আজ বিজয়া দশমী। আজ মর্ত্য থেকে দুর্গার বিদায়ের করুণ সুর। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার শেষ হলো বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা। রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে সকাল থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে পূজার নানা আচার ও দুর্গাপূজায় চিরাচরিত উৎসব পালন করতে দেখা গেছে। এক অবর্ণনীয় মনোবেদনা নিয়ে দেশের সনাতন ধর্মালম্বীরা এবারের পূজা পালন করেছেন তা বোঝার সক্ষমতা অন্য কারও নেই। সারাদেশে একটি অশুভ চক্র এবারের পূজায় ভয়ংকর অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। সেটাতে তারা সক্ষম না হলেও পূজার আনন্দকে ম্লান করতে পেরেছে তারা।
ষষ্ঠী, সপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী পেরিয়ে দুর্গাপূজার আজ বিজয়া দশমী। অর্থাৎ পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব সমাপ্তির দিন আজ। বিজয়া দশমীতে ভক্তদের কাঁদিয়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। এ জন্য মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের সুর। বিদায়ের কষ্ট ভুলে থাকতে এবং দেবীকে হাসিমুখে বিদায় জানানোর জন্য দিনটিতে ভক্তরা সাধারণত সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। কিন্তু অস্থিতিশীল প্রেক্ষাপটে এবার সিঁদুর দান হলেও অনেক মণ্ডপে সিঁদুর খেলা হয়নি। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন: মহিষাসুরের সঙ্গে নয় দিন নয় রাত যুদ্ধের পর দশম দিনে জয়ী হন দেবী দুর্গা। এ জন্যই বিজয়া দশমী। যুদ্ধ জয়ের আনন্দে সামিল হতে এই দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই মেতে ওঠে সিঁদুর খেলায়।
প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার বলেন: পূজার আগে থেকে মণ্ডপগুলো ঘিরে আমাদের কঠোর নিরাপত্তা ছিল। বিসর্জনেও আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার রাখছি। যেখানে যে ধরনের নিরাপত্তা দরকার, সেই প্রস্তুতিই আমাদের রয়েছে।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী মর্ত্যে এসেছেন ঘোড়ায় চেপে। পুরাণ অনুযায়ী, দুর্গা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এলে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, ঝড়, রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়ছেন দোলায় চড়ে। দোলায় গমনেও বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্বিপাক। পুরাণ অনুযায়ী, ব্রহ্মার বর পেয়ে মানুষ ও দেবতাদের অজেয় হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুর। ফলে তাকে পরাজিত করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর যে মহামায়ারূপী নারী শক্তি তৈরি করেন, তিনিই দেবী দুর্গা। দশভূজা দুর্গা টানা নয় দিন যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন।
এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে। গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ২১৩টি। দশমীর দিনে আবেগ ও মন খারাপমিশ্রিত একটি অনুভূতি হয়। এদিনে মা দুর্গা ফিরে যায়। তখন আরও একটি বছরের অপেক্ষা।
কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া এবারের দুর্গোৎসব মোটামুটি সারাদেশেই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে এই জঘন্য ঘটনা একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে। তারপরও আমরা মনে করি, সকল ধর্মের সহাবস্থানই বাংলাদেশ। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা করা চক্র নিপাত যাক। এই দিনে আমরা আরও বেশি কামনা করি, সরকার যাতে দেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে।