খবরের কাগজ খুললেই প্রতিদিন সকালবেলা মন খারাপ হয়ে যায়। খুন-ধর্ষণ-পিটিয়ে হত্যা-পুড়িয়ে হত্যাসহ নানা ধরনের নেতিবাচক খবর আমাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে। ভেতরে ভেতরে খানিকটা ভীত সন্ত্রস্তও হয়ে পড়ি। নিজের পরিবারের কোনো সদস্য কখন না আবার ওরকম ঘটনার শিকার হয়!
সরকারকে বিপদগ্রস্ত করতে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে এ কথাটা প্রায়শই শোনা যায়।
কখনো মনে হয় কথাটা ঠিক আছে আবার কখনো মনে হয় একটু বেশিই বলা হচ্ছে।
ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর সর্বশেষ উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা বলে রেনু নামে এক নারীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা আমাদের সবার মনকে ব্যথিত করেছে।
ছেলেধরার ঘটনা দেশে হঠাৎ করেই যেন চলে এল। এর আগে পদ্মা সেতু নিয়ে মাথা কাহিনী, কেন যেন ভাবায় আমাদের। এসবই কি একইসূত্রে গাঁথা?
সরকারকে একটু ফাঁপরে রাখার অপচেষ্টা? প্রশ্নটা এসেই যায়।
ছেলেধরা সন্দেহে কারা মারছে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ইউটিউবে চোখ রাখুন, কিংবা পত্রিকায় ছবি দেখুন। কোন বয়সের মানুষ রেনুকে পেটাচ্ছে? তাদের লেবাসটা খেয়াল করুন। এভাবে মানুষকে মানুষ মারতে পারে?
এদের ভেতর অন্য মানুষ নয়, মানুষরূপি জানোয়ারের বসবাসের কথা মনে করিয়ে দেয় আমাদের। এরা কি কারো দ্বারা বা কোনো একটি গোষ্ঠির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে? যে গোষ্ঠী ক্ষমতায় যাবার জন্য পেট্রোল দিয়ে গাড়ি পুড়িয়ে, গাছ কেটে দেশকে অচল করে দেবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। সেই চক্রই যে গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে হত্যা আর পদ্মা সেতুর জন্য মাথা লাগার প্রচার চালিয়ে দেশের মানুষের ভেতর সরকারবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে না- কেউ কি হলফ করে তা বলতে পারবে?
সব মিলিয়ে দেশের ভেতর অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করতে পারলেই যেন ওই দুষ্টচক্রের শান্তি!
এখন আসা যাক, গুজব প্রসঙ্গে। আমাদের গ্রামগঞ্জে যারা একটু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তাদেরকে সহজেই প্রভাবিত করা সম্ভব- এই যে সেতু নির্মাণ করতে গেলে রক্ত লাগে, প্রাণ লাগে এ কথা যুগের পর যুগ ধরে আমরা শুনে এসেছি। আমাদের বাপ-দাদারাও শুনেছে। গ্রামগঞ্জের একশ্রেণীর মানুষ আছে, যারা নানা রকমের কুফরি-কালাম পড়ে নানা রকম ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকে। বিনিময়ে নিজেদের আখের গোছানোর ধান্দা-ফিকির করে।
সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষগুলোই সমাজকে পিছিয়ে নিতে চায়। তাতে করে সমাজে কেউ প্রগতির কথা বলতে সাহস পাবে না। আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে পারবে না। মানুষকে সব সময় ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখায় তাদের যত আনন্দ। সেই মানুষগুলোর ছায়াই কি দেখা যাচ্ছে না বর্তমানে?
যারা রটিয়ে দিচ্ছে পদ্মা সেতুর জন্য সরকার মাথা কেটে নিচ্ছে, একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন। আজকের যুগে কাদের মাথা থেকে এসব চিন্তাভাবনা আসতে পারে? যারা চায় না দেশ এগিয়ে যাক। বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশকে সমুন্নত রাখার সব চেষ্টাকে এরা ব্যর্থ করে দিতে চায়। এরাই একাত্তরে চায়নি দেশটা স্বাধীন হোক। এরা চায়নি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করুক। আর এদের দোসররা ক্ষমতায় যেতে না পেরে নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে এদের মাস্টারমাইন্ডরা ষড়যন্ত্র করে চলেছে। একের পর এক ঘটনার পেছনে গুটিবাজি করে যাচ্ছে। যেকোনো তুচ্ছ ঘটনার পেছনের ইন্ধন যুগিয়ে দেশের ভেতর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মজা নিচ্ছে।
এসব অপশক্তিকে অবজ্ঞা করা বা ছোটো করে দেখা ঠিক হবে না। এরাই একসময় বড় কোনো ঘটনা ঘটিয়ে বসবে। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানাভাবে এরা খুবই নীরবে ছড়িয়ে দিচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার।
আপাতত দৃষ্টিতে গুজব বলে মানুষ পিটিয়ে মারা মনে হলেও এটাকে একটা সংকেত হিসেবেই নেয়া প্রয়োজন। সংকেত এ জন্য বলা যে, ইচ্ছে করলেই একজন মানুষকে পিটিয়ে মারা সম্ভব, এটা বুঝিয়ে দেয়া। আর এই বুঝিয়ে দেয়া মানে দেশে আইনের প্রতি মানুষের কোনো শ্রদ্ধা নেই। তাই মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে, আর তা থেকে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে-এটা প্রমাণ করার চেষ্টা। সেই চেষ্টার খবর মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দেয়া যে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই।
এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের ধরে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দেয়া উচিত। কোনো অবস্থাতেই যেন একজন অপরাধী রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে ছাড়া না পেয়ে যায়। কারণ দেশে এখন নতুন ফ্যাশন শুরু হয়েছে, আর এই ফ্যাশনের সঙ্গে বর্তমান সরকারে সুবিধাবাদীরা জড়িত। দেখা গেল, কেউ একজন বড় কোনো অপরাধ করে বসল, যার জন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে। তখন তার আত্মীয়স্বজন সরকারি দলের বড় কোনো নেতার সঙ্গে তদবির শুরু করে দেয়। তদবিরটা হলো সেই অপরাধীকে সরকারি দলের কোনো একটি অঙ্গসংগঠনের সদস্য হিসেবে দেখানো। তাতে যদি অপরাধের শাস্তি কিছুটা লঘুতে পরিণত করা যায়। বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন হয়ে যায়। এভাবেই অপরাধ করেও অনেকেই পার পেয়ে যাচ্ছে। আর এভাবেই সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। অন্যদিকে একজন অপরাধী শাস্তি না পাওয়ায় আরেকটি অপরাধ করতে উৎসাহি হয়ে উঠছে।
আমরা এ ধরনের সরকারের ভেতরে থাকা সরকারকে ডুবানোর লোকদের মুখোশ উন্মোচন করার খবর পড়তে চাই। আমরা পড়তে চাই অপরাধীদের মুক্ত করে দেয়া বা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া সরকারের ভেতরে থাকা লোকদের উপযুক্ত শাস্তির খবর। টাকার বিনিময়ে যেসব অপশক্তি সরকারি দলে ঢুকে গেছে তাদের বেছে বেছে শনাক্ত করার খবর পড়তে চাই।
আমরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখতে চাই। সেই সোনার বাংলায় কোনো অপরাধী অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে না। গুজব ছড়িয়ে কোনো মানুষকে পিটিয়ে মারা হবে না। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগে কোনো অপশক্তি কৌশলে ঢুকে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারবে না।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)