শুরুটা করে দিয়ে যান তামিম, মাঝে সেটাকে টেনে নিলেন সাব্বির-সাকিব, শেষে খুনে মেজাজে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ; তাতে ব্যাটে চারশ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ। পরে বল ছুঁড়ে উইকেট পেলেন হাত ঘোরানো সকলেই। আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে তাতে ব্যাটে-বলে মনে রাখার মত একটি দিন কাটল মাশরাফিদের। ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ১৯৯ রানের দাপুটে জয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
বেলফাস্টের স্টোরমন্ট ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৯৪ রান তোলে টাইগাররা। জবাব দিতে নেমে ৪১.২ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার সময় ১৯৫ রান পর্যন্তই যেতে পেরেছে আইরিশরা।
আগের দুই প্রস্তুতি ম্যাচে না খেলা তামিম, সাকিব, মাশরাফি ও মোস্তাফিজ বুধবার খেললেন। যার যেটা কাজ, সেটি ভালোভাবেই করলেন। সাকিবের কাজ যেহেতু দুটো বোলিংয়েও তাই সমানভাবে জ্বললেন। টাইগারদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নিলেন ৮ ওভারে ৩২ রানে ২ উইকেট।
এদিন চার পেসার হাত ঘুরিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে। মোস্তাফিজুর তাতে চেনারূপে। ৫.২ ওভারে এক মেডেনসহ ১৭ রানে ২ উইকেট। নিয়মিত বোলারদের মধ্যে তার ইকোনোমিই সবচেয়ে কম, ৩.১৮! অনিয়মিত সৌম্য ৪ ওভারে একটি মেডেনসহ ১৩ রানে এক উইকেট নিয়েছেন ৩.২৫ ইকোনোমিতে।
শুভাশিসই যা একটু খরুচে থাকলেন। ১০ ওভারে ৬১ রানে এক উইকেট। বাকিদের মধ্যে মাশরাফি ও রুবেল ৭ ওভার করে বল ছুঁড়েছেন। দুজনেই ২টি করে উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন। রান দিয়েছেন যথাক্রমে ৩১ ও ৩৫ করে।
স্বাগতিকদের মধ্যে জ্যাক টেকর সর্বোচ্চ ৬০ রানের ইনিংস খেলেছেন। বাকিদের মধ্যে বলার মত রান কেবল জেমস শেনন ৩১, অ্যাডাম ড্যানিসন ২৪ ও শেন টেরির ২২। অবশ্য মি. অতিরিক্ত খাতে ১৮ রান বিলিয়েছেন সফরকারী বোলাররা।
এর আগে পুরোটা মনে রাখার মত এক ব্যাটিং প্রদর্শনীর গল্প। আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে তো রেকর্ড বই ঘাটাঘাটি শুরু করতে হতো। আন্তর্জাতিক হয়তো নয়, তবে নিজেদের সামর্থ্যটা বুঝতে পারার মত অনেক রসদই অর্জনের খাতায় এদিন। তামিমের দুর্দান্ত ফিফটির পর সেঞ্চুরি সাব্বিরের। সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ঝোড়ো ক্যামিও।
টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি মিলিয়ে ৭২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলা সাব্বির রহমান যেখানে অগ্রণী। তার একটিও আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি যে নেই। এদিন প্রস্তুতিতে একটি এল সামর্থ্যের জানান দিয়ে। বলে গেল সামনের কটা ম্যাচে গতিটা ধরে রাখ, আন্তর্জাতিকটাও পেতে পারো! সাব্বির ৭ চার ও ১ ছয়ে ৪৯ বলে ৫০ রান তুলেছেন এদিন। পরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ৮২ বলে। ইনিংসটি ১৬ চার ও ১ ছয়ে সাজানো। ওই স্কোরেই স্বেচ্ছা অবসর নেন।
শুরুটা অবশ্য তামিম-সৌম্যের। ওপেনিং জুটিতে ৪৪ রান দুজনের যোগে। বাংলাদেশ প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেটে ৪৯! সৌম্য সরকার ৩ চারো ২৫ বলে ১৭ রানে সাজঘরে ফেরেন। ক্রেইগ ইয়ংয়ের বলে কেনের হাতে ক্যাচ দেন টাইগার বাঁহাতি।
রানের গতি বাড়াতে তখন তামিমের সঙ্গে যোগ দেন সাব্বির। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৮২ বলে আসে ১০৩ রান। তামিম ইকবাল ১১ চারে ৪৯ বলে ৫০ পূর্ণ করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ৮৬ রানে থামতে হয়। ১৪ চার ও ২ ছয়ে ৭৪ বলের ইনিংসটি অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনের বলে ইয়ংয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে সমাপ্তি দেখেছে। সাসেক্সে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেননি তামিম। পিঠের পুরনো চোটের কারণেই সতর্কতা ছিল। এদিন ভালোই পুষিয়ে নিলেন প্রস্তুতির ঘাটতিটা!
সেখান থেকে ৩৫ ওভারে ৩ উইকেটে ২৪২ রান করা বাংলাদেশ শেষ ৯০ বলে যোগ করে ১৫২ রান। সৌম্য ছাড়া বাকিদের স্ট্রাইকরেট ১০০-এর ওপরে!
আইপিএল খেলে দেরিতে দলে যোগ দেওয়া সাকিব আল হাসান ৫ চার ও ২ ছয়ে ২৭ বলে ৪৪ রানের ইনিংস সাজিয়েছেন। শেন গেটক্যাটের স্লোয়ারটা বাতাসে ভাসিয়ে বাঁহাতি অলরাউন্ডার কভারে ক্যাচ দিয়েছেন ইয়ংকে।
মোসাদ্দেকের ব্যাটে এসেছে ২৭ বলে ৩১ রান। এরপরই মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ ঝোড়ো ক্যামিও। আইরিশদের ওপর চড়াও হয়ে দুজনে ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৪৮ বলে ৯১ রান। ৪ চার ও ২ ছয়ে ২৪ বলে ৪১ রান মুশফিকের। মাহমুদউল্লাহর ৩১ বলে ৪৯ সাজানো ৮ চার ও ১ ছয়ে। শেষদিকে মাশরাফি এক চারে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
শেন গেটক্যাটে ৭ ওভারে ৬০ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনের দখলে ২টি। আর ৬ ওভারে জোসুয়া লিট্টলে ৫৮ রান খরচ করে কোন উইকেট পাননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৯৪/৭; (সাব্বির ১০০, তামিম ৮৬, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, সাকিব ৪৪, মুশফিক ৪১, মোসাদ্দেক ৩১, সৌম্য ১৭, মাশরাফি ৮*; গেটক্যাট ৩/৬০, ম্যাকব্রিন ২/৬৯)।
আয়ারল্যান্ড এ: ৪১.২ ওভারে ১৯৫/১০; (টেকর ৬০, শ্যানন ৩১; মোস্তাফিজ ২/১৭, মাশরাফি ২/৩১, রুবেল ২/৩৫, সাকিব ২/৩২, সৌম্য ১/১৩)
ফলাফল: বাংলাদেশ ১৯৯ রানে জয়ী।