মন্ত্রীদের অতিকথন নিয়ে মানুষ যেমন হাসছে, তেমন দুর্ভোগের মাত্রাও বাড়ছে। রেলমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসলে কী বুঝাতে চাচ্ছেন? আর দেশকে, দেশের মানুষকে ও মন্ত্রী পরিষদকে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন? কেউ বলে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের জন্য রেল দুর্ঘটনা, কেউ ২০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ২৫০ টাকা হওয়াতেও বলে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে৷ আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নারীদের যৌন নির্যাতনের শিকার ও মৃত অবস্থায় সৌদি আরব থেকে ফেরার সংখ্যা খুবই নগণ্য সংখ্যা। আবার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে ৫৩ জন নারী আত্মাহুতি দিয়েছেন, তাদের মৃতদেহ সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেছে, এটাও নাকি খুবই নগণ্য ব্যাপার। অন্যদিকে সচিব বলেছেন, সৌদি আরবে নাকি যৌন নির্যাতন বলতে কিছু হচ্ছে না! ওখান থেকে নারীরা দেশে ফিরেই নাকি যৌন নির্যাতনের গল্প ফাঁদছে।
একের পর এক রেল দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে কিন্তু নির্বিকার মন্ত্রণালয়৷ এই যোগাযোগ মাধ্যমটিকে জনবান্ধব হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে উদ্যোগ নিয়ে ২০১১ সালে পৃথক রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করে। এর আগে আমাদের রেল যোগাযোগটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল৷ কী লাভ হল রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনে? কী ঘটল মৌলভী বাজার, কসবা ও সিরাজগঞ্জে? একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা৷ আর রেল মন্ত্রনালয় এর দায় স্বীকার না করে দায় এড়াতে কখনো দুর্ঘটনার জন্য যাত্রীদের, কখনো কুয়াশাকে দায়ী করছেন৷ কসবার দুর্ঘটনার রক্ত মুছতে না মুছতেই দুর্ঘটনা ঘটল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়৷
কসবার দুর্ঘটনার দায় হিসেবে রেল পরিচালক দায়ী করলেন কুয়াশাকে। আর সিরাজগঞ্জের বেলায় রেলসচিব বললেন: রেললাইনের ত্রুটির কারণেই সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়েছে৷ এ কথা সত্য হলে তবে এ ত্রুটির দায় কার?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে৷ এমন দুর্ঘটনায় অতীতে আরও বহুবার ঘটেছে ও প্রাণহানি ঘটেছে৷ কিন্তু এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কি কর্তৃপক্ষ নূন্যতম কোন ভূমিকা নিয়েছে কখনও? রেলমন্ত্রী মৌলভীবাজারের রেল দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছিলেন যাত্রীদেরকে আর এবার রেল পরিচালক দায়ী করলেন কুয়াশাকে! ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোররাত পৌনে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৯ জন এবং কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে ২ জন ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ জন৷ কেন ঘটলো এই দুর্ঘটনা?
সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছে, অটো ব্রেকে ইট দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন তূর্ণার চালক ও সহকারী। প্রতিবেদনে বলা হয়, তূর্ণা নিশীথার চালক (লোকোমাস্টার) তাহের উদ্দিন ও সহকারী অপু-দে অটো ব্রেকে ইট দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবায় উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাদের এমন গাফিলতির কারণে রেলওয়ের স্মরণকালের ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন৷
ট্রেন অটো ব্রেক সিস্টেমে চলে। ট্রেনটি তখনই চলে যখন ওই ব্রেক সিস্টেমে পা বা অন্য কিছু দিয়ে চেপে ধরা হয়। ব্রেকে চাপ না দিলে ট্রেন চলে না। তূর্ণার চালক ও সহকারী ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবায় পৌঁছার আগেই ব্রেকে ইট দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুমন্ত চালক সিগন্যালের খবর কিভাবে নেবে?
অন্যদিকে রেলওয়ের মহাপরিচালক বলছেন: ঘন কুয়াশার কারণে চালক সিগনাল দেখতে পায়নি৷ তিনি কেন মূল দায়কে এড়ালেন? আগেরবার রেলমন্ত্রী বলেছিলেন অতিরিক্ত যাত্রী উঠার কারনেই সেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল৷ আর এখন রেলওয়ের পরিচালক বললেন, কুয়াশার জন্যই এই দুর্ঘটনা৷ এই দুর্ঘটনার জন্য কুয়াশা দায়ী৷ এভাবে কেন বারবার মূল দায়কে এড়িয়ে চলা হচ্ছে? পেঁয়াজের এই সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধিতেও নির্বিকার মন্ত্রণালয়৷ এদিকে টাকা নয়, পেঁয়াজ ভিক্ষা চাচ্ছেন ভিক্ষুকরা৷
মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে পেঁয়াজ৷ বেড়েই চলছে এর দাম। সংবাদপত্রে লিখেছে,
গত দু’দিনের ব্যবধানে ১৪০ টাকার পিয়াজ এখন ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গফরগাঁওয়ের আড়তদাররা যখন পাইকারি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন, তখন খুচরা বাজারে ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজের কেজি। এরপর দাম অবশ্য ২৫০ টাকাও ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাজারে দেখা গেছে দু’জন ভিক্ষুক টাকা চাইছেন না, টাকার পরিবর্তে পেঁয়াজ ভিক্ষা চাইছেন তারা।
পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা ইসলামের সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় দুই নারী ভিক্ষুক এসে বলেন: ‘আল্লারওয়াস্তে দুইডা পেঁয়াজ ভিক্কা দেনগো বাবা।’
এসময় তিনি দুই ভিক্ষুককে দুই টাকা করে দিতে চাইলে তারা টাকার বদলে পেঁয়াজ চান। পরে একটি করে পেঁয়াজ দিয়ে তাদের বিদায় করেন পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা৷ এসব ঘটনাতেও কি বাণিজ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর চোখ খুলে না? তারা বলছেন, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে!
৮ হাজার নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবিত ও ৫৩ জন লাশ হয়ে ফিরে এসেছে তবু নির্বিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ তাদের এমন বক্তব্যের কি কোনো জবাবদিহিতা নেই? ১৪ দলের নেতা রাশেদ খান মেননকে ১৪ দল হতে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে৷ কারণ তিনি ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত৷ এসব মন্ত্রীরাও তো মন্ত্রী পরিষদের অন্তর্ভূক্ত৷ তবে কেন তাদেরকে মন্ত্রী পরিষদ থেকে এসব বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়া হচ্ছেনা? তারা কি মন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের জন্য বিড়ম্বনার ও দেশের জন্য সর্বনাশের কারণ হচ্ছেন না?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)