চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

মহাবিজ্ঞানীর মহাপ্রয়াণ

বিশিষ্ট ইংরেজ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ হিসেবে বিশ্বের সর্বত্র পরিচিত ব্যক্তিত্ব স্টিফেন হকিং। তাঁকে বিশ্বের সমকালীন তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের মধ্যে সেরা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হকিং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান অধ্যাপক। আইজাক নিউটনও একসময় এই পদে ছিলেন। বিখ্যাত বিজ্ঞানী দার্শনিক আইনস্টাইনের পর হকিংই সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী বিজ্ঞানী। এই সময়ে তরুণ থেকে সকল মানুষের নিকট তিনি গুরুত্বপূর্ণ এক বিজ্ঞানী হিসেবে অাদৃত ছিলেন। পদার্থ বিজ্ঞানে হকিংয়ের দুটি অবদানের কথা সবচেয়ে বেশি স্বীকৃত। প্রথম জীবনে সতীর্থ রজার পেনরাজের সঙ্গে মিলে সাধারণ আপেক্ষিকতায় সিংগুলারিটি সংক্রান্ত তত্ত্বের পর হকিং প্রথম অনিশ্চয়তার তত্ত্ব ‘ব্ল্যাক হোল’র ঘটনা দিগন্তে প্রয়োগ করে দেখান যে ব্ল্যাক হোল থেকে বিকিরিত হচ্ছে কণা প্রবাহ। এই বিকিরণ এখন হকিং বিকিরণ নামে অভিহিত। লিকিং তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের লিখিত পুস্তক এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির থেকে বক্তৃতা করতেন হকিং। একাডেমিক জগতে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। তিনি রয়েল সোসাইটি অব আর্টসের সম্মানীয় ফেলো এবং পন্টিফিকাল একাডেমি অব সায়েন্সের আজীবন সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালে তাঁকে নিয়ে একটি মুভি তৈরি হয়, নাম থিওরি অব এভরিথিং। আরেক বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলাই’র মৃত্যুর ঠিক তিনশত বছর পরে, ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি স্টিভেন হকিংয়ের জন্ম, অক্সফোর্ডে। হকিংয়ের বাবা ড. ফ্রাঙ্ক হকিং একজন জীববিজ্ঞান গবেষক ও মা ইসোবেল হকিং একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। হকিংয়ের বাবা-মা উত্তর লন্ডনে থাকতেন। লন্ডনে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজছে। হকিং গর্ভে আসার পর নিরাপত্তার খাতিরে তারা অক্সফোর্ডে চলে যান। হকিংয়ের জন্মের পর তাঁরা আবার লল্ডনে ফিরে আসেন। ১৯৮৮ সালে ‘অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইয়ের কারণে স্টিফেন হকিং বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। বইটিতে তিনি মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে তত্ত্ব দেন। আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট সেলার হিসেবে বইটির কয়েক কোটি কপি বিক্রি হয়। মহাবিশ্ব নিয়ে প্রকাশিত তার সর্বশেষ বই ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’। শারীরিকভাবে ভীষণরকম অচল এবং এ.এল.এসের (এমায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস বা লাউ গেহরিগ রোগ – যা একপ্রকার মোটর নিউরন রোগ) জন্য ক্রমাগতভাবে সম্পূর্ণ প্যারালাইসে নিমজ্জিত হওয়ার পরও তিনি বহু বছর যাবৎ তাঁর গবেষণা কার্যক্রম সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে গেছেন। এটিও একটি বিরল ঘটনা। এটিও বিজ্ঞানের এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা যে স্টিফেন হকিং মৃত্যু পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন তার চিন্তা চেতনায় এবং গবেষণায়। আধুনিক জীবনে প্রযুক্তির ভিড়ে বিজ্ঞান হারিয়েছে তার দ্যোতনা। আর এই প্রাযুক্তিক উল্লম্ফনের দিনে বিজ্ঞান নিয়ে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছেন স্টিফেন হকিং। এটি হয়ে উঠেছে একমাত্র তার মত বিজ্ঞানীর কল্যাণে। বিজ্ঞান যে মানবিক কল্যাণের জন্য এটি তার এক বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন: এই মহাবিশ্ব ততোটা মহাবিশ্ব হয়ে উঠতো না, যদি তাতে ভালোবাসার মানুষেরা না থাকতো। পদার্থবিদ্যার আরেক দিকপাল আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্ম দিনেই তিনি চিরতরে তিনি বিদায় নিলেন। তার মৃত্যুতে বিশ্ব হারালো এক বিরল বৈজ্ঞানিক দার্শনিককে। তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।