বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে ২৮ বছর ধরে কাজ করার পর আমি সম্প্রতি ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) নতুন পরিচালক হিসেবে ঢাকায় এসেছি। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই এই ঢাকা শহরের প্রাণোচ্ছলতা, বাংলাদেশিদের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব আর তাদের হৃদয়ের উষ্ণতা টের পেয়েছি আমি।
বাংলাদেশে আসার ঠিক আগে আফ্রিকার অ্যাঙ্গোলায় ছিলাম। সেখানে আমি দেশটির সরকার এবং নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতাম। গণতন্ত্রকে সংহত করা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্য বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য পরিসেবা ও সুপেয় পানি সরবরাহের আওতা বাড়ানো এবং দুর্যোগের প্রভাব প্রশমনে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে অ্যাঙ্গোলায় কাজ করেছি আমি।
বাংলাদেশ সরকার এবং এ দেশের মানুষের সঙ্গে ইউএসএআইডির রয়েছে দীর্ঘ ও কার্যকর সম্পর্ক। এদেশকে অদূর ভবিষ্যতে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার প্রশংসনীয় লক্ষ্যটি বাস্তবায়নে এ সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশায় আমি আনন্দিত । এই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যাত্রা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। তবে সঠিক পথে যাত্রা অব্যাহত রাখা নিশ্চিত করতে আরও অনেক কিছু করার আছে। এসব লক্ষ্য অর্জনে প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিকে জোরদার করতে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। দূর করতে হবে প্রতিবন্ধকতাগুলো। আর বাংলাদেশের সৃজনশীল মানুষগুলোর পেছনে সমর্থন দেওয়াও অব্যাহত রাখতে হবে।
আমি একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই, আর সেটি হলো মানব পাচার। ৩০ জুলাই বিশ্ব মানবপাচার বিরোধী দিবস। এই সমস্যাটির বিশাল মাত্রা সবার সামনে তুলে ধরতে এ দিনটি একটি দারুণ উপলক্ষ। বাংলাদেশের ভুক্তভোগী মানুষগুলোর জীবন থেকে মানব পাচারের অভিশাপ মুছে দিতে যারা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাদের কাজের স্বীকৃতির দিন এটি। সমস্যার সমাধানে এখনও যেসব চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে তার মাত্রা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়ার উপলক্ষও বটে। ধারণা করা হয়, মানব পাচারের শিকার হয়ে ১৫ লাখ বাংলাদেশি এখন আধুনিককালের দাসত্বের শিকার। মানবপাচার এমন একটি সমস্যা যেটি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয় দেশের মানুষকেই স্পর্শ করে। আর তাই পাচারের সম্ভাব্য শিকার মানুষদের দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকেই অঙ্গীকারবব্ধ হতে হবে।
মানব পাচারের মতো একটি অপরাধ ঠেকাতে এবং এর শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা দিতে এ দেশের সাধারণ মানুষ, সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরের এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছে ইউএসএআইডি। সবচেয়ে অসহায় মানুষদের দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া এই দুর্বৃত্তদের বিচারের জন্যও আমাদের প্রচেষ্টা আছে। আর ঠিক এটাই এখন প্রয়োজন। অর্থাৎ, সবাই একজোট হয়ে কাজে নামা।
আপনাদের দেশে আমাকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। একটি উন্নততর ভবিষ্যত নির্মাণে বাংলাদেশের মানুষের প্রচেষ্টার সঙ্গে থাকার আন্তরিক ইচ্ছা রাখছি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)