প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মহাকাশযাত্রায় ইতিহাস গড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশযান নির্মাতা কোম্পানি স্পেসএক্স। প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক রকেট নাসার দুইজন মহাকাশচারীকে নিয়ে কক্ষপথে যাত্রা করেছে।
৯ বছর আগে নাসার শাটলযান বন্ধ করে দেওয়ার পর এই প্রথম কোনো মার্কিন ক্রু যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজেদের রকেটে মহাকাশে উড়াল দিলেন। এর আগ পর্যন্ত রাশিয়ার শাটলযানে মহাকাশে যেতে হতো যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশচারীদের।
ডগ হার্লি এবং বব বেনকেন এই উড়ালের মধ্য দিয়ে স্পেসএক্স শুধু নতুন ক্যাপসুল পদ্ধতির পরীক্ষাই করছেন না, তারা নাসার জন্য নতুন ব্যবসায়িক মডেলও তৈরি করছেন।
এই মহাকাশ যাত্রায় ব্যব্হৃত যান ড্রাগন শিপ ফ্যালকন-৯ নাসার নয়। স্পেসএক্সের ‘ট্যাক্সি’ সার্ভিসের সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ধারণা করা হচ্ছে, এই উড়ালের পরে তথ্যপ্রযুক্তির ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্স ছাড়াও আরো অনেকে এই বাজার বিস্তৃত করতে এগিয়ে আসবে। মহাকাশ জায়ান্ট বোয়িংয়েরও নাসার সঙ্গে এমন কিছু চুক্তি আছে।
সফল উৎক্ষেপণের পর ইলন মাস্ক বলেন, তার হার্ডওয়্যার মহাকাশচারীদের কক্ষপথে নিয়ে যাচ্ছে এমন দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন তিনি।
এই স্পেসএক্সের এই অভিযানের ফলে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে (আইএসএস) কাউকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নাসার রাশিয়ান রকেট বা ক্যাপসুলের উপর নির্ভরতা কমবে।
সেজন্যই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফ্লোরিডায় উৎক্ষেপণের সময় তিনিও উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্প বলেন, আগের নেতারা মহাকাশচারীদের কক্ষপথে পাঠানোর কাজে যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশের দয়ার উপর নির্ভরশীল করে রেখেছিল। আজ আমরা গর্বভরে আমেরিকান মহাকাশচারীদের আমেরিকার মাটি থেকে আমেরিকান রকেটেই মহাকাশে পাঠালাম।
হার্লি ও বেনকেনের ড্রাগন শিপ ফ্যালকন-৯ রকেটে করে স্থানীয় সময় ৩টা ২২ মিনিটে পৃথিবী ছাড়ে। আড়াই মিনিট পরে নিচের যানটি আলাদা হয়ে সমুদ্রে ড্রোন জাহাজে ফিরে আসে।
আর ৬ মিনিট পরে ক্রুরা নিরপদে কক্ষপথে ঢুকে পড়ে। রোববার আইএসএসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে হার্লি ও বেনকেনের।
ক্যাপসুলের সরঞ্জামাদি এবং পদ্ধতিগুলি পরীক্ষা করার জন্য কিছু সময় ব্যবহার করবেন তারা, তার মধ্যে ম্যানুয়াল বিমান চালনাও থাকবে।
এই ড্রাগন ক্যাপসুলটি যদিও স্বয়ংক্রিয় যান, সে নিজেই আইএসএসের পথ খুঁজে নিবে তারপরও ক্রুদের সবরকম পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। আর জানতে হবে যানটি তাদের হাতে কেমন ব্যবহার করবে।
ড্রাগনের কোনো নিয়ন্ত্রণ কাঠি নেই। টাচ স্ক্রিন প্যানেলেই ফ্লাইট নির্দেশনা দিতে হয়। কক্ষপথে গিয়ে মহাকাশচারীদের কাজ হবে ঐতিহ্য অনুযায়ী যানটির নামকরণ করা। রেডিওবার্তায় তারা জানিয়েছিল, এর নাম দেবেন ‘এনডেভর’।
হার্লি বলেন, আমরা দুটি কারণে এনডেভর (প্রচেষ্টা) নামটি বেছে নিয়েছি: প্রথমত, ২০১১ সালে শাটল প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর থেকে নাসা, স্পেসএক্স এবং আমেরিকা যে অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। অন্য কারণ; বব এবং আমার জন্য আরও ব্যক্তিগত। শাটল এনডেভরে আমাদের প্রথম যাত্রা ছিল এবং এই নামটি তাই আমাদের জন্য বড় কিছু্।
১৮ শতাব্দীর শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণে ব্রিটিশ এক্সপ্লোরার জেমস কুকের নেতৃত্বাধীন জাহাজ ছিল এনডেভর।
তাদের ফেরার কথা রয়েছে ৪ মাস পরে। ধারণা করা হচ্ছে, তখনও আটলান্টিকে নিরাপদেই অবতরণ করবেন তারা।