বাংলাদেশের জনপ্রিয় মিউজিক ভিডিও নির্মাতা চন্দন রায় চৌধুরী। বড় একা একা লাগে, আরাধনা, ধোঁয়া, ফিরে আসো না, এ জীবনে যাকে চেয়েছি’র মতো জনপ্রিয় মিউজিক ভিডিওর নির্মাতা তিনি।
‘সেরা মিউজিক ভিডিও নির্মাতা’ হিসেবে প্রথমবার ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড-২০১৮’ পেয়েছেন এই নির্মাতা। ‘মন কারিগর’ গানের ভিডিও নির্মাণের জন্য ক্যারিয়ারে এই প্রথম চন্দন রায় চৌধুরী সম্মাননা পেয়েছেন। এই প্রাপ্তি তাকে আগামীতে আরও ভালো কাজের প্রেরণা যুগিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করে পুরস্কার প্রাপ্তিসহ এই মাধ্যম নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন চন্দন রায় চৌধুরী।
প্রথমবার ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন। কেমন লাগছে?
রবিউল ইসলাম জীবনের লেখা, ইমরানের সুর-সংগীত ও তাহসানের গাওয়া ‘মন কারিগর’ গানের জন্য সম্মাননা পেয়েছি। এই প্রথমবার আমার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অ্যাওয়ার্ড (সম্মাননা) পেয়েছি। তাহসান ভাইয়ের সাথেও এই গানের মাধ্যমে আমার প্রথম কাজ। আমি চারুকলার ছাত্র। চেষ্টা করেছিলাম এই ভিডিওতে প্রতিটি চরিত্রকে পেইন্টিংয়ের মতো করতে। এই গানটির ভিডিও করার জন্য অনেক টাইম পেয়েছিলাম। কিছু কাজের পর তাহসান ভাইয়ের পছন্দ হয়নি। পরে আবার করেছি। দ্বিতীয়বার তিনি ওকে বলেছেন। অনেক শ্রম গেছে। ফাইনালি কাজের স্বীকৃতি পেয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা আমার কাজের উৎসাহ আরও বেড়েছে। এজন্য ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’-এর আয়োজকদের কাছে কৃতজ্ঞতা।
মিউজিক ভিডিও নির্মাণের আগে কোন দিক খেয়াল রাখেন?
মিউজিক ভিডিও টোটালি বিনোদনের একটা ব্যাপার। সুন্দর বিনোদন এবং সঠিক প্রেজেন্টেশন দেয়ার চেষ্টা করি। আর আমি একটু গ্ল্যামার দেয়ার চেষ্টা করি। ভিডিওর মাধ্যমে চেষ্টা করি মানুষ যেন কিছু শিখতে পারে। একটা ম্যানার যোগ করি, স্ট্যাট্যাস যোগ করি। বাইরের দেশের ভিডিওর মতো উন্নত করার চেষ্টা করি। একটা উদাহরণ দেই- মালয়েশিয়া গিয়ে একবার দেখছি, প্রবাসী বাংলাদেশীরা ছুটির দিনে বড় প্রজেক্টরে এক জাগায় মিউজিক ভিডিও দেখে। এটা দেখে আমি খুব অবাক হয়েছি। তাদের বিনোদন শুধু এটুকুই। এটা দেখে একদিকে খুব খারাপ লেগেছে, আবার কিছুটা ভালোও লেখেছে। তারপর আরও ইন্সপায়ার্ড হয়ে বিশ্বমানের ভিডিও নির্মাণের চেষ্টা করছি।
মিউজিক ভিডিও বেশিরভাগ সময় রোমান্টিক হয় কেন? গল্প নির্ভর ভিডিও তুলনামূলক কম হয় কেন?
মিউজিক ভিডিও রোমান্টিক হলে দর্শক বারবার দেখে। কিন্তু গল্প নির্ভর হলে সেটা একবার-দুবার দেখার পর আর আগ্রহ থাকেনা। আমি রোমান্টিক ভিডিও এজন্য বানাই যে, মানুষ এটা দেখলে ‘বোরিং ফিল’ হয় না। ভিডিও দেখার সময় ভাবে, আমি বোধ হয় ওটা! গল্প নির্ভর কাজটা মনের মধ্যে থেকে যায়। তাই একাধিকবার দেখতে চায় না।
আগামীতে মিউজিক ভিডিওর বাজার কেমন?
আমি যখন শুরু করেছি, তখন মানুষ মিউজিক ভিডিওর নাম শুনলে ভয় পেত। তানজিন তিশাকে মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে আমি মিডিয়াতে এনেছি। কিন্তু এই কাজটাকে ভালো পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। মানুষ এটাকে ভালো বলে। দেশের বাইরে থেকেও দেখে। আগামীতেও এর বাজার ভালো থাকবে। কারণ, গান হচ্ছে রিফ্রেশমেন্টের ব্যাপার। আগে মানুষ শুনতো, এখন হাতে স্মার্ট ফোন আছে সবাই দেখতে পাচ্ছে। আগামীতে আরও ভালো হবে। আমার মনে হয়, এটা ফিল্মের পর্যায়ে যাবে। এখনই বলা হয়, মিউজিক্যাল ফিল্ম!
মিউজিক ভিডিও হিট হলে কৃতিত্ব বেশি কার? শিল্পীর নাকি ভিডিও নির্মাতার?
আমি নির্দিষ্ট করে কাউকে ক্রেডিট দেবো না। টোটাল টিম-এর ক্রেডিট পাবে। ভিডিও বানাতে গেলে আর্টিস্ট যদি প্রপার অ্যাফোর্ড না দেন তবে কাজ ভালো হবে না। আর গান হিট হলে নির্মাতার একটা ক্রেডিট তো থাকবেই। আমি যেটা বুঝি, ভিডিও হিট হলেও ডিরেক্টরের, ফ্লপ হলেও ডিরেক্টরের।
ভিউ কি ভিডিও হিটের মানদণ্ড হতে পারে?
ভিউ দিয়ে কখনো ভিডিও হিটের মানদণ্ড হতে পারে না। একদমই ভুল কথা। অনেক সময় গান সুন্দর কিন্তু ভিডিও খারাপ হয়। আবার অনেক সময় ভিডিও সুন্দর কিন্তু গান ভালো থাকে না। আমার কাছে ভিউটা আপেক্ষিক মনে হয়। কেউ প্রেডিকশন করতে পারবে না। অনেক ক্ষেত্রে বুস্ট করেও ভিউ বাড়ানো হয়। আমার নিজের অনেক পছন্দের গান আছে, যেগুলো ভিউ একদমই হয়নি।
বাংলাদেশে মিউজিক ভিডিও দেখে কোন শ্রেণীর দর্শক, আপনার কী মনে হয়?
এলিট ক্লাস দর্শক এখনও সেভাবে আমাদের মিউজিক ভিডিও দেখে না। তারা সবসময় হলিউড, বলিউড নিয়ে পড়ে থাকে। আমার কাছে মনে হয়, মিউজিক ভিডিওর মোস্ট অব দ্য ভিউয়ার্স হলো মফস্বলের মানুষ। এটা আমি রিসার্চ করেছি। বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দেখি তারা কেমন ভিডিও দেখে। তাদের ফোনে কী ধরনের গান থাকে! গ্রামে, মাঠে, হাটে-বাজারে সবাই মিউজিক ভিডিও দেখে। কিন্তু শহরের মানুষের মধ্যে আমি এটা তেমন দেখিনি। যদি খুব হিট হয় তারপর দেখে ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার দিয়ে।
আপনি তো সিনেমাতেও কাজ করেছেন। দুটি মাধ্যমের টেস্ট আপনার জানা। তুলনামূলক অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার করেন?
ঠিক। ‘রানা পাগলা দ্য মেন্টাল’, ‘সম্রাট’ ছবির ক্যামেরাম্যান আমি। ‘সম্রাট’ ছবির একটি গান আমার করা। এছাড়া ‘বাংলাদেশের মেয়ে রে তুই’ এই গানটার ভিডিও আমি বানিয়েছিলেন। মিউজিক ভিডিও আর ফিল্মের কাজ দুটৈ আলাদা। স্টোরি অনুযায়ি ফিল্মে গানটা আসে। আর মিউজিক ভিডিওতে গল্প তৈরি করা যায়। ফিল্ম বড় পর্দার ব্যাপার সেজন্য এটার আলাদার একটা ভাষা আছে। আমার কাছে এটা মনে হয়।