বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারকে জড়িয়ে বর্তমান সরকার হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে অপপ্রচার ও মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার আসামী মাজেদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে মিথ্যা করা যাবে না। সরকার হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে যাদের সম্যক ধারণা আছে তারা সকলেই জানেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে। মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের লাশের ওপর দিয়েই সেদিন ঐ মন্ত্রীসভার প্রায় সকল সদস্যরাই শপথ নিয়েছিল মোশতাক সরকারের মন্ত্রী হিসেবে। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট এবং ৩ অক্টোবরে তৎকালীন আওয়ামী-বাকশাল নেতা খন্দকার মোশতাকের জাতির উদ্দেশ্য দেয়া দুটি ভাষণ এর সুস্পষ্ট দালিলিক প্রমাণ বহন করে। সে ভাষণে তিনি মুজিব হত্যাকান্ডকে “এক ঐতিহাসিক প্রয়োজন” বলে উল্লেখ করেন। হত্যাকারীদেরকে তিনি প্রশংসিত করেন “অসম সাহসী সূর্য সন্তান” হিসেবে। ঐ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল মালেক উকিল লন্ডনে বসে কী মন্তব্য করেছিলেন তা সকলেরই জানা আছে। এটি ঐতিহাসিকভাবে সুস্পষ্ট যে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগী ছিল খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতারাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মাজেদের কথিত জবানবন্দিতে বয়ান করা হয়েছে, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ১৯৭৫ এর ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটির রেফারেন্স দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। অথচ জাতি জানে, প্রকৃতপক্ষে সরকারপ্রধান নিজেও জানেন, ওই সময়ের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক কর্তৃক, জিয়াউর রহমান নয়। এই অধ্যাদেশটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ ৫০ নামে অভিহিত। ‘দ্য বাংলাদেশ গেজেটে’ প্রকাশিত অধ্যাদেশটিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে।
১৫ আগস্ট হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপাপ্ত এক আসামীকে দিয়ে বন্দি অবস্থায় দেশের আইন, আদালত, শাসনব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সরকারের মুসাবিদায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারে বাধ্য করা এবং একই সাথে বেতনভুক্ত সাইবার ফোর্স নিয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে দাবি করছে বিএনপি।
বিএনপি বলছে, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার সকল আসামীদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা এবং রায় কার্যকর করার পর্ব প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে। এমতাবস্থায় আইনিভাবে এ ধরনের বক্তব্যের কোনো সাক্ষ্যমূল্য নাই। এ ধরনের পদক্ষেপ বরং সংঘটিত বিচারপ্রক্রিয়া ও রায়কে নতুনভাবে বিতর্কিত করে তুলতে পারে। আইনবিরোধী এ ধরনের পদক্ষেপ আসলে অপরাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
“তাই আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ঘিরে এই অপপ্রচার সম্পূর্ণই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার। মাজেদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে মিথ্যা করা যাবে না”।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে নিয়ে এহেন ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও কোটি মানুষের প্রিয় নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এহেন মিথ্যাচার ও তার চরিত্র হননের অপপ্রয়াসে আপামর জনগণ দারুণভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার কোটি কোটি ভক্ত ও অনুরক্তরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত এই ষড়যন্ত্রকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রকে ভেঙে চুরমার করে দেয়ার দৃপ্ত শপথ ঘোষণা করছে।
এসময় এমন ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার এবং সরকারকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে সুষ্ঠু গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।