মধ্যপ্রাচ্যের কোনো এক দেশ থেকে গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার অর্থ এসেছিল। জেএমবি নেতা সারোয়ার জাহানের কাছে ৩৯ লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন শরীফুল ও রিপন।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে রাহাত ওরফে সাইফুল্লাহ ওরফে নাহিদ ওরফে আবু সোলাইমানকে (২৭) গ্রেপ্তার করে র্যাব।
শরীফুলের নেতৃত্বে হলি আর্টিজানের হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ
২০১৫ সালে শরীফুল ইসলামকে জেএমবির মিডিয়া শাখায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়। যেহেতু শরীফুল ইংরেজী বিভাগে লেখাপড়া করত তাই তার ইংরেজী অনেক ভাল ছিল।তাই মিডিয়া শাখার নানা কাজ কর্ম যেমন বিভিন্ন অনুবাদ ও সাংগঠনিক কাজ সম্পন্ন করত। এছাড়াও যেকোনো হামলার বিষয়ে হামলাকারীদের নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যুক্ত থাকত।
হলি আর্টিজানের হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ হয়ে শরীফুলের নেতৃত্বে। তাদের যমুনার চর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়গুলোতে গুলশানের হামলাকারীদের দেখভালেরও দায়িত্ব ছিল শরীফুলের ওপর। হামলার ঘটনার পরিকল্পনা ছাড়াও প্রত্যক্ষভাবে অর্থায়ন সংগ্রহ ও হামলাকারীদের নির্বাচন করার ক্ষেত্রে শরীফের বিশেষ ভূমিকা ছিল।
নব্য জেএমবিতে যেভাবে জড়ায় শরীফুল
অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আহসান হাবীব শোভনের মাধ্যমে নব্য জেএমবিতে জড়িয়ে পড়েন শরীফুল। পরে এই শোভনের মাধ্যমেই নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর সঙ্গে শরীফুলের পরিচয় হয়।
আইএসের মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন শরীফুল
শরীফুল আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস)মতাদর্শের ছিলেন। তিনি উগ্রবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। শরীফুল রাজশাহী কেন্দ্রিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সমমনাদের নিয়ে গঠিত চরমপন্থী উগ্রবাদী গ্রুপে জড়িয়ে পড়েন। এতে প্রত্যক্ষভাবে তাকে সহায়তা করেন শোভন। গ্রুপটির সদস্যরা অনলাইনে তাদের মতবাদ প্রচার করত।
হলি আর্টিজান হামলার টাকা পাঠান শরীফুল
আত্মগোপনে থেকেই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার টাকা পাঠান শরীফুল।এ সময় মামুনুর রশীদ রিপন তার সাথে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ই তারা ৩৯ লাখ টাকা পাঠান, যা গুলশান হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হামলা হওয়ার আগে ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিমকে হত্যার পর আত্মগোপনে চলে যান শরীফুল।
হলি আর্টিজান হামলার আগে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
জেএমবির আমির সারোয়ার জাহান ও তামিম চৌধুরীকে একত্র করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল শরীফুল। ২০১৫ সালে মামুনুর রশীদ ওরফে রিপনের বগুড়ার বাসায় সারোয়ার, তামিম, সাদ্দাম, মারজান ও সাকিব মাস্টার বৈঠক করেন। সেখানে শরীফুলও উপস্থিত ছিলেন।
হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার একটি আস্তানায় সারোয়ার, তামিম ও শরীফুলসহ বেশ কয়েকজন নেতা বৈঠক করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকায়ও তাদের কয়েকটি বৈঠক হয়। সব মিটিংয়েই শরীফুল উপস্থিত ছিল।
কে এই শরীফুল
শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ১৯৯১ সালে রাজশাহী জেলার বাগমারা থানা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাগমারা পাইলট হাইস্কুল থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি এবং রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পাশ করে। দুই পরীক্ষাতেই তিনি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-ফাইভ পেয়েছিলেন। ২০১০-১১ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। শরীফুলের বাবার নাম মো. আব্দুল হাকিম।