মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় এক বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে বরযাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাসের ৯ জন আরোহী নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৬ জন একই পরিবারের সদস্য। বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস লৌহগঞ্জের কনকসার থেকে কেরাণিগঞ্জের কামরাঙ্গীর চরে যাওয়ার সময় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
গেল কয়েকদিন দেশজুড়ে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী, সেই রেশ কাটতে না কাটতেই মহাসড়কে ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। নতুন সড়ক পরিবহন আইনের জেল জরিমানার পরিমান কমানোসহ ৯ দফা দাবিতে সারাদেশে কয়েকদিন অঘোষিত ধর্মঘট করে চালক শ্রমিকরা।
এধরণের ঘটনা দেশের বিভিন্নপ্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে ঘটে চলেছে। গত দু’দশকে মাথাপিছু সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে গড়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে বছরে ২৪ হাজারের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। কিন্তু পুলিশের রেকর্ড করা তথ্যে এ সংখ্যা ছিল আড়াই হাজারের কম। অন্যদিকে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে তৈরি এক জরিপে বেসরকারী সংস্থা যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে পাঁচ হাজার ৫১৪ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল সাত হাজার ২২১ জন।
দেশে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা যেভাবে বাড়ছিল, তার প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি উঠেছিল চালক-পরিবহন শ্রমিকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করে নতুন পরিবহন আইন করার। নানা আলোচনা-সমালোচনা আর অনিশ্চয়তার পর ৭৯ বছরের পুরনো আইনের ভিত্তিতে তৈরি মোটরযান অধ্যাদেশ বাতিল করে নতুন আইন করার পরে দেখা দেয় বিপত্তি। আন্দোলন শুরু করে চালক-পরিবহন শ্রমিকরা।
এখন পরিবহন নেতাদের দাবি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় ও জেল জরিমানার ভয়ে বেশকিছু পরিহনের চালক এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি। আর এ কারণে নির্ধারিত সময়ে কোনো কোনো পরিবহনের বাস ছাড়তে পারছে না। বিষয়টি সরল মনে হলেও আমাদের ধারণা, জনগণকে জিম্মি করে তারা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সড়ক-মহাসড়কে জনগণের প্রাণহানির এই পরিস্থিতি যেকেনো পরিস্থিতি বন্ধ করতে পরিবহনখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা একান্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি। আমাদের আশাবাদ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।