প্রথমবারের মতো জটিল ক্লোনিং প্রযুক্তির আধুনিকায়ন করে বানর ক্লোন করার দাবি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এই প্রযুক্তিতেই ১৯৯৬ সালে ভেড়া ডলিকে ক্লোন করা হয়েছিল।
এই সফলতার পর একই প্রক্রিয়ায় মানুষের ভ্রুণও ধীরে ধীরে ক্লোন করা সম্ভব বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা, যার সাহায্যে চিকিৎসা শাস্ত্রে আরও অনেক বেশি উন্নতি করা সম্ভব।
তবে এখনই মানব ক্লোনিং নিয়ে কাজ করতে চান না তারা। এছাড়া মানুষকে নিয়ে এই গবেষণা কতটা ন্যায়সঙ্গত হবে সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
বুধবার এই গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল সেল-এ।
সাংহাইয়ে বিজ্ঞানীদের একটি দল জিনগতভাবে হুবহু একরকম মাকাক বানরের জন্ম দেন জটিল ক্লোনিং প্রযুক্তির আধুনিকায়ন করে ব্যবহার করে। বানর দু’টো দেখতে একই রকম। তাদের নাম রাখা হয়েছে হুয়া হুয়া এবং ঝং ঝং। নাম দু’টি এসেছে চীনা বিশেষণ ঝংহুয়া থেকে, যার অর্থ ‘চীন জাতি’ বা ‘চীনের জনগণ’।
অবশ্য পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম প্রাইমেট বর্গের (বানর জাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী, মানুষও এর অন্তর্ভুক্ত) কোনো প্রাণীর সফল ক্লোন নয়। ১৯৯৯ সালে টেট্রা নামের এক রিসাস বানরের সফল ক্লোন করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে সেই প্রক্রিয়াটি ছিল তুলনামূলক সরল এবং সীমাবদ্ধ। ওই প্রযুক্তিতে সীমিত সংখ্যক ক্লোন করা সম্ভব। টেট্রার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা একটি নিষিক্ত ভ্রুণকে সফলভাবে দু’ভাগে ভাগ করে ক্লোন তৈরি করেন, যা আইডেন্টিক্যাল (প্রায় হুবহু দেখতে, সর্বাধিক জিনগত সাদৃশ্যযুক্ত) জমজ জন্মের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ারই অনুরূপ।
তবে হুয়া হুয়া আর ঝং ঝং-এর ক্ষেত্রে আরও অনেক আধুনিক ও জটিল প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। গত দু’বছর ধরে টানা এই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চলছিল বলে জানিয়েছে সিএনএন। এই একই প্রযুক্তি ব্যবহারে ডলিকে ক্লোন করা সম্ভব হয়েছিল, যাকে ধরা হয় এ পর্যন্ত সবচেয়ে সফল স্তন্যপায়ী ক্লোনিং। সেই প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন করে আরও উন্নত করার ফল হিসেবে জন্ম হলো এই দুই মাকাক বানরের।
সোমাটিক সেল ট্রান্সফার বা এসসিএনটি নামের এই প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানীরা একটি অনিষিক্ত ডিম্বাণুকে নতুনভাবে গঠন করেন। গবেষকরা প্রথমে ডিম্বাণুর সবচেয়ে বেশি জিনগত তথ্যবহুল অংশ নিউক্লিয়াস সরিয়ে আরেকটি কোষের নিউক্লিয়াসের জায়গায় বসিয়ে দেয়া হয়। এরপর বিশেষ উদ্দীপনা দিয়ে সেটিকে ভ্রুণে পরিণত করা হয়। এরপর সেই ভ্রুণটিকে মায়ের গর্ভে বসানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি সংখ্যক একই জিনেটিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রাণীকে জন্ম দেয়া সম্ভব।
এ পর্যন্ত এসসিএনটি প্রযুক্তিতে ব্যাঙ, ইঁদুর, খরগোশ, শুকর, গরু ও কুকুরসহ ২০টি ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীর ক্লোন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকবার মানুষ ছাড়া প্রাইমেট বর্গের প্রাণীর ক্লোন করার চেষ্টার পরও ব্যর্থ হন বিজ্ঞানীরা।
সাংহাইয়ের গবেষণা দলটির প্রধান মামিং পু জানান, তিন বছর ধরে বানরের ক্লোনিং নিয়ে গবেষণা করছিল তার দল। অবশেষে ৭৯টি স্থিতিশীল সুস্থ ক্লোন করা ভ্রুণ তারা তৈরি করতে সক্ষম হন। সেগুলোকে ২১টি মেয়ে বানরের গর্ভে স্থাপন করার পর ৬টি বানর গর্ভধারণ করে। সেখান থেকে অবশেষে ২০১৭ সালের শেষের দিকে জন্ম হয় এই দুই বানর হুয়া হুয়া ও ঝং ঝংয়ের।