পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের এক সময়ের ‘হেভিওয়েট নেতা’ বলে সুপরিচিত শুভেন্দু অধিকারীকেই বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে আংশিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা দলটি। এদিন প্রথম দুই দফা নির্বাচনের জন্য ৬০টি আসনের মধ্যে ৫৭টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে বিজেপি। এর মধ্যে একটি আসন ছেড়েছে শরীক দলের জন্য।
প্রকাশিত তালিকায় প্রত্যাশিতভাবেই এসেছে শুভেন্দু অধিকারীর নাম। তিনি লড়াই করবেন নিজের বহুদিনের পরিচিতি ভোটক্ষেত্র নন্দীগ্রাম আসন থেকে। এরই মধ্যে ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন মমতা। তিনি ছেড়ে এসেছেন নিজের পুরানো আসন ভবানীপুরকে।
পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমগুলো বলছে, বিজেপির প্রার্থী তালিকায় আছে সাবেক ক্রিকেটার অশোক দিন্দা, ডেবরায় তৃণমূল প্রার্থী প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন আরেক প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা ভারতী ঘোষ।
এছাড়াও খেজুরিতে প্রার্থী শান্তনু প্রামাণিক। রামনগরে স্বদেশ নায়েক। দাঁতনে শক্তিপদ নায়েক। ঝাড়গ্রামে সুখময় শতপথী। খড়গপুরে প্রার্থী হয়েছেন তপন ভুঁইয়া। পুরুলিয়ায় প্রার্থী হয়েছেন সুদীপ মুখোপাধ্যায়। জয়পুরে প্রার্থী নরহরি মাহাতো। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায় চিত্ত প্রামাণিককে প্রার্থী করেছে বিজেপি। পাথরপ্রতিমায় আশিস হালদার, কাকদ্বীপে দীপঙ্কর জানা। সাগরে বিকাশ কামিলা।পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে প্রার্থী হয়েছেন হরেকৃষ্ণ বেরা। নন্দকুমারে নীলাঞ্জন অধিকারী। মহিষাদলে বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। হলদিয়ায় সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিধায়ক তাপসী মণ্ডলকে প্রার্থী করা হয়েছে। সবংয়ে অমূল্য মাইতি। পিংলায় অন্তরা ভট্টাচার্য। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি আসনটি শরিক দল অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের জন্য ছেড়েছে বিজেপি।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ২৯৪টি আসন বিশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এবার প্রায় ১ মাস ধরে ৮ দফায় ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ২৭ মার্চ প্রথম দফায় ভোট হবে ৩০টি আসনে। একই সংখ্যক আসনে দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে ১ এপ্রিল।
এরপর তৃতীয় দফায় ৩১টি আসনে ৬ এপ্রিল, চতুর্থ দফায় ৪৪টি আসনে ৯ এপ্রিল, পঞ্চম দফায় ৪৫টি আসনে ১৭ এপ্রিল ভোট, ষষ্ঠ দফায় ৪৩টি আসনে ২২ এপ্রিল, সপ্তম দফায় ৩৬টি আসনে ২৬ এপ্রিল এবং ২৯ এপ্রিল অষ্টম দফায় ৩৫টি ভোটগ্রহণ করা হবে। আগামী ২ মে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়াং আসন ছাড়া ২৯১টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাহাড়ের ওই তিনটি আসন শরীক দলের জন্য ছেড়ে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একই দিন আংশিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে কংগ্রেস-আইএসএফ (ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট)-কে নিয়ে গঠিত বামদলগুলোর জোট ‘সংযুক্ত মোর্চা’।
২০১৬ সালে গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২১১টি আসন পেয়ে এককভাবে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ওই নির্বাচনে বামদলগুলোর সঙ্গে জোট বেধে কংগ্রেস পেয়েছিল ৪৪টি আসন। আর সিপিএম-এর নেতৃত্বে বামদল পেয়েছিল ২৬টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩টি আসন।
এবার সেই ৩ আসন পাওয়া দলটি দুইশোরও বেশি আসন পাওয়ার টার্গেট করেছে। এরই মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অনেক প্রভাবশালী নেতারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
সাবেক মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর হাত ধরে তৃণমূলের ১০ জন বিধায়ক ও সাংসদকে সঙ্গে নিয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। এরপর তার নেতৃত্বে আরও কিছু নেতা তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে আসে।