মৌচাক থেকে মেট্রো, প্লাজা এ আর থেকে বসুন্ধরা। ঢাকার শপিং মলগুলোতে এখন ছাড়ের হিড়িক। নানা নামে ‘সেল’ চললেও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে জমে থাকা পণ্য বিক্রি করে নতুন পণ্য তোলার জন্যই মূলতঃ দোকানে দোকানে ‘ডিসকাউন্ট’-এর সমাহার।
তারা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে শো-রুমগুলোতে এক ধরণের ‘ক্লিয়ারেন্স সেল’ চলছে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি শপিং মল ঘুরে দেখা যায় ফ্যাশন হাউসগুলো তাদের তৈরি নানা রকম পোশাক ‘সেল’ নামে বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করছে। অনেক শো-রুম পহেলা বৈশাখে দেয়া ছাড় এখনও বহাল রেখেছে। আবার কিছু কিছু হাউস ‘সামার সেল’ নামে দিচ্ছে বিশেষ ছাড়।
তবে অনেকেই জানিয়েছেন, নিয়মিত ছাড়ের অংশ হিসেবেই এই ‘মে’ মাসে তারা ক্রেতাদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ফ্যাশন এন্টারপ্রেনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আজাহারুল হক আজাদ বলেন, বাংলাদেশে ‘সেল’ সংস্কৃতিটি এখনো তেমন শক্তভাবে দাঁড়ায়নি। তবে বেশ কিছু দিন ধরে এখানেও এর প্রচলন দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মূলতঃ দু’টি কারণে ফ্যাশন হাউসগুলো এই ছাড় দিয়ে থাকে। প্রথম কারণ হলো, কোনো বিশেষ উৎসব বা ঈদের আগে মার্কেট থেকে পুরনো পণ্য খালি করে নতুন পণ্য উঠানো। আর দ্বিতীয় কারণটি হলো, মন্দার মৌসুমে বিক্রি বাড়াতে ক্রেতাদের আগ্রহ তৈরি।
‘সেল’ দেয়া হলে ক্রেতারাও ভালোই সাড়া দেন বলে জানান আজাহারুল হক আজাদ। তিনি বলেন, ছাড় দেয়া হলে অনেক ক্রেতাই তাতে সাড়া দেন। কারণ দেখা যায় যে ৫০ ভাগ ডিসকাউন্ট দেয়া হলে ক্রেতারা একই দামে দুটি পণ্য কিনতে পারেন। আবার ‘সেল’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাজারে নতুন পণ্য উঠলে বিক্রি শতকরা প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ বেড়ে যায়।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায় বেশিরভাগ শো-রুমেই ‘সেল’ চলছে। বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, ‘সেল’ দেবার কারণে অনেক ক্রেতাই আসছেন। শো-রুমগুলোতে ভিড়ও দেখা গেছে বেশ।
এখন ছাড় দেওয়া ফ্যাশন হাউসগুলোর একটি ‘দেশাল’। বিক্রয়কর্মীরা জানান, পহেলা বৈশাখের সময় তারা পোশাকের উপর যে ছাড় দিয়েছিলেন তা এখনও বহাল আছে। শাহবাগের আজিজ মার্কেট শো-রুমে তারা ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। ছাড় চলবে রমযানের আগ পর্যন্ত।
ফ্যাশান হাউস ‘নন্দন কুটির’ নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে ছাড় দিচ্ছে ৫০ শতাংশের উপরে। তবে এই সুবিধা শুধু আজিজ মার্কেটেই পাওয়া যাচ্ছে। তাদেরও পহেলা বৈশাখে শুরু হওয়া ছাড় রমজানের আগ পর্যন্ত চলবে। এক বিক্রয় প্রতিনিধি দাবি করেন, তারা যে পোশাকগুলো ‘সেল’ দিয়ে বিক্রি করছেন, সেগুলো মাত্র এক পিস করেই আছে।
দেশী ব্র্যান্ড ‘স্মার্টেক্স’ বসুন্ধরা শপিংমল শো-রুমে সকল পোশাকের উপর ছাড় দিয়েছে ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। পহেলা বৈশাখের সময় থেকে তাদের এই ছাড় চলছে। চলবে রমজানের আগ পর্যন্ত।
‘ফ্রিল্যান্ড’ও তাদের বসুন্ধরা শাখায় নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের উপর বিশেষ ছাড় দিয়েছে। ৫০ শতাংশের এই ছাড় মে মাসের শেষদিন পর্যন্ত চলবে। প্রতি বছরই এই সময়ে তারা বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকেন বলে এক বিক্রয়কর্মী জানিয়েছেন।
‘এক্সস্টেসি’র বসুন্ধরা শাখায়ও চলছে বিশেষ ছাড়। বিভিন্ন পোশাকে ৫০ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে যা চলবে পুরো মে মাস জুড়ে।
প্রতিবছর মে মাসে গ্রীষ্মকালীন ছাড় দেয় ‘ইনফিনিটি’। তাদের বসুন্ধরা শাখায় নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় চলছে। চলবে মে মাসের শেষ পর্যন্ত।
শুধু যে নামকরা ব্র্যান্ডগুলোই বিশেষ ছাড় দিচ্ছে তা নয়। ছাড়ের এ মিছিলে যোগ দিয়েছে শপিং মলে ছোট দোকান থেকে শুরু করে নতুন ফ্যাশন হাউসগুলোও।
শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে ‘লাল সাদা নীল হলুদ’ নামের একটি ফ্যাশন হাউস জানিয়েছে, তাদের নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় চলবে ৩১ মে পর্যন্ত।