দখিনা হাওয়া। ঝরা পাতার শুকনো নুপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন এ বসন্তেই। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানেই একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। কোকিলের ডাক।
গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীর গতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলা জানান দেয় নতুন কিছুর। শীতে খোলসে ঢুকে থাকা বনবনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠে। পলাশ, শিমুল গাছে লাগে আগুন রঙের খেলা।
প্রকৃতিতে চলে মধুর বসন্তে সাজ সাজ রব। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুন গুন করে অনেকেই গেয়ে উঠবেন- ‘মনেতে ফাগুন এলো…’ বা ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত…’ কিংবা হাল সময়ের ‘বসন্ত এসে গেছে…’!
বসন্তকে আগমন জানাতে রাজধানীর ফুলের দোকান, বিপণিবিতান, এমনকি অন্দরের সাজসজ্জায় লাল-হলুদের আভা। বসন্তবরণে প্রস্তুত রেস্তোরাঁগুলোও। এই দিনটিকে ঘিরে বসন্ত প্রেমীদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আর এবার বসন্ত দিনের সঙ্গে একই দিনে হচ্ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস!
ভোর থেকেই ঋতুরাজ বসন্ত উদযাপন চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়। শুক্রবার সকালে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে চারুকলায় বকুলতলায় বসন্ত উৎসবের উদ্বোধনী পর্ব শুরু হয় শাস্ত্রীয় সংগীতের মাধ্যমে। সুরের মূর্ছনার আবেশ ছড়িয়ে পড়ে পুরো বকুলতলায়। একে একে পরিবেশন করা হয় গান, আবৃত্তি এবং নৃত্য।
নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে চারুকলা প্রাঙ্গণ। চারুকলা জুড়েই যেন লেগেছে হলুদ রঙের ছোঁয়া। নারীরা নিজেদের বসন্তের সাজে সাজাতে খোপায়-গলায়-মাথায় পরেছে গাঁদা ফুলের মালা। হাতে রেশমি চুড়ি আর পরনে বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি।
বসন্ত উপলক্ষে পুরুষদের পরনেও শোভা পাচ্ছে রঙিন পাঞ্জাবি, ফতুয়া। সব মিলিয়ে প্রকৃতি আর মানুষ বসন্তের আমেজে মিলেমিশে একাকার। তারা ঘোষণা দিচ্ছে আজ বসন্ত।
এছাড়া রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারের বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবর ও উত্তরার ৭ নম্বর পার্কের মাঠে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠান চলছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে বিকাল থেকে আয়োজন থাকছে মেগা কনসার্টের। এরমধ্যে বিকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-তে চিরকুট, নেমেসিস, অ্যাভয়েডরাফা, আরবোভাইরাস ও অন্যান্য ব্যান্ডের পরিবেশনা উপভোগ করতে পারবেন সংগীতপ্রেমীরা।