বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশ পদচারণা শুরু করবে মহাকাশেও। বাংলাদেশে তো বটেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও এই স্যাটেলাইট নিয়ে আলোচনার কমতি নেই।
এখন একটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক স্যাটেলাইটের ইতিহাস।
স্যাটেলাইট হলো মহাকাশে থাকা এমন একটি বস্তু যেটি উৎক্ষেপিত হয় পৃথিবী থেকেই। এটি পৃথিবী অথবা অন্য কোনো গ্রহের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে পৃথিবীর বাইরে অর্থাৎ মহাকাশ থেকেই নানান তথ্য সরবরাহ করে থাকে পৃথিবীতে।
বাংলায় এটিকে বলা হয় কৃত্রিম উপগ্রহ। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহের নাম চাঁদ। চাঁদ সারাক্ষণই পৃথিবীকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। মানব তৈরি স্যাটেলাইটও মহাশূন্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। তবে সেটা নির্দিষ্ট কক্ষপথ ধরেই।
বিশ্বের প্রথম স্যাটেলাইটটির নাম স্পুটনিক ১. স্যাটেলাইট। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সোভিয়েট ইউনিয়ন থেকে এটি উৎক্ষেপন করা হয়। ১৮৩ পাউণ্ড ওজনের এই স্যাটেলাইটটি ৯৮ মিনিট নিত পুরো পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে। এটিই ছিলো বিশ্বের সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক ও তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নে প্রথম পদক্ষেপ। এই স্যাটেলাইটটির প্রধান ডিজাইনার ছিলেন সার্গেই করলেভ।
তারও বেশ কয়েক বছর আগে ১৯৫২ সালে কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরির কাজ শুরু হয়। যখন সায়েন্টিফিক ইউনিয়নের ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল জুলাইয়ের ১ তারিখকে, ১৯৫৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং ১৯৫৮ সালকে আন্তর্জাতিক ভূপ্রকৃতিবিদ্যার বছর হিসেবে ঘোষণা করে।
দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহটির নাম ছিলো স্পুটনিক-২। সেটিও একই বছরের ২ নভেম্বরে উৎক্ষেপণ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উৎক্ষেপন করা প্রথম উপগ্রহটির নাম ছিলো এক্সপ্লোরার-১।
ভস্টক ১ নামের কৃত্রিম উপগ্রহ প্রথম মানুষকে নিয়ে মহাকাশ প্রদক্ষিণ করে। আর মহাকাশে যাওয়া প্রথম মানুষটির নাম ছিলো ইউরি গ্যাগারিন।
মানুষের তৈরি স্যাটেলাইটগুলোর নানান আকার ও ধরণ হয়ে থাকে। কখনো কখনো একটি স্যাটেলাইট তৈরি করতে কয়েক মাস বা কয়েক বছর লেগে যায়। এই লম্বা সময়ে নানান রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে সেটি ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারবে কিনা বা মহাকাশের কঠিন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারবে কিনা।
২০ শতাব্দীর শেষ নাগাদ প্রায় ২২০০ কৃত্রিম উপগ্রহ পুরো মহাকাশকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করেছে। আর এসব স্যাটেলাইট এমন সব বৈজ্ঞানিক তথ্য ছবিসহ প্রদান করছে যেগুলো আগে কখনো ভাবাই যায়নি। তবে মহাকাশে প্রদক্ষিণরত স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে ৫০ ভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। তবে স্যাটেলাইটগুলোর আরো বেশি সুবিধা হচ্ছে তাতে এমন কিছু প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার দেখা যায় যেগুলো মানবচক্ষেও ধরা পড়ে না।
মহাকাশে স্যাটেলাইটগুলো যে কক্ষপথে ঘুরতে থাকে সেটাকে বলা হয় অরবিট বা কক্ষপথ। ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা অনুসারে এসব স্যাটেলাইটকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। উচ্চ কক্ষপথ, মধ্য নিম্নপথ বা নিম্ন কক্ষপথ।
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে। এত এত স্যাটেলাইট যখন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। তখন এসবের একটা অন্যটার সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছে না কেন?মহাশূন্যে সবগুলো স্যাটেলাইটই ঘণ্টায় হাজার হাজার মাইল গতিতে ঘুরছে। তবে সেখানে থাকা সবগুলো স্যাটেলাইট কার্যকর নয়। প্রচুর মহাজাগতিক বর্জ্যও আছে সেখানে। স্পেস এজেন্সিগুলোকে ঘুর্ণন গতি খুবই গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। তারপরও মাঝে মাঝে যে সংঘর্ষ হয় না তা নয়। মহাকাশে থাকা সবচেয়ে বড় বর্জ্য ছিলো চীনা অ্যান্টি-স্যাটেলাইটের। এর কারণে ২০১৩ সালে রাশিয়ার একটি স্যাটেলাইট ধ্বংস হয়ে যায়। নাসা ও ইসা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে মহাকাশের বর্জ্যগুলো কমাতে।
মহাকাশে থাকা এসব স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কাজে। সাধারণত কমন স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে আছে সেনাবাহিনী ও সাধারণভাবে পৃথিবীকে দেখার স্যাটেলাইট, যোগাযোগের স্যাটেলাইট, নাবিকদের স্যাটেলাইট, আবহাওয়া স্যাটেলাইট এবং স্পেস টেলিস্কোপ। কক্ষপথে থাকা মহাকাশ সংস্থা বা মানব স্পেসক্রাফটও স্যাটেলাইট হিসেবেই পরিচিত।