ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন ভিসা নিয়ে এক নতুন প্রস্তাব রেখেছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ভিসা আবেদনকারী প্রায় সবাইকেই তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য জমা দিতে হবে। এই প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
আবেদনকারীদের ফেসবুক ও টুইটার অ্যাকাউন্টের গত পাঁচ বছরের ব্যবহারের খুঁটিনাটি সব তথ্য সরবরাহ করতে হবে ভিসা প্রক্রিয়াকারী কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, রেডিট এবং ইউটিউবও এই প্রস্তাবে অন্তর্ভূক্ত।
পররাষ্ট্র বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনা ও বাজেট বিষয়ক কার্যালয়ের কাছে ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক মাধ্যমের কর্মকাণ্ড যাচাই করার এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবের পক্ষে/বিপক্ষে মতামত দেয়ার জন্য জনগণকে দু’মাসের সময়ও দেয়া হবে।
প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি মানুষকে এই নতুন ঝক্কির মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
প্রস্তাবের পক্ষে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ বলেছে, ‘ভিসা আবেদনকারীদের জন্য কঠোর পরীক্ষা পদ্ধতি ধরে রাখা একটি সময়োপযোগী কর্মচর্চা, যেখানে উদ্ভূত নতুন নতুন ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তন আনাটা জরুরি। আমরা ইতোমধ্যেই আবেদনকারীদের কাছ থেকে যোগাযোগ সংক্রান্ত তথ্য, ভ্রমণের ইতিহাস, পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য এবং পুরনো ঠিকানাসহ সীমিত কিছু তথ্য চেয়ে থাকি। আরও বেশি তথ্য সংগ্রহের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের আমাদের যাচাইবাছাই প্রক্রিয়াকে আরও বেশি জোরদার করতে পারব তাদের পরিচয় সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে পারব।’
নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে এতদিন পর্যন্ত ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশিদের প্রবেশ প্রক্রিয়ায় কঠোর যাচাইবাছাই প্রক্রিয়া আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সেটার উদ্দেশ্য বলা হয়েছিল সন্ত্রাস মোকাবিলা। সন্ত্রাসী হামলার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিছু দেশের নাগরিকের ওপরই এই অতিরিক্ত কঠোরতা আরোপ হবে বলেও জানানো হয়েছিল।
কিন্তু নতুন প্রস্তাবটির মধ্য দিয়ে সব দেশকেই জঙ্গি তালিকাভুক্ত হিসেবে অপমান করা হচ্ছে বলে পদক্ষেপটির সমালোচনা করছেন অনেকে।
এছাড়াও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দলগুলোর মতে, এর মধ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত করা হচ্ছে।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের হিনা শামসি বিবিসি’কে বলেছেন, মানুষকে এখন দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে, অনলাইনে তাদের বলা কোনো কথা যাচাইকারী কোনো সরকারি কর্মকর্তা ভুল বুঝলেন বা ভুল অর্থ দাঁড় করালেন কিনা।
‘আমরা আরও বেশি উদ্বিগ্ন ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ নামক অস্পষ্ট ও অতিবৃহৎ বিষয়টাকে ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে সংজ্ঞায়িত করেন সেটা নিয়ে। কারণ বিষয়টি সহজাতভাবে রাজনৈতিক একটি ইস্যু এবং ইস্যুটির অপব্যবহার করেেএমন অনেক অভিবাসীর সঙ্গে বৈষম্য করা হতে পারে যাদের আসলে কোনো দোষই নেই,’ বলেন তিনি।
হিনা শামসির এই কথা আসলেই উদ্বেগজনক। কেননা বাস্তবায়নের আগেই প্রস্তাবটিতে রয়েছে বৈষম্যের ছায়া। যুক্তরাষ্ট্রে বিনা ভিসায় ভ্রমণের অনুমতি থাকা দেশগুলো, অর্থাৎ যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স এবং জার্মানির নাগরিকদের এমন কোনো পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না।
এই দেশ কয়েকটি ছাড়া বাকি দেশগুলোর নাগরিকদেরকে তাদের পাঁচ বছরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সক্রিয়তার সব তথ্য জমা দিতে হবে আবেদনপত্রের অন্যান্য কাগজের সাথে। অন্যদিকে ভারত, চীন আর মেক্সিকো এই হয়রানিতে আরও বেশি পড়বে যদি এই তিনটি দেশের নাগরিক কাজ অথবা অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যান।
অবশ্য কূটনীতিক এবং অতিরিক্ত অসুস্থ ভ্রমণকারীদের এই কঠোর যাচাই প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে বলে প্রস্তাবে জানানো হয়েছে।
কিন্তু শুধু নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত তথ্য নিয়ে যাচাই না করে আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের অধিকার লঙ্ঘন করা এবং গণহারে হয়রানি করাটা কতটা যৌক্তিক এটা নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা।