‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ রোহিঙ্গাদের বিশাল বোঝা বাংলাদেশের ঘাড়ে। বড় ধরনের বোঝা বহন শুরুর সময়টা দুই বছরের বেশি। এর আগে থেকেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আছে। অনেকেই এরই মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে, অনেকেই আছে সে অপেক্ষায়। মিশে যাওয়া রোহিঙ্গাদের এই সংখ্যা কত তা কেউ জানে না। তবে আগের এবং দুই বছর আগের রোহিঙ্গা ঢলে বাংলাদেশে আসা মানুষের সংখ্যা ১১ লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এত এত মানুষ কতদিন থাকবে বাংলাদেশে? এটা কেউ এখনও জানেনা। মিয়ানমার তাদের সবাইকে ফেরত নেবে কিনা সেটাও সন্দেহের বাইরে নয়। এর বাইরে আরও এক আশঙ্কা রয়েছে- এই রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ তাদের দেশে ফেরত যেতেও আগ্রহী নয়। এমন অবস্থায় জোর করে তাদেরকে মিয়ানমারে পাঠানো কষ্টকরই কেবল নয় এটা প্রায় অসম্ভবই।
২০১৭ সালের আগস্টে দেশে যে রোহিঙ্গা ঢল নেমেছিল মানবতাবাদী বাংলাদেশ তাদের জন্যে সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। আশ্রয় দিয়েছিল, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান চিকিৎসাসহ নিরাপত্তা সেবা দিয়েছিল; এখনও দিয়ে যাচ্ছে। এই কার্যক্রমে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা সরকারের সহযোগী হয়েছিল। কিন্তু মূল কাজ করতে হয়েছিল সরকারকেই। এই কার্যক্রম এখনও চলমান। হাজার-হাজার একর বনাঞ্চল-পাহাড় কেটে তাদের জন্যে বাসস্থানে জায়গা করে দিয়েছিল সরকার।
তাদের পুনর্বাসনের জন্যে ভাসানচরে বাসস্থানও তৈরি করে রেখেছে সরকার। এগুলোর সবটাই মানবতার ডাকে। সেই মানবতার ডাক বাংলাদেশ গ্রহণ করেছিল মিয়ানমার সরকারের অত্যাচারে মৃত্যুমুখে পতিত রোহিঙ্গাদের প্রাণে বাঁচানোর তাগিদে। সে মানুষগুলো বেঁচে গেছে, বাংলাদেশের দয়ায়।
রোহিঙ্গাদের প্রাণের নিরাপত্তা দেওয়ার পর বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবে মিয়ানমারসহ বৈশ্বিক নানা সংস্থায় তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করে গেছে, এখনও করে যাচ্ছে। এই প্রচেষ্টার ফল হিসেবে দুই-দুইবার তাদের ছোট্ট একটা সংখ্যার প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ হলেও ওই রোহিঙ্গাদের আপত্তি এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কার্যক্রম চালানো দেশি-বিদেশি কিছু এনজিওর কারণে সে চেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু সর্বশেষ এবছরের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গারা তাদের নিজের দেশে ফেরত না যাওয়ার জন্যে মহাসমাবেশও করেছে। ওই সমাবেশে আপত্তিকর ভাষায় তারা প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করেছে। তাদের এই বিরোধিতা যেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই হুমকির শামিল।
যে দেশ ভিনদেশি নাগরিক এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলো সেই দেশে দাঁড়িয়ে সেই দেশের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দুঃসাহস দেখানো রোহিঙ্গারা এই দুই বছরে যে যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করেছে এটা তার একটা প্রমাণ। কেবল এই মহাসমাবেশই নয়, এই রোহিঙ্গারা এই সময়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে গেছে। মাদকপাচার, মাদকব্যবসা থেকে খুনখারাবি থেকে শুরু করে কোন অপরাধই বাদ রাখেনি তারা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী তাদের অত্যাচার এবং ভয়ে স্থানীয়রা এখন ওই জায়গায় তটস্থ। দেশের নাগরিকেরা ভিনদেশিদের ভয়ে বিদেশি নাগরিকের অবস্থায় পড়ে গেছে। এই অবস্থা উদ্বেগজনক।
গত দুই বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কতখানি এনিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর প্রকাশ মূলত ২৫ আগস্টের মহাসমাবেশের পর থেকেই। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে, প্রত্যাবাসনে রাজি না হয়ে ওই প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া এর প্রমাণ। এর বাইরে প্রত্যাবাসনে বিরোধিতা করা রোহিঙ্গা নেতা মুহিবউল্লাহর গতিবিধিও সুখকর নয়। কেবল ওই সমাবেশে নেতৃত্ব দেওয়াই নয়, মুহিবউল্লাহ সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন। তার সাক্ষাতের বিষয়টি আগে থেকে সরকার জানত না।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আমেরিকায় যাওয়া এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরে আসার সবগুলো ধাপই সম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট-ইমিগ্রেসন সব ব্যবহার করে। কিন্তু এরপরেও এনিয়ে সরকারের কাছে কোন তথ্য ছিল না, গোয়েন্দাদের কাছেও কোন তথ্য ছিল না, এমনকি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থাগুলোর কাছেও কোন তথ্য ছিল না। এটা একদিকে যেমন হতাশাজনক সরকারি নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার জন্যে, অন্যদিকে আশঙ্কার।
মুহিবউল্লাহর ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি মার্কিন দূতাবাস ব্যবস্থা করেছিল। তাদের তার জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু এই বিশেষ ব্যবস্থা কীভাবে সরকারের অগোচরে হয়ে থাকে? মার্কিন দূতাবাস মুহিবউল্লাহর জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা বা অনুরোধ জানাতে পারে, কিন্তু এর জন্যে নিশ্চিতভাবেই সরকারের অনুমতি প্রয়োজন- ওটা কারা দিলো? আর দিলোই যারা তারা কি এনিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিবেদন দেয়নি? এখানে কার গাফিলতি, কার সহযোগিতা- এসবসহ অনুষঙ্গিক সবকিছুই খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ এটা সাধারণ বিষয় থাকেনি, এবং এর আগেও এটা সাধারণ কোন বিষয় ছিল না।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিরোধিতাকারী কেবল এনজিওরাই নয়, এরসঙ্গে যুক্ত আছে দেশের বেশ কিছু ব্যক্তিও। সরকারি এক প্রতিবেদনে প্রত্যাবাসন বিরোধি মদদদাতাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ সম্পর্কিত কিছু উদ্যোগও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪১ এনজিওকে নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়েছেন। প্রতিবেদনের পর দুইটি এনজিওর কার্যক্রম কেবল রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই নয় সারাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শরণার্থী বিষয়ক কমিশনারসহ একাধিক কর্মকর্তাকে বদলি ও প্রত্যাহার করেছে সরকার। এই পদক্ষেপগুলো কতখানি কাজে দেবে তা সময়ে প্রমাণ হবে। তবে এখান থেকে অন্তত আশাবাদী হওয়া যায় যে সরকার কেবল মানবতাই নয় এখন নিজেদের নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে।
সময়ে সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা কেবল ক্যাম্পে অবস্থান করছে না, তাদের একটা অংশ সারাদেশে ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের হাতে-হাতে মোবাইল, ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। এই মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে সংঘটিত হয়ে তারা তাদের সর্বশেষ মহাসমাবেশে বড়ধরনের শো-ডাউন করেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্তত দশটি ইন্টারনেট টিভি রয়েছে যেগুলোর দ্বারা তারা গুজব ও উসকানি ছড়িয়ে প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উদ্ধুব্ধ করছে। ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের কিছু লোক ওইসব ইন্টারনেট টেলিভিশনের জন্যে কনটেন্ট সরবরাহ করছে, এবং ওই চ্যানেলগুলো বাংলাদেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও তাদের আছে একাধিক ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ যেখান থেকে প্রত্যাবাসন বিরোধী প্রচারণা চলছে। এই প্রবণতা নিঃসন্দেহে হুমকির, এবং এখনই এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
সম্প্রতি অন্য এক সংবাদ প্রচার হয়েছে। এক রোহিঙ্গা তরুণীর ছাত্রত্ব বাতিল করেছে কক্সবাজারের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অভিযোগ ভর্তির সময়ে তথ্য গোপন, ভুল তথ্য প্রদান ও অসাধু পন্থা অবলম্বন। এই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসার পর প্রগতিশীল-প্রতিক্রিয়াশীলদের অনেকেই সেই তরুণীর পক্ষে মতামত দিচ্ছেন। একটা অংশকে অভিযোগ করতে দেখছি রোহিঙ্গাদের নিয়ে এই ইস্যুসহ আরও অনেক ইস্যুতে এখন নাকি বর্ণবাদকে উসকে দেওয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গা তরুণীর পক্ষে দাঁড়ানো প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রায় একই ধরনের বয়ান শোনা যাচ্ছে। অনেকেই বলতে চাইছেন শিক্ষা সকলের নাগরিক অধিকারসহ অনেক কিছু। এই প্রসঙ্গে অনেকের যুক্তিতে ধরা দিচ্ছে ফিলিস্তিন, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ নানা দেশের মানুষের বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের বিষয়টি। কিন্তু তাদের ওইসব যুক্তিতে আসছে না ওই দেশগুলোসহ নানা দেশের মানুষদের কেউই নিজেদের পরিচয় গোপন করে, মিথ্যা জন্মসনদসহ নানা কাগজ উপস্থাপন করছে কিনা সে বিষয়টি। হ্যাঁ, এক দেশের মানুষ অন্যদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে, কিন্তু এই শিক্ষাগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কেউ নিজেদের পরিচয় গোপন করে না, কেউ মিথ্যা কাগজপত্র জমা দেয় না। এটা অপরাধ। এবং এই অপরাধ প্রমাণ হলে তাদের কেবল ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিস্কারই হয়না, আইনের মুখোমুখিও হয়।
রহিমা আক্তার খুশি নামের বহিস্কৃত ওই তরুণীর পক্ষে থাকা লোকজনের চিন্তার ব্যাপ্তি এবং ক্ষেত্রবিশেষে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার এই প্রবণতার উৎস খুঁজছি। শক্ত কোন কারণ খুঁজে না পেলেও যা পাচ্ছি তার মধ্যে আছে- ‘মানবতা’, ‘অধিকার’ ও ‘জাতীয়তাবাদী ধারার প্রকাশের বিরোধিতা’। এই মানবতার কথা যা বলছেন তারা তার প্রকাশ আমরা আগেই দেখিয়েছিলাম, এজন্যে ১১ লক্ষের অধিক লোক আমাদের দেশে বসে আছে। অধিকারের প্রসঙ্গ তখনই আসে যখন কেউ কোন দেশের নাগরিক হয়, আর বর্তমানে দেশে রোহিঙ্গাবিরোধী একটা জাতীয়তাবাদী ধারা চলমান বলে তারা এর বিরোধিতা করছেন।
এই জাতীয়তাবাদী ধারাটা কি অন্যায় কিছু? সবার আগে দেশের স্বার্থ এটা যখন একজন সুনাগরিকের ধর্ম যখন তখন কাউকে আঘাত না করে দেশের স্বার্থ দেখাটাই উচিত নয়কি? এমন না যে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে বাংলাদেশিরা হামলা করছে, তাদেরকে না খাইয়ে মারছে, তাদেরকে মানবিক সাহায্য করছে না- তাহলে কেন এমন অভিযোগ? এটা মূলত তাদের অতিপ্রাকৃত চিন্তা ও অতি-বিপ্লবের প্রকাশ।
রোহিঙ্গা যে তরুণীটি দেশের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিস্কৃত হলো সেটা তার জালিয়াতির প্রায়শ্চিত্ত। এই অপরাধের শাস্তি তাকে দেওয়া না হলে আরও অনেক অপরাধের পথ যে প্রশস্ত হবে সেটা আমরা ক’জন ভাবছি। এই আমরা যারা দেশের নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন অন্যায়, দুর্নীতি ও জালিয়াতির প্রতিবাদ করছি সেই তাদের মুখে অধিকার ও মানবতার নামে রোহিঙ্গা তরুণীর জালিয়াতিকে প্রশ্রয় দেওয়া আরও অনেক অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল, একই সঙ্গে স্ববিরোধিতাও।
এখন খুঁজে দেখা দরকার সে কি বাংলাদেশি জন্মসনদ নিয়েছিল, বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র কি তার কাছে আছে? বাংলাদেশের পাসপোর্ট কি আছে তার? এগুলো থাকলে অবৈধভাবে সেটা নেওয়ার আইনি প্রতিবিধানের পাশাপাশি এই কাজে যারা তাকে সহযোগিতা করেছে তাদেরও আইনের মুখোমুখি করা উচিত, এবং এটা দেশের স্বার্থেই।
রোহিঙ্গারা কি বাংলাদেশের নাগরিক? উত্তর হচ্ছে- না! সেক্ষেত্রে তার জন্যে বাংলাদেশের প্রচলিত নাগরিক অধিকার প্রযোজ্য নয়। ওই তরুণী যদি ‘শরণার্থী’ স্ট্যাটাসধারী হয়ে থাকে তবে কেবল প্রচলিত শরণার্থী অধিকারটুকু পাওয়ার দাবি রাখে সে, এর বেশি নয়। এর বেশি দিতে চাওয়া অনুচিত; এর বেশি দিতে উসকানি দেওয়া এবং এর প্রচারণা চালানো বাড়াবাড়ি। আমাদের মনে রাখা দরকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ‘শরণার্থী’ স্ট্যাটাস দেয়নি; রোহিঙ্গাদের সরকার বলছে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’। সুতরাং তাদের অধিকারের প্রসঙ্গটিও বিধিবদ্ধ হওয়াই প্রাসঙ্গিক।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হওয়ার পর মানবতা দেখাতে গিয়ে এখন ১১ লক্ষ রোহিঙ্গার বোঝা আমাদের ঘাড়ে। এখন চাইলেও তাদেরকে একবারে ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়, ধাপে ধাপে ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে তাদের বিরোধিতায় আমরা তাদের প্রত্যাবাসনও করতে পারছিনা। এটা ঢালাও মানবতা দেখানোর প্রায়শ্চিত্ত। ওই সময়ে ভারতসহ মিয়ানমারের সীমান্ত পার্শ্ববর্তী অনেক দেশ কথিত মানবতার ডাকের চাইতে নিজেদের দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছিল বলে আজ তারা নিরাপদ।
লক্ষ-লক্ষ রোহিঙ্গার অনাকাঙ্ক্ষিত বোঝা তাদের বইতে হচ্ছে না। কিন্তু আমরা কথিত মানবতার সেই ডাককে অগ্রাহ্য করতে পারিনি বলে এখন লক্ষ লোকের বোঝা বয়ে চলেছি। ওই সময়ে বিশ্বনেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে কিছু হাততালি আর ধন্যবাদ ছাড়া প্রাপ্তি কী আর? এখন সেই বিশ্বনেতৃবৃন্দকে আমাদের বুঝাতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের দেশ মিয়ানমার, ওই দেশে তাদের ফেরানো দরকার। দেশহীন হয়ে গিয়ে অন্যদেশে আশ্রিত লোকদের নিজেদের দেশে ফেরাতে তারা কতখানি আগ্রহী এনিয়ে প্রশ্নও বড় হয়ে ওঠছে।
মানবতা ততক্ষণ পর্যন্ত মানবতার পর্যায়ে থাকে যতক্ষণ মানবতা প্রদর্শনকারী হুমকির মুখে না পড়ে। মানবতা প্রদর্শনকারী হুমকির মুখে পড়লে তখন সেই মানবতার স্ট্যাটাস বদলে যায়। তখন এটা ‘খাল কেটে কুমির আনা’র পর্যায়ে রূপান্তরিত হয়ে যায়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের শুরুটা হয়েছিল ‘মানবতা’ দিয়ে, এখন সেটা স্ট্যাটাস বদলের শঙ্কার মুখে। স্ট্যাটাস বদল করতে দেওয়া যাবে না, এবং এটা আমাদের নিজেদের স্বার্থে; দেশের স্বার্থে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)