চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মামলার রায় শোনার অপেক্ষায় থাকা নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিনিধির ভাষ্য

নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশের অস্থায়ী আদালতে ২১ আগস্ট মামলার রায় শুনতে এসেছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুলফিকার আলি মাণিক।

আদালতের গেটে আজকের রায়ের তাৎপর্য ও সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। তার মতে, এই মামলার রায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।

মাণিক বলেন, ‘২১ আগস্টের পুরো ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন ছাড়াও একটি রাজনৈতিক দল, ওই সময়ের সরকার, প্রশাসন এবং তাদের অত্যন্ত স্পর্শকাতর-প্রভাবশালী সংস্থার কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ আছে এই মামলায়। ওই সময়ের ক্ষমতাসীন দল বিএনপিই কিন্তু এখন কাঠগড়ায়। কারণ তাদেরই নেতা, তাদেরই ওই সময়ের কয়েকজন মন্ত্রী,প্রশাসনের বড় বড় কর্মকর্তারা এই মামলার আসামি।’

দলটিকে রাজনৈতিকভাবেও কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে এই রায়, মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শুধু অপরাধের জন্য নয়, রাজনীতির জন্যও তারা রাজনীতির কাঠগড়ায় দাঁড়াবে। কারণ এই ধরনের সন্ত্রাসী রাজনীতির অভিযোগ কেন একটি দলের নেতাদের বিরুদ্ধে উঠবে?’

এই রায়ের রাজনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই রায়ে একটি রাজনৈতিক দল অখুশি হবে এটা স্বাভাবিক। এই রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিভাজনও থাকবে। কিন্তু আইনি অঙ্গনের চিন্তাটা হলো যে অপরাধী যে-ই হোক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাজা মেনে নিতে হবে। এখন রাজনীতি করেন বলেই সব অভিযোগ মিথ্যা এটা রাজনৈতিক অঙ্গনে বলা গেলেও আদালত আদালতের মতো বিচার করবে সেটাই হলো কথা।’

নির্বাচনের আগে এই রায়ের প্রসঙ্গে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অবশ্যই এই রায় একটু টেনশন, একটু উত্তেজনা এবং আরও বেশি বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হওয়ার জায়গাতো এখানে তৈরি হবেই।’

তবে রাজনৈতিক এই বিতর্ক নতুন কিছু নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিতর্কের জন্য উন্মুক্ত জায়গা তো করে দেয়া আছে। সেখানে তর্ক হতে পারে। কিন্তু যেকোনো অপরাধের বিচারটাকে গ্রহণ করে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। বড় প্রশ্ন হলো, যারা আজকে আসামী তারা যদি সত্যিই নির্দোষ হন তাহলে কেন তারা সেসময়ই প্রকৃত দোষীদের বিচার করলেন না, কোন স্বার্থে তারা তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে বিচার বিলম্বিত করলেন?’

এতকিছুর পর আজকের এই রায়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পর আরেকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড চেষ্টার বিচারের প্রাথমিক পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটছে এটাই আপাতত আশার কথা।একুশে আগস্টের রায়-জুলফিকার আলি মাণিক

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন ওই সময়ের মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।

তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা মারাত্মক আহত হলেও এই গ্রেনেড হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান। অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সেই ঘটনায় আহত ব্যক্তিরাসহ নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা ছিলেন বিচারের অপেক্ষায়। আজ ১৪ বছরের সেই অপেক্ষার অবসান হলো।