মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর আশ্বাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালগুলোতে সপ্তাহ ধরে চলা ধর্মঘট তুলে নিতে সম্মতি প্রকাশ করেছেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা।
মমতা চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘হাসপাতালে যাতে আর একটাও হামলার ঘটনা না ঘটে সবার আগে তা দেখা হবে। যদি এমন ঘটনা ঘটে সে ক্ষেত্রেও দ্রুত এবং কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার বিকেল সারে তিনটায় নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষে ধর্মঘট তুলে নিতে সম্মত হয় আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। তবে তারা এখনো ধর্মঘট তুলে নেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের ৩০ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল। আন্দোলন করা চিকিৎসকদের প্রকাশ্যে ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বৈঠক করার শর্ত মেনে নেয়ার পরই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকদের নিয়ে আমরা গর্বিত। আপনারা হয়তো আমার সরকারের উপর রেগে আছেন কিন্তু দয়া করে আপনারা ঘরে ফিরে যান। আপনারা যদি আন্দোলনের সমাপ্ত ঘোষণা করেন তাহলে আমি খুব খুশি হব। জনগণ অনেক আবেগ প্রবণ, তবে সব রোগী খারাপ নয়।’
আন্দোলনকরা জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরাও একটি সমাধানের জন্য এখানে আলোচনায় বসেছি। আপনি আমাদের গার্ডিয়ান, আমরা বিশ্বাস করি আপনার (মুখ্যমন্ত্রী) ভালো উদ্দেশ্য আছে।যদি সম্ভব হয় তাহলে ওই ঘটনায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এরআগে ৩টায় আলোচনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নানান জটিলতা, টানাপড়েন মিটিয়ে তা শুরু হয় একটু দেরিতে।
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে, এই বৈঠকের লাইভ কভারেজের অনুমতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে রাজ্যের ১৪টি মেডিক্যাল কলেজের ৩০ জন প্রতিনিধি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও সরকারের পক্ষে ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্তা ও সিনিয়র চিকিৎসকবৃন্দ।
এর আগে কোনো গোপন স্থানে বৈঠক করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় চিকিৎসকরা।
রোববার আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে তাদের একজন মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা এই অচলাবস্থার অবসানে আগ্রহী। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজী আছি, তবে তা হতে হবে উন্মুক্ত। মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের স্থানেই আমরা বৈঠক করবো তবে সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরাসহ সব পক্ষের উপস্থিতি থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের স্বার্থেই আমরা দ্রুত কাজে ফিরে যেতে চাই। পাশাপাশি আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সব দাবি যথাযথভাবে মেনে নেয়া হোক।
গত সোমবার রাতে এনএআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যু হলে তার আত্মীয়রা দু’জন চিকিৎসকের উপরে হামলা করে। সেই কারণেই রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নামেন চিকিৎসকরা। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য রাজ্যেও।
আন্দোলনের মধ্যেই মমতা ব্যানার্জির আল্টিমেটামের প্রতিবাদে ধর্মঘটে অংশ নেয়া সরকারি হাসপাতালের কয়েক’শ চিকিৎসক পদত্যাগও করেন।