বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা দলে নিজের জায়গা নিয়ে স্বস্তিতে নেই। প্রায় প্রতিটি সিরিজ চলাকালীন তার উদ্দেশ্যে বিদায়ের বার্তা আসে। কে বা কারা মাশরাফীকে দলে রাখতে চান না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে নানা কথা শোনা যায়।
দলের প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে মাশরাফীর সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়! দল সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঝেমাঝেই দুজনের মতভেদ দেখা দেয়। ক্রিকইনফোর সঙ্গে আলাপকালে মাশরাফী তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল।
‘দ্বিতীয় পানিপানের বিরতির সময় আমি স্পাইক পরিবর্তন করতে ড্রেসিংরুমে যাই। তখন কোচকে বলি এক-দুই ওভারের জন্য স্পিনার আনা যায় কি না। মোসাদ্দেক আগে জিমি নিশাম এবং কোরি অ্যান্ডারসনকে বিপাকে ফেলেছিল। তাই আমার চিন্তা ছিল তাকে আক্রমণে আনার।’
মোসাদ্দেককে এনেই বাজিমাত করেন মাশরাফী। সেদিন রিয়াদ, সাকিবের ঐতিহাসিক জুটিতে বাংলাদেশ জয় পেলেও মোসাদ্দেক আক্রমণে এসে দ্রুত উইকেট তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষের রান কমিয়ে রাখেন। কোচ মাশরাফীর ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত ছিলেন না। মাশরাফী এক্ষেত্রে হাথুরুসিংহের নাম করেননি, তবে তীর যে তার দিকেই সেটা অধিনায়কের কথা শুনলে বোঝা যায়।
‘কিছু লোক বলেছিল এটা করা ঠিক হবে না। ঝুঁকি ছিল। তবু আমি সিদ্ধান্ত ঠিক রাখি। মোসাদ্দেক প্রথম ওভারে পাঁচ রান দিলেও আমার মনে হয়েছিল আরেক ওভার আনা যায়।’
পরের ওভারে এসেই মোসাদ্দেক বাজিমাত করেন। গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ দুর্বল করে দেন। তাতেই কিউইরা আটকে যায় ২৬৫ রানে।
মাশরাফীর এই বক্তব্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কোচ-অধিনায়কের ভেতর ‘শীতল একটা যুদ্ধ’ সবসময় চলে।
বিসিবি সভাপতির সঙ্গেও মাশরাফীর বিভিন্ন সময় নানা বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ‘দ্য নিউএজ’ পত্রিকায় ‘দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব ২০১৫’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, সাউথ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে মাশরাফী অধিনায়কত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন! গণমাধ্যমের সঙ্গে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কিছু কথায় মাশরাফী হতাশ ছিলেন। পরে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ দারুণভাবে জয় পায়। পাপনও চুপ করে যান। একই প্রতিবেদনে কোচের সঙ্গে মাশরাফীর ঝামেলার বিষয়টিও উঠে আসে।
প্রচলিত আছে, বোর্ড সভাপতি আর কোচের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে এমন তপ্ত সম্পর্কের কারণেই মাশরাফী দলে নিজের জায়গা নিয়ে এমন সন্দিহান। ক্রিকইনফোও দাবি করছে, বিসিবি থেকে মাশরাফীর প্রতি চাপ আছে!
কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো এই মাশরাফী এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য অংশ। পারফর্মার হিসেবে তার অবদান যেকোনো তরুণকে রীতিমতো ঈর্ষায় ফেলে দিবে।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে বাংলাদেশের সর্বাধিক উইকেট শিকারি মোস্তাফিজুর রহমান, ৪৪টি। তারপরেই ম্যাশের অবস্থান, ৪২টি। ৩৪ উইকেট নিয়ে তৃতীয় সাকিব। তাসকিন আহমেদ এই সময়ে নিয়েছেন ২৭টি উইকেট। ইকোনমি রেটও ম্যাশের হয়ে কথা বলে। শেষ দুই বছরে বাংলাদেশ দলে মাত্র দুইজন বোলার আছেন, যারা গড়ে প্রতি ওভারে পাঁচ কিংবা তার কম রান খরচ করেছেন। মাশরাফী তাদেরই একজন!
মাশরাফীকে নিয়ে সম্প্রতি যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে তিনি খুব একটা চিন্তিত নন। তবে নিজেকে নিয়ে না ভাবলেও দলের পরিবেশ তাকে ঠিকই ভাবাচ্ছে, ‘আমি এসব নিয়ে ভাবি না। কিন্তু আমার ভয়টা হচ্ছে ড্রেসিংরুম নিয়ে। পরিবেশ নষ্ট হয় কি না!’
বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক কোচ এবং ক্রিকেট বিশ্লেষক জালাল আহমেদ চৌধুরীও মাশরাফীর বিষয়টি অবগত। কিছুদিন আগে ফেসবুকে তিনি এ বিষয়ে স্ট্যাটাসও দেন।
মাশরাফীকে কারা বিদায় করতে চাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘মাশরাফী কী বলেছেন আমি এখনো জানি না। তবে যদি পরিবেশের কথা বলেন, তাহলে বলতে হয় যাদের নিয়ে দলের পরিবেশ গঠিত তারাই এসব করছে। আমি মনে করি তার অবসরের সময় এখনও আসেনি।’