সুপ্রভাত পরিবহনের ওই বাসটির মালিক ননী গোপাল সম্পূর্ণ দায়িত্বহীন পরিচয় দিয়ে অদক্ষ কন্ডাক্টরকে বাসটি নিয়ে পালিয়ে যেতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
গত ১৯ মার্চ সকালে মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর ভাটারার প্রগতি সরণি এলাকায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে সুপ্রভাত পরিবহনের বাস চাপায় নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন সুপ্রভাত বাসের মালিক ননী গোপাল সরকার।
শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার(ডিসি) মাসুদুর রহমান।
মাসুদুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে সুপ্রভাত বাসটির চালক সিরাজুল ইসলাম দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করায় ধারণা ছিল সেই আবরারকে হত্যা করেছে। যে কারণে পুলিশ তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কন্ডাক্টর মো. ইয়াছির আরাফাত(২২) ও হেলপার মো. ইব্রাহিম হোসেন(২১)কে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। আসামীরা আদালতে দায় স্বীকার করে এবং বাসের মালিক ননী গোপাল সরকারের নির্দেশে সেদিন বাস চালিয়েছিলেন বলে জবানবন্দি দেয় কন্ডাক্টর ইয়াছিন। এরপরই গতকাল বৃহস্পতিবার মুগদা এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকা মালিক ননী গোপালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে ননী গোপাল সরকার গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়, বাসটির রুট পারমিট ছিল মূলত: মহাখালী থেকে বি-বাড়িয়া রুটে। কিন্তু সুপ্রভাত বাস কোম্পানির প্রতিনিধির সাথে যোগসাজশে সুপ্রভাত ব্যানারে সদরঘাট(ভিক্টোরিয়া পার্ক) গাজীপুর রুটে চালিয়ে আসছিল। ওই দিনও ঘাতক সুপ্রভাত বাসটি সদরঘাট থেকে গাজীপুর যাওয়ার জন্য ভোরে রওয়ানা হয়েছিল।
ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় মালিকের প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল আহত ব্যক্তির দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা। কিন্তু সেটা না করে যানবাহনটি বাঁচানোর জন্য দ্রুত পালাতে গিয়ে আরেকটি দুর্ঘটনা সংঘটিত করে। সুপ্রভাত মালিক ননী গোপাল হেলপারকে প্ররোচিত করেছিল। তিনি আবরার হত্যাকাণ্ডের কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেন না।
তদন্তে বেশ কিছু ব্যত্যয় পাওয়া গেছে জানিয়ে মাসুদুর রহমান বলেন: ওই বাসটি পারমিটবিহীন রুটে সেদিন চালানো হয়েছিল। বাসটি ৪৫ সিটের কিন্তু সেটা মডিফাই করে করা হয়েছে ৪৯ সিটের। আর দুই বছরে আগে ওই ননী গোপাল আরেকজনের কাছ থেকে বাসটি ক্রয় করলেও কাগজে-কলমে মালিকানা পরিবর্তন করেননি। আর হত্যাকাণ্ডের পর মালিক ও হেলপার আত্মগোপনে চলে যায়। আজই তিনদিনের রিমান্ড চেয়ে বিজ্ঞ আদালতের কাছে পাঠানো হবে ননী গোপালকে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আবরারের বাবার দায়ের করা মামলায় বাসটির মালিক গোপাল চন্দ্রকে আটক করা হয়। গুলশান থানায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত করছে ডিবি (উত্তর) পুলিশ।
গত ২৭ মার্চ ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেছিলেন, গত ১৯ মার্চ ভোরে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা থেকে ভোর পৌনে ছয়টার দিকে গন্তব্যে রওনা দেয় সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটি (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫) রাজধানীর শাহজাদপুরের বাঁশতলা এলাকায় মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরী কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিনথিয়া সুলতানাকে চাপা দিয়ে গুরুতর জখম করে। এরপর বাসের যাত্রীরা চালক সিরাজুলকে আটক করে ট্রাফিক পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
ইয়াছিরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আব্দুল বাতেন বলেছিলেন: এ সময় উপস্থিত জনতা বাসের ক্ষতি করতে পারে এমন আশঙ্কায় বাস মালিক গোপাল চন্দ্র কর্মকার ননীর নির্দেশে ড্রাইভিং সিটে বসেন কনডাক্টর ইয়াছিন। কোনো ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা স্বত্ত্বেও বাস নিয়ে দ্রুত পালানোর সময় নর্দ্দা এলাকা পার হতেই বিইউপি শিক্ষার্থী আবরারকে চাপা দিয়ে হত্যা করে।