দুই বছর আগে এক কেজি গরুর মাংস কিংবা এক কেজি খাসির মাংস কত টাকায় কিনেছেন? মনে পড়ে? একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন, এত দ্রুততম সময়ে এই দুই ধরনের মাংসের দাম কী পরিমাণে বেড়েছে।
১৮০ টাকা ছিল সাধারণ গরুর মাংস, আর একটু কচি গরুর মাংস হলে দু’শো টাকা। সেই দু’শো টাকা দিয়ে কিনতে গিয়ে কত কথা খরচ করতাম বিক্রেতার সঙ্গে। আর খাসির মাংস তিন শ’ থেকে সোয়া তিন শ’ টাকা, কিনতে গিয়ে একইভাবে কথা খরচ করতাম বিক্রেতার সঙ্গে। সেই গরুর মাংস বেড়ে আজ পাঁচ শ’ টাকা। আর খাসির মাংস সাত শ’ পঞ্চাশ টাকা।
কী কারণে বাড়ল? সাধারণ মানুষের কাছে অজানাই থেকে গেছে। এই তো মাস দু’য়েক আগে চার শ’ বিশ টাকা ছিল গরুর মাংসের কেজি আর ছয় শ’ থেকে ছয় শ’ পঞ্চাশ টাকা ছিল খাসির মাংসের কেজি। গত ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি মাংস বিক্রেতাদের ধর্মঘটের পর বেড়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস হয় পাঁচ’শ টাকা আর খাসির মাংস হয় সাত’শ পঞ্চাশ টাকা কেজি।
একেই কী রামরাজত্ব কিংবা মগের মুল্লুক বলে? যার যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে বাড়িয়ে নিচ্ছে জিনিসপত্রের মূল্য। দেশে কি কোনো নিয়মনীতি বলে কিছু নেই? রাষ্টযন্ত্র তা হলে কাদের স্বার্থের কথা ভাববে?
সাধারণ মানুষ, যারা এক কেজি গরুর মাংস কিনতে গেলে পকেটের কথা তিনবার ভাবেন। তাদের কথা কি রাষ্ট্রযন্ত্র কখনো ভাবে? নাকি তারা শুধু ভোটের হিসেবের সময় ভাবনার বিষয় হিসেবে নেতাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠেন?
গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে জানা যায় মাংসের দাম বেশি হওয়ায় গরু ও খাসির মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে সাধারণ মানুষ। এতে মাংস বিক্রি কমে গেছে। বাংলাদেশে অর্ধেকের বেশি মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় গাবতলী গরুর হাটে মাংস ব্যবসায়ীদের জন্য নির্মিত মেয়র হানিফ আশ্রয়কেন্দ্র ও সমিতির অফিস ইজারাদারেরা তালা মেরে দিয়েছেন। তাই সমিতির কার্যক্রম বন্ধ আছে এবং লাগামহীনভাবে মাংসের ব্যবসা চলছে।
তাদের দাবিগুলো হচ্ছে খাজনা কমানো, ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চামড়া বিক্রির ব্যবস্থা করা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে একটি স্থায়ী পশুর হাট তৈরি করা, মানসম্মত একাধিক কসাইখানা তৈরি করা।
এ সমস্যার সমাধান হলে গরুর মাংস তিন’শ টাকা কেজি আর খাসির মাংস পাঁচ’শ টাকা কেজিতে বিক্রি করা যাবে বলে মহাসচিব নিজেই জানিয়েছেন।
একইদিন সকালে সচিবালয়ে পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সভায় মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আলোচনায় বসেছিলেন। সমিতিকে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন চার পাঁচদিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করে দেবেন।
আরেকবার ভাবুন, কি পরিমাণ অরাজকতার কারণে মাংসের দাম বেড়ে চলেছে। দেখার কেউ নেই। লাগামহীনভাবে চলছে দুর্নীতি।
একটি গরু কিনে আনার সময় খাজনা দিতে হয় অনেক। দেখার কেউ নেই। তারপর ট্রাকে করে আনার সময় সড়কে প্রভাবশালী মহল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিতে হয় চাঁদা। এখানেও দেখার কেউ নেই। যে গরুটি একজন ব্যবসায়ী জবাই করে বিক্রি করছেন সেই গরুর চামড়া সে কোথায় বিক্রি করবে, কার কাছে ন্যায্যমূল্য পাবেন জানে না। মানসম্মত কসাইখানা না থাকায় যত্রতত্র পশু জবাই করার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খুশি রাখতে হয়।
মাংস যারা নিয়মিত খান তাদের তো এ দাম বাড়া নিয়ে ভাবনা থাকার কথা না। ভাবতে হয় তাদের, যারা মাসে অন্তত একবার দু’বার তাদের সন্তানদের একবেলা মাংস খাওয়াতে চান।
যে মাংস ব্যবসায়ী বলতে পারেন এইসব অরাজকতা দূর হলে গরুর মাংসের দাম তিন শ’ টাকা আর খাসির মাংসের দাম পাঁচ শ’ টাকায় নেমে আসবে। সে তো তার কেনা দামের পরে লাভের হিসেবের পরে ওই মূল্য নির্ধারণের কথা বলেছেন।
মাংসের বাজারে কী পরিমাণ তুঘলকি কাণ্ড চলছে এ কথার পর তা সহজেই বুঝা যায়। এভাবে অন্যসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যাপারে যে এরকম তুঘলকি ঘটনা ঘটছে না, তা কি হলফ করে বলা যাবে?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)