চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

মাধ্যমিকে মার্শাল আর্ট শিক্ষা বাধ্যতামূলক চাই

প্রাইমারিতে বিশেষ নিয়োগ, বিশেষ বিষয় আর বিশেষ বরাদ্দের মতোই মাধ্যমিকেও আমি নতুন বিষয় যুক্ত করার স্বপ্ন দেখি। এটা ঠিক স্বপ্ন নয়, সময়ের চাহিদা বলাটাই উচিত হবে। বর্তমানে যে হারে নারী নির্যাতন, নিপীড়ন কিংবা হত্যার ঘটনা ঘটছে তাতে আত্মরক্ষার কৌশল শেখাটা প্রত্যেকের জন্য অবশ্যই করণীয় একটি কাজ।

প্রতিনিয়ত আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। চাই বা না চাই বল প্রয়োগ হচ্ছে আমাদের কোমলমতি শিশুদের সাথে। বিদ্যালয়ে, পরিবারে, বিভিন্ন পরিসরেও তারা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এর থেকে মুক্তির উপায় কী? প্রত্যেক সন্তানের সাথে যেমন নিরাপত্তা প্রহরী দেয়া সম্ভব নয়, তেমনি তাদের চিন্তার জগতেও তৈরি হওয়ার আড়ষ্টতাকে দূর করা যায় না।

একদিকে শারীরিক অদক্ষতা, অনদিকে মানসিক জড়তা আমাদের সন্তানদের দুর্বল করে রাখে। এই দুর্বলতা দূর করতে আমার কয়েকটি প্রস্তাবনা:

১) সপ্তম শ্রেণিতে নতুন বিষয় ‘আত্মরক্ষা ও আইন’ যুক্ত  করা

২)  শিক্ষার্থীদের মার্শাল আর্ট শেখানো

৩) আইন বিষয়ে জানানো

৪) কাউন্সিলিং

৫) স্কুল সাংবাদিকতা শেখানো

৬) শৃংখলার সাথে কাজ করতে শেখানো

আসুন এবারে একটিু বিস্তারে আলোচনা করি। ছোট ছোট বাক্যে অনেক স্বপ্নবোনা। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় অনেক শক্তিশালী এবং টেকসই হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। একই সাথে সামাজিক মূল্যবোধ এবং একতা, একান্নবর্তীতা এবং আদর্শিক চেতনা তার স্বরূপে ফিরে আসবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।

১) সপ্তম শ্রেণিতে নতুন বিষয় ‘আত্মরক্ষা ও আইন’ যুক্ত করা
সপ্তম শ্রেণি মাধ্যমিকের একটি স্তম্ভ। বয়স খুব কমও না, বেশিও না। সমাজে নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতি, অবহেলা-গঞ্জনার স্বাক্ষী থাকেন এই বয়সী ছেলে-মেয়েরা। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় কোন প্রতিবাদ করতে পারেন না। কখনো কখনো নিজেরাও সহিংসতার শিকার হন, কিন্তু আত্মরক্ষার কৌশল জানা না থাকায় অকাতরে প্রাণ হারান বা হারানোর ‍উপক্রম হন। তাই আত্মরক্ষার কৌশল শেখার জন্য বড়ই উপযুক্ত এই শ্রেণি বলে আমি মনে করি।

সপ্তম শ্রেণিতে ‘আত্মরক্ষা ও আইন’ একটি আবশ্যিক সাবজেক্ট হিসেবে পাঠ্যসুচিতে অন্তর্ভুক্তি করা হোক। ‘আত্মরক্ষা ও আইন’ বইয়ের একটি বড় অধ্যায় থাকবে মার্শাল আর্ট এর শিক্ষা বিষয়ক। সহায়ক অধ্যায় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে, প্রাথমিক আইন, প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্কুল সাংবাদিকতা এবং নিয়মানুবর্তিতা।

সপ্তাহে ছয়দিনই ৩০ মিনিট করে আত্মরক্ষার কৌশল শিখবে। আর ক্লাসের বাকী ১৫ মিনিট বার হিসেবে কোন কোন দিন শিখবে আইন, কাউন্সিলিং, সাংবাদিকতা এবং ডিসিপ্লিন সম্পর্কে।  ৪৫ মিনিটের ক্লাসে একজন পূর্ণ মানুষ হওয়ার মৌলিক বিষয়গুলো রপ্ত করবেন। পরীক্ষার পূর্ণমান হবে ১০০।

২) শিক্ষার্থীদের মার্শাল আর্ট শেখানো
আত্মরক্ষা কৌশল শেখাতে সপ্তম শ্রেণির নতুন বইয়ের সাথে সাথে মার্শাল আর্ট এর উপযোগী পোশাকও সরকারিভাবে বিতরণ করার প্রস্তাবনা আমার। এক বছরে আত্মরক্ষার মৌলিক নিয়মগুলো শিক্ষার্থীদের পক্ষে রপ্ত করা সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস। দেশের সব মাধ্যমিক স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আত্মরক্ষার কৌশল শিখলে সে নিজের, বন্ধু-বান্ধবের এবং তার পরিবারের প্রাথমিক রক্ষক হিসেবে দাঁড়াতে পারবে। আর প্রতিটি পরিবারে এমন একজন শিক্ষার্থী আছে জানা থাকবে সকলের। সুতরাং অকারণ সহিংসতার শিকার হতে রক্ষা পাবে এইসব কোমলমতি শিশুরা। বিশেষ করে মেয়ে শিশু।

৩) আইন বিষয়ে জানানো
আত্মরক্ষার কৌশল শেখার পাশাপশি যদি যৌন নির্যাতন, নিপীড়নের আইন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানা থাকে তাহলে সচেতনতা বাড়বে। এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। শ্রদ্ধাশীল হবে আইনের প্রতিও। এটি আমাদের সামাজিক বন্ধনকে আরো পোক্ত আরো দৃঢ় করবে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। কোন অপরাধের জন্য নিটতম সহযোগী কারা হবেন-এই বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।

৪) কাউন্সিলিং
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার কোন সহপাঠী, প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়- আত্মীয়ের মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে এবং তার সাথে আমাদের কেমন ব্যবহার হওয়া উচিত- এই বিষয়ে সম্যক ধারণা দেবে কাউন্সিলিং অংশটি। সপ্তাহের একদিনের আলোচনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কাউন্সিলিংটা জরুরি অংশ হিসেবেই অন্তভুক্ত করা উচিত বলে আমি মনে করি।

৫) স্কুল সাংবাদিকতা শেখানো
একটি অ্যাপস তৈরি করা হবে জাতীয়ভাবে বা তৈরি থাকলে তাই ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রত্যেকটি সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীর হাতে একদিকে আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো হবে, আরেকদিকে হাতে মোবাইল তুলে ছবি বা ভিডিও পাঠানোর কৌশল শিখবেন। কিছু অপব্যবহার যে হবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে আগামী পাঁচ বছরে এই অপচয় কমে যাবে। তারা কিভাবে তথ্য সংরক্ষণ করতে হয়, তার মৌলিক ধারণা পাবেন। সপ্তাহে একদিন সাংবাদিকতা শিখবেন তারা। সেই অর্থে তথ্য সংগ্রহের নিয়ম শিখবেন। একইসাথে সেই সংবাদ কিভাবে কোথাও পাঠাতে হয়, তার নিয়ম বা কলাকৌশল শিখবেন।

তবে এই বিষয়ে সকলেই ধারণা লাভ করলেও আমি প্রতি মাধ্যমিক স্কুল থেকে দুইজনকে অ্যাপস ব্যবহারের অনুমতি দিতে আগ্রহী। ক্লাসের সেরা ছাত্র এবং ছাত্রীকে নিয়ে নিয়ে উপজেলা কমিটি গঠন, উপজেলা থেকে বাছাইকৃত দুজনকে নিয়ে জেলা কমিটি গঠনের প্রস্তাব আমার। কমিটির সদস্যরাই কেবল অ্যাপস ব্যবহার করবে। কিন্তু তথ্য সংগ্রহ আর সংরক্ষণের মৌলিক বিষয় সবাই শিখবেন।

৬) শৃংখলার সাথে কাজ করতে শেখানো
সপ্তাহে একদিন শিক্ষার্থীদের সামাজিক সম্পর্ক, শ্রদ্ধাবোধ, দায়বদ্ধতা, নিয়মানুবর্তিতা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং একান্নবর্তীতা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হবে। এটি ‘আত্মরক্ষা ও আইন’ বইয়ের একটি অধ্যায় হবে। এ অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসবে একটি।

আমি উপজেলা ভিত্তিক মাস্টার ট্রেইনার তৈরির পক্ষে। ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দায়িত্বে জেলার মাধ্যমিক স্কুলগুলো থেকে একজন করে শিক্ষককে উপযুক্ত সকল বিষয়ে দক্ষ করে তৈরি করার দায়িত্ব দেয়ার পক্ষে।

আগামী দুই  দশক এমনটা করতেই হবে। এমন করতে পারলে আমি হলফ করে বলতে পারি যে, দেশে একটা বিরাট পরিবর্তন আসবে। সামাজিক বিভেদ ভুলে তৈরি হবে পারস্পারিক শ্রদ্ধা-স্নেহের সম্পর্ক।

আমরা সৌহার্দ্য আর সমৃদ্ধির স্থায়ী উন্নয়নের পথে বহুধাপ এগিয়ে যাবো।  যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে সকল অনাচার, অন্যায় সহিংসতা থেকে মুক্তি পাবে আমাদের আমজনতা। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এর বিকল্প আসলে কিছুই নেই।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)