পাকিস্তানের সোশাল মিডিয়া তারকা কান্দিল বালুচ হত্যার তিন বছর পর তার আপন ভাই মুহাম্মদ ওয়াসিমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।
শুক্রবার পাকিস্তানের একটি আদালত ওয়াসিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় এবং এই হত্যার সঙ্গে অভিযুক্ত ছয়জনকে বেকসুর খালাস দেয়, যার মধ্যে ধর্মীয় পণ্ডিত মুফতি আব্দুল কাভীও রয়েছেন।
বিবিসি বলছে, ওয়াসিম তথাকথিত পারিবারিক সম্মানহানির দায়ে ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই তার আপন বোন কান্দিল বালুচকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। তখনই তিনি বোন হত্যার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সেই সময় তিনি পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে বোনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছিলেন।
তিনি নিজের বোনের আপত্তিকর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড দেওয়া থেকে লজ্জিত ও অপমানিত হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, বোনের আচরণে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে হত্যা করি। এর জন্য আমার কোনো অনুশোচনা নেই।
ওয়াসিমের আইনজীবী সরদার মাহমুদ এএফপিকে বলেছেন, আদালত শুক্রবার তার মক্কেলকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে৷ তবে আশা করছি ওয়াসিম উচ্চ আদালতে খালাস পাবেন৷
কান্দিলের মা আনোয়ার মাই আশা করেছিলেন তার ছেলে খালাস পাবেন৷ তিনি বলেন, সে নির্দোষ, সে আমার মেয়ে ছিল, আর সে আমার ছেলে৷
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেকে খোলামেলাভাবে প্রদর্শন করে পরিবারের সম্মানহানী ঘটনোয় কান্দিলকে মেরে ফেলাটা আবশ্যক হয়ে পড়েছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছিলন ওয়াসিম৷
পরিবারের অমতে বিয়ে, প্রেম এমনকি ধর্মীয় অনুশাসনের বরখেলাপ করা- এমনসব ‘অপরাধে’ আপনজনদের হাতে পাকিস্তানে প্রতিবছর প্রাণ হারান অনকে নারী৷ কান্দিল বালুচও সেই ‘অনার কিলিং’-এরই শিকার হন৷
কান্দিল বালুচ ২০১৪ সালে নিজের একটি ‘পাউটিং’ ভিডিও আপলোড করে রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় বিখ্যাত হয়ে ওঠেন৷ এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে নিজেকে আবেদনময় রূপে উপস্থাপন করেন এবং সাহসী বক্তব্য দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন৷
তিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম সোশাল মিডিয়া তারকা। লাহোরের দক্ষিণ পশ্চিমে প্রায় ৪০০ কিমি দূরবর্তী ফুজিয়া আজিমে এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম।
তিনি পাকিস্তানের ‘কিম কার্দাশিয়ান’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেন। পাকিস্তানের সামাজিক রক্ষণশীল কঠোর নিষেধাজ্ঞাগুলি গুড়িয়ে দিয়ে চলতে শুরু করেন তিনি।
সোশাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের পণ্যপ্রতিষ্ঠানগুলো তাকে মডেল বানায়, বড় অঙ্কের অর্থ নিয়ে তিনি মিডিয়া জগতে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন।
টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলার সময় পাকিস্তান ভারতকে হারাতে পারলে নগ্ন হয়ে নাচার ঘোষণা দেন তিনি৷ ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যায় পাকিস্তান৷ তখন ইউটিউবে আরেকটি ভিডিও আপলোড করেন কান্দিল, নগ্ন হয়ে নাচতে না পারার জন্য ওই ভিডিওতে তাকে কাঁদতে দেখা যায়৷