মাস পর টাইগাররা মিরপুরে খেলতে নামছে, দুশ্চিন্তাও থাকছে বৈকি!