ঝড় নেই, বাতাস নেই-আকস্মিক প্রকাণ্ড গাছ উপড়ে পড়ে খ্যাতিম্যান শিল্পী ও জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত চলচ্চিত্র নির্মাতা খালিদ
মাহমুদ মিঠু নিহত হওয়ার পর ঢাকা শহরের অনেক পুরনো গাছকেই এখন মূর্তিমান আতঙ্ক মনে করছেন মানুষ। গাছের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও রুগ্ন গাছ সঠিকভাবে সংরক্ষণ
করতে না পারলে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তিও অসম্ভব নয় বলে প্রকৃতি ও পরিবেশ কর্মীরা মনে করেন।
মিঠুর মৃত্যুর পরও সবকিছু আগের মতোই চলছে। অর্ধমৃত বহু গাছ দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা শহরে। নিজেদের অনিরাপদ মনে না করে তার নীচ দিয়ে নিশ্চিন্তেই হাঁটছেন মানুষ। চলছে রিক্সাসহ যানবাহন। এমন পরিবেশেই আকস্মিক উপড়ে পড়া গাছের চাপায় চারদিন আগে প্রাণ হারালেন খালিদ মাহমুদ মিঠু।
তারপর আবারও সবকিছু আগের মতো। কিন্তু মিঠু যেন জীবনের বিনিময়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেলেন কিছু, বুঝিয়ে গেলেন সতর্ক না হলে কতোটা অনিরাপদ এ শহর।
পথচারিরা বলছেন, জরুরিভাবেই একটা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সামনে বৈশাখ মাস আসছে, ঝড়ে গাছ উপড়ে যেতেই পারে। তারা আরো মনে করেন, সঠিক তদারকি থাকলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের হিসাবে জনবহুল ঢাকা শহরে রুগ্ন গাছ আছে ৫ শতাংশ। এগুলো সারিয়ে তোলা অথবা সরিয়ে ফেলা দরকার।
পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যে গাছগুলো দুর্বল-রুগ্ন সেই গাছগুলোকে সারিয়ে ফেলা আর যে গাছগুলো সারানো না যায় সেগুলো সরিয়ে ফেলাটা আমাদের একটা কর্তব্য।
আর গাছ রুগ্ন হওয়ার কারণ হিসেবে প্রকৃতিপ্রাণ যশোধন প্রামাণিক উদঘাটন করেছেন নগর উন্নয়নের ত্রুটিগুলোকে।
প্রকৃতি কর্মী যশোধন প্রামাণিক বলেন, ঢাকাতে লাগানো গাছের মূল শিকড় থাকে না। সাইড শিকড়ের ওপর গাছগুলো বেঁচে থাকে। সেই সাইড শিকড়গুলো বার বার ঢালাই করে আটকানোর ফলে সাইড শিকড়গুলোও মরে গেছে। যে কারণে এ ধরণের দুর্ঘটনা শুরু হয়েছে।
এক্ষেত্রে উঠে আসছে বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কথা।
পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখানে সমন্বয়ের প্রয়োজন, যা নেই। যেমন বন বিভাগ, তারা গাছটা লাগাবে, গাছটার পরিচর্যা করবে এবং গাছগুলো আবার কেটে ফেলবে। কিন্তু বন বিভাগ সেটা করে না। আবার সড়ক ও জনপথ বিভাগ তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। তাদের সড়কের পাশে অনেকগুলো গাছ আছে। পরিচর্যার কাজগুলো নিয়মিতভাবে করা হয় না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বলছেন, গাছগুলোর দায়-দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাদেরও।
দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, এখানে সমন্বয়ের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে এবং এটা সুনির্দিষ্ট করে দায়িত্ব কাউকে দেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। যতোক্ষণ না দেওয়া হচ্ছে ততোক্ষণ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে জনগণের প্রয়োজনে আমরা এ কাজগুলো করে দিব।
নগরবাসী পথ চেয়ে আছেন কার্যকর উদ্যোগের দিকে। জনজীবন আর পরিবেশ সুরক্ষায় গাছ। কিন্তু এ গাছ যখন হন্তারক হয়ে উঠে তখন তার দায়-দায়িত্ব গাছের নয়, মানুষের।
এ শহরে এ রকম অসংখ্য গাছ আছে, যেগুলো শেকড়বিহীন দুর্বল কাণ্ডের। এগুলো যেন মৃত্যুর কারণ না হয় সে ব্যাপারে উদ্যোগের অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়েছেন রাজধানীর মানুষ।