চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মহাকাশ জয়ের মতো দারিদ্র্য বিমোচনেও অগ্রগতি দেখতে চাই

দেশের ৩ শীর্ষ কর্পোরেট ব্যক্তিত্বের সাক্ষাতকার

দেশের দারিদ্র বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং টেলিকম সেক্টরের উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি দেশের স্বনামধন্য কয়েকজন ব্যক্তিত্ব সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তারা হলেন- প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব, পিকেএসএফ ও গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স এর চেয়ারম্যান আবদুল করীম, মেট্টোসেম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং রবি আজিয়াটা লিমিটেডের হেড অব রেগুলেটরি অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম। তাদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন রাজু আলীম

মহাকাশে বিস্তৃতির মতোই তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের উন্নতি প্রয়োজন: আবদুল করীম

প্রশ্ন : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় পিকেএসএফ কী কী অবদান রাখছে?

আবদুল করীম: জাতির পিতার নেতৃত্বে যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন অনেক সমস্যায় ছিল বাংলাদেশ। এই দেশকে এক সময় কটাক্ষ করে বটম লেস বাস্কেট বলেছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে আমরা হাঁটি হাঁটি পা পা করে অনেক দূর উন্নতি করেছি এমনকি মহাকাশে আমাদের স্যাটেলাইট গেছে। সামাজিক কতোগুলো সুচকে আমরা প্রতিবেশী অনেক দেশের চেয়েও এগিয়ে আছি। নিউক্লিয়ার বোম্ব আমরা বানাইনি কিন্তু উন্নয়ন সূচকে আমরা ভাল করেছি। দারিদ্রতা একটি বহুমাত্রিক সমস্যা ছিল তার বিপরীতে ছিল উন্নয়ন একটি বহুমাত্রিক ধারণা। দারিদ্র বিমোচন করে যে উন্নয়ন সাধন করেছে বাংলাদেশ। তাই এই দেশ এখন অনেকের ঈর্ষার পাত্র। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে এই দেশ এখন সবার কাছে চিহ্নিত হচ্ছে। এই দেশে যে বহুমাত্রিক দারিদ্রতা ছিল তা দূর করে আমাদের যে অবকাঠামো তা দূর করে বিভিন্ন প্ল্যান প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন অনেক দূর এগিয়েছে।

প্রশ্ন: পিকেএসএফ সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।

আবদুল করীম: পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। ১৯৯০ সালে প্রথমে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে পিকেএসএফ কাজ শুরু করে। সময়ের পথ পরিক্রমায় আমরা আমাদের ঋণ দানের কাজকে বহুমুখীকরণ এবং মানবিকীকরণ করেছি। এখন আমরা ক্ষুদ্র ঋণ আর বলি না একে উপযুক্ত ঋণ বলি- কারণ ২০/২৫ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে টেকসই উন্নয়ন এবং দারিদ্রতা দূর করা সম্ভব না। এখন আমরা ক্ষুদ্র উদ্যোগ এবং ছোটখাট ব্যবসাকে ঋণ দিচ্ছি। সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কোন ব্যবসাকে আমরা ঋণ দিতে পারি। পিকেএসএফ তার ক্ষুদ্র ঋণ থেকে বেরিয়ে এসে এখন উপযুক্ত ইন্ট্রিগেটেড উন্নয়ন ধারণায় কাজ করছে।

প্রশ্ন: আপনি বলেছেন, আপনারা অনেকগুলো সেক্টরে ঋণ দিচ্ছেন- কোন কোন সেক্টরে ঋণ দিচ্ছেন আপনারা?

আবদুল করীম: তিনি ভৌত অবকাঠামোর এর কথা বললেন ফ্যাক্টরি তৈরি এবং রাস্তাঘাট উন্নয়ন নিয়ে। আর আমরা কাজ করছি সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে।তৃণমূল থেকে দারিদ্র বিমোচন যদি সম্ভব না হয়। দরিদ্র মানুষগুলো যদি দারিদ্রের দুষ্ট চক্র থেকে বের করে আনা না যায় তাহলে তাদেরকে দিয়ে উন্নয়ন করা সম্ভব হয় না এবং আমি বললাম যে, দারিদ্র একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে আমরা দারিদ্র বিমোচনের চেষ্টা করেছি। পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন প্রায় ৩০০ এনজিও আছে। একসময়ে ব্র্যাক এবং আশা পিকেএসএফ এর এনজিও ছিল। আমাদের এই সব এনজিও এর মাধ্যমে আমরা আর্থিক সহায়তা প্রদান করি এবং এদেরকে আমরা সহযোগী সংস্থা বলি। ২৭৭ টি সহযোগী সংস্থার প্রায় ৯ হাজারেরও বেশি শাখা আছে সারা দেশে বিস্তৃত। চর কুকরি মুকরি কুতুবদিয়া বা টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সারাদেশে আছে আমাদের এই সহযোগী সংস্থার শাখা। প্রতি বছর আমরা প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়ে থাকি ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং প্রশিক্ষণ।

বিশেষ করে আমরা প্রশিক্ষণের উপরে জোর দিচ্ছি। ইনকাম জেনারেটিং অ্যাকটিভিটিজ তাদের যে আয় বাড়ানোর কাজ তৃণমূল পর্যায় থেকে বিশেষ করে সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে দলিত, চা শ্রমিক, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়সহ যারা যারা সুবিধা বঞ্চিত তাদেরকে আমরা ঋণ সহায়তা প্রশিক্ষণ এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করণের সুবিধা দিচ্ছি। যাতে করে আস্তে আস্তে এরা যেভাবে দারিদ্র বিমোচন হয়েছে বাংলাদেশে। এই দারিদ্র বিমোচনের হার পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় ভাল। উত্তরবঙ্গে আপনারা জানেন মঙ্গা নামে একটি অভিশাপ ছিল তা এখন কিন্তু দূর হয়েছে।

প্রশ্ন: উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দূর করার বিষয়ে আপনি বিস্তারিত বলুন?

আবদুল করীম: মহাকাশে যেমন বিস্তৃতি প্রয়োজন তেমনি তৃণমূল পর্যায়ের মানুষরকেও উন্নত করা প্রয়োজন। আমাদের সমৃদ্ধি কর্মসূচি তা ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ উদ্ভাবন করেছেন। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সাথে পিকেএসএফ এর বড় একটি কর্মসূচি ছিল মঙ্গা নিরসন। এটি ছিল প্রাইম। এটি একটি বিদেশি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। আমরা ফ্লেক্সিবেল লোন- এই লোনগুলো এমনভাবে দিয়েছি তার সাথে প্রশিক্ষণ এবং বিকল্প আয় বাড়ানো কর্মসূচি যখন লিংক পিরিয়ড কোন কাজ থাকে না। ওই সময়ে যাতে মানুষের কাজের সংস্থান হয় এবং বিকল্প তাদের বিভিন্ন পণ্য যাতে তৈরি করতে পারে সেটা যাতে এক্সপোর্ট করতে পারে এই সব ব্যবস্থা করা। আমাদের বিভিন্ন হস্ত শিল্প বিদেশে উচ্চমূল্যে রপ্তানি হচ্ছে। গাইবান্ধায় যে সব টুপি তৈরি হয় সেগুলো অনেক বেশি মূল্যে রপ্তানি হয়। দেশীভাবে পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন আমরা একটা পৃথক বৃহৎ একটি বিল্ডিং করছি যাতে তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের যে কর্মীরা সকল পণ্য উৎপাদন করে সেগুলো মান উন্নয়ন এবং বিপণনের ব্যবস্থা করার জন্যে। আমরা জীবন চক্র বৃদ্ধি যে উন্নয়ন কর্মসূচি- একটি শিশু মায়ের গর্ভে আসার পর থেকে তার জন্মের পর থেকে তার শৈশব কৈশর তার যৌবন এর দায়িত্ব নেওয়া।

কিশোরদের জন্যে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার ব্যবস্থা পরিবারের সকলের জন্যে স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা এবং এরপরে তাদের উৎপাদিত পণ্যের বিপনণের ব্যবস্থা। আমরা নীরবে যে সব বিপ্লব সাধন করেছি পিকেএসএফ এর যে ঋণ সহায়তা দিয়ে তার শতকরা ৪০ এখনো কৃষির উপরে। গরু মোটাতাজাকরণ থেকে শুরু করে কাঁকড়ার চাষ কুঁচিয়া চাষ টার্কি চাষ এবং কোয়েলের চাষ ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ করে তারা আস্তে আস্তে সক্রিয় হচ্ছে উৎপাদনে অংশগ্রহণ করছে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায় তারা জড়িত হচ্ছে।

ভিক্ষা অত্যন্ত খারাপ একটি পেশা ছিল। ভিক্ষার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এটি অনেক সফল হয়েছে সারা দেশে এবং এর অর্থের স্বল্পতার কারণে সারা দেশের সব ভিক্ষুককে আমরা মুক্ত করতে পারিনি। আমরা ২০০ ইউনিয়নে সীমিত সংখ্যক ভিক্ষুককে টেকসইভাবে সংস্থান করেছি।

আগামী বাজেটে ক্লিংকারের ডিউটি সহনশীল করার অনুরোধ: মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ

প্রশ্ন: মেট্টোসেম গ্রুপ বাংলাদেশের উন্নয়নে কী কী কাজ করছে?

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ: আবদুল করীম ভাই সঠিক বলেছেন বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতিটি প্যারামিটার এগিয়ে যাচ্ছে। এখন সব উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো অবকাঠামো- যা আমরা নির্মাণ সামগ্রীর মাধ্যমে এই দেশকে সরবরাহ করে থাকি। আপনারা জানেন এখন বাংলাদেশ সিমেন্ট এবং স্টিল উৎপাদনে এতোটাই সক্ষম হয়েছে যে, ১৯৯০ সালে বা ৯০ এর দশকে আমরা আমদানি নির্ভর ছিলাম। আর এখন আমরা নিজেরাই উৎপাদন করে এই দেশের সকল অবকাঠামো উন্নয়নের জন্যে সরবরাহ এবং সকল পণ্য আমরা শুধু উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদাই মিটিয়ে যাচ্ছি না, বাংলাদেশে এখন যে সব মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে- এইসব প্রজেক্ট এর জন্যে যে মানের সিমেন্ট এবং স্টিল প্রয়োজন তা এই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে এবং আমাদের দেশের উৎপাদিত সিমেন্ট স্টিল পাশের দেশ ভারতেও রপ্তানি করে যাচ্ছি আমরা। তার মানে আমরা এই সেক্টরে কতোটা সক্ষমতা অর্জন করেছি।আমরা কিছুদিন আগে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আমরা বিশ্বে জানিয়ে দিলাম যে, আমরা কতোটা সক্ষম। মানে শুধু নির্মাণ সামগ্রীতে সক্ষমতা লাভ করলে হবে না? আমাদেরকে এইভাবে প্রতিটি স্তরে নিজেদেরকে সক্ষম হতে হবে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে উৎপাদিত সিমেন্ট স্টিল এর বিপণনের ব্যাপারে কিছু জানতে চাই?

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ: আবদুল করীম ভাই বললেন সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে দারিদ্রের দুষ্ট চক্র থেকে বের করে নিয়ে আসতে কাজ করছে তারা। আর তারাই আমাদের টার্গেট গ্রুপ। এই গরীব মানুষই আয়ের উন্নতি করে একটি বাড়ি বানাবে। দেখেন কাদের নিকটে আমরা পণ্য পৌছাই? তাদের বায়িং ক্যাপাসিটি- এক সময় তারা বাসস্থান হারা ছিল।এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী যখন নিজেদের ক্রয় করতে সক্ষম হলও এবং যে সমস্ত কর্মসংস্থান হচ্ছে গ্রামগঞ্জে পোল্ট্রিফার্ম বা বিভিন্নভাবে। সেইখানে কিন্তু এই নির্মাণ সামগ্রী ছাড়া অ্যাবসারট সম্ভব না।

আপনি দেখেন বাংলাদেশের অনেক মানুষ বহির্বিশ্বে জব করে। তারা দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। এই টাকা পাঠিয়ে তাদের একটা স্বপ্ন যে, একটা বাড়ি করা। তারা আমাদের টার্গেট গ্রুপ এবং তাদেরকে আমরা খুব রিজনেবল প্রাইস এবং অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে- যদি এই দেশে আমদানি করে সিমেন্ট নিয়ে আসতে হতো তাহলে প্রতিব্যাগ সিমেন্টের মূল্য হতো ৬০০ টাকা। এখন আমরা ৪০০ টাকা করে সিমেন্ট সারা দেশে সরবরাহ করতে সক্ষম হচ্ছি। আমাদের একটা প্রব্লেম আর তা হলও এই যে ভারী শিল্প এবং ভারী পণ্য এই পণ্যকে সারা দেশে পরিবহনের জন্যে আমাদের সক্ষমতা এখনো সেই ভাবে ডেভলপড করে নাই। যার জন্যে আমাদের পণ্যের বিশাল ইমপ্যাক্ট করে শুধু পরিবহনের জন্যে। যদি প্রতিটি জেলায় ভৌত অবকাঠামো এবং বিশেষ করে ফোর লেনে রূপান্তর করা হয় তাহলে আমাদের পণ্য আরও সাশ্রয়ী মূল্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবো এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের আবাসন নির্মাণের জন্যে অত্যন্ত অল্প ব্যয়ে তারা বাড়ি নির্মাণ করতে সক্ষম হবেন।

আরেকটি জিনিস সেটি হল- আমাদের সিটির উপরে যে প্রেশার সবাই এখানে বসবাস করতে চায় অ্যাপারটমেন্ট গড়ে তুলতে চায়। এই অ্যাপার্টমেন্ট কালচার মূলত ঢাকা বেইজড। কিন্তু এই রোড কানেকশন যদি প্রোপারলি হয়ে যায় তখন ছোট্ট একটা এই দেশে কেউ যানজটে আটকে থাকবে না। সবাই গ্রামে চলে যাবে। সেইখানেও আমরা পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হবো।আর রিভার সাইট যেগুলো নদী পথে পণ্য সরবরাহের জন্যে সরকার ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটি যদি প্রোপারলি হয় তাহলে আরও সাশ্রয়ী মূল্যে এই সব পণ্য আমরা সারা দেশে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবো।

প্রশ্ন : মেট্টোসেম গ্রুপের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ: মেট্টোসেম নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদন করে এবং বিশ্বমানের নির্মাণ সামগ্রী আমরা উৎপাদন করে থাকি। আমাদের সিমেন্ট যে কোন মানের নির্মাণে ব্যবহৃত হয় এবং আমরা হয় ১০০ ডাব্লিউ টিএমটি রড উৎপাদন করি যেই রড যে কোন স্থাপনার জন্যে উপযোগী। আমরা জানি এই দেশের কৃষি ভূমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যেটা বাণ ব্রিকস বলে তার কারণে। আমরা আন বাণ ব্রিকস নিয়ে এসেছি যা কৃষি জমির মাটি ব্যবহার না করে নদী থেকে ড্রেজিং করে যে বালু আসবে তা দিয়ে ফ্লাই অ্যাশ এবং সিমেন্ট মিক্স করে আন বাণ ব্রিকস হবে এটি মেট্টোসেম উৎপাদনের জন্যে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের সেই পরিকল্পনা আছে।

প্রশ্ন: এর গুণগত মান কেমন হবে?

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ: গুণগত মান হবে বিশ্বমানের। বিশ্বের সব জায়গায়ই আন বাণ ব্রিকস ব্যবহৃত হয়। শুধু আমাদের ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল- শুধু এই বেল্টে বাণ ব্রিকস ব্যবহৃত হয় যাকে আমরা পোড়া ইট বলি। এটি দুটি ক্ষতি করে। একটি হলো কৃষিভূমির ফার্টিল ল্যান্ড নষ্ট করে ফেলে এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ করে এবং এর জন্যে প্রচুর এনার্জি ব্যবহৃত হয়। সেই কারণে আন বাণ ব্রিকস ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ব্যবহৃত হয় এবং এটি আমরা উৎপাদন করতে যাচ্ছি।

আমি আপনাকে ম্যাসেজ দেব যে, নির্মাণ সামগ্রী বিপণনের জন্যে এখন আমরা একটু ডিফিকাল্ট এর ভেতরে আছি। দেখেন, রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট সিমেন্টের অভাবে তাদের কার্যক্রম স্টপ হয়ে যাওযার পথে। একটি মাত্র কারণ হল সিমেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টে আমরা যে সিমেন্ট পৌঁছে দিচ্ছি সেই সিমেন্ট একসময় ছিল যে ২০ টন ক্যারি করা যেতো। সেটি এখন ১৩ বা ১৪ টনে লিমিট করে দেওয়ার কারণে আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে ওই জায়গায় সিমেন্ট পৌঁছে দিতে পারছি না। তাই সরকারের উচিত হলো ভারী শিল্পকে বিপণনের জন্যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারী হয়েছে রোডস এর পলিসি বিষয়ে এটি তিন বছরের জন্যে রিলিফ দেওয়া উচিৎ। পাশাপাশি এই যে ক্লিংকার আমরা যে ইম্পোরট নিয়ে আসি সরকার যদি আগামী বাজেটে ডিউটি সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসে তাহলে সাশ্রয়ী মূল্যে সারাদেশে সরবরাহ করতে পারবো।

স্যাটেলাইট বদলে দেবে দেশের টেলিকম সেক্টর: শাহেদ আলম
প্রশ্ন: স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশের দিকে পুরো বিশ্ব মুগ্ধ বিস্ময়ে তাঁকিয়ে আছে- এই বিষয়ে কিছু জানতে চাই?

শাহেদ আলম: এই বছরের মধ্যে দুটো যুগান্তকারী ঘটনা ঘটেছে। এক হলও আমরা চতুর্থ প্রজন্মের টেলিকম ব্যবস্থা তা আনতে পেরেছি।

প্রশ্ন: ফোর-জি?

শাহীদ আলম:  হ্যাঁ। ফোর-জি যাকে আমরা বলছি এবং এই সাথে আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পেরেছি।এটার মাধ্যমে যা হলো তা হলো আমরা ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলে থাকি- আমরা সেই ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের পথে পদার্পণ করেছি। এর মাধ্যমে এই কমিউনিকেশন সেক্টরে যে হিউজ ডেভেলপমেন্ট দেখে আসছিলাম তা পরিপূর্ণতার দিকে যাচ্ছে। এখন আমাদের আরও কিছু কাজ বাকি আছে।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হয়েছে এবং এর সাথে অলরেডি কমিউনিকেশন শুরু হয়েছে। এটির যখন পুরো কন্ট্রোল আমাদের কাছে থাকবে তখন এর সেবাগুলো কিভাবে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায়? ব্যবসা বাণিজ্যের সমৃদ্ধির জন্যে কিভাবে ব্যবহার করা যায়? এই বিষয়গুলো নিয়ে তখন কাজ হবে।এরপরে আমরা বলেছি ফোর-জি বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে কানাচে নিয়ে যেতে চাই। এখন বাংলাদেশের ৪৮৪টি থানার মধ্যে ৪৪০ টি থানায় কিন্তু ফোর জি আছে। অন্যান্য অপারেটররাও চেষ্টা করছে কিন্তু রবি প্রথম দিন থেকেই ৬৪টি জেলায় কিন্তু ফোর জি নিয়ে চলে গেছে। এখন এর মাধ্যমে কী হচ্ছে? দ্রুত কমিউনিকেশন বাড়ছে এবং এর উপর ভর করে অনেকগুলো ব্যবসা বাণিজ্য দাঁড়াবে। এর উপরে ভর করে এখন যে সব ব্যবসা বাণিজ্য আছে তারাও আরও বেশি সার্ভিস দিতে পারবে।

প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের টেকনিক্যাল সাপোর্ট কাদের উপরে বেশি পড়বে?

শাহেদ আলম: এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হয়েছে। ১৬শ’ স্যাটেলাইট এখন অ্যাকটিভ আছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যে যোগাযোগ হচ্ছে এবং গ্রেডারনেস দেওয়া হচ্ছে। টেকনিক্যাল ভাষায় আমরা যদি বলি- এই মূহুর্তে আমাদের সাবমেরিন কেবল ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কোনভাবে যদি সাবমেরিন কেবল স্ন্যাপ করে বা কেটে যায় আমরা কিন্তু পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব ইন্টারনেটে তখন কিন্তু স্যাটেলাইটের প্রয়োজন হবে। এখন দুটি সুবিধা সরাসরি পাওয়া যাচ্ছে। একটি হলো টেলিভিশন সুবিধা আরেকটি হলো মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন সুবিধা।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যেটি হবে আমাদের যদি কোন দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তখন দেখা যাবে আমাদের টেলিকম টাওয়ার পড়ে যেতে পারে। টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডিসকানেক্ট হয়ে যেতে পারে। তখন স্যাটেলাইট সেই জায়গায় কাজ করবে এবং সব সময়ের জন্যে আমাদেরকে সাপোর্ট দিতে পারবে। আরও অনেকগুলো ব্যাপার আছে – সেগুলো হলো যে, দুর্গম অনেক জায়গা আছে যেমন, সেন্টমার্টিন বা কুতুবদিয়া বা পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক জায়গা আছে যেখানে নেটওয়ার্ক পৌঁছানো খুবই কষ্টকর। সরকারি বেসরকারি বা আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো কাজ করছে তারা ওই সব জায়গায় কমিউনিকেশন সুবিধা সেইভাবে পাচ্ছে না। তখন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এই সুবিধা পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে এটি কিন্তু আমাদের স্যাটেলাইট। এতদিন ধরে আমরা অন্যদের স্যাটেলাইট ইউজ করে আসছিলাম। এখন আমাদের স্যাটেলাইট নিজেদের দেশের জন্যে ব্যবহার করতে পারবো।

আর মোবাইল টেলি কমিউনিকেশন এর জন্যে যদি বলি- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ছাড়াও আমরা কিন্তু এখন আর টেলি কমিউনিকেশন আর নেটওয়ার্ক স্থাপন করছে তা না। এখন আমরা অনেকগুলো সার্ভিসের দিকে যাচ্ছি। আর সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন ডে গেলো আমরা পালন করলাম। সেখানে প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল যে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে কিভাবে আমরা আরও অগ্রসর হতে পারি।