জামদানী শাড়ি ও বাউল গানের পর ইউনেস্কো’র ‘ইনট্যানজিবল’ বা স্পর্শাতীত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে পহেলা বৈশাখের বর্ণাঢ্য আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রা। তবে এই প্রাপ্তি নিয়ে বসে থাকলে পরিণতি কী হতে পারে তাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এবারের তালিকায়।
গুরুত্ব হারিয়ে কিংবা ঐতিহ্য ধরে রাখতে না পেরে এবার ইউনেস্কো’র বিপন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তালিকায় নাম লিখিয়েছে চারটি ঐতিহ্য। বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় আন্তঃদেশীয় কমিটির একাদশ বৈঠকের পর প্রকাশিত তালিকায় এই ঐতিহ্যগুলোকে এখনই রক্ষার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছড়িয়ে দিতে আধুনিক পর্যটনবান্ধব দেশগুলো প্রচারণাকে প্রাধান্য দিচ্ছে । ইউনেস্কো তালিকায় থাকা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দেশগুলোতে এসবখাতে জনসম্পৃক্ততা এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশের প্রচলন আছে। তাই দেশের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলোর মতো এখন থেকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে পর্যটনমুখী প্রচারণা চালানোর সময় এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ট্যুর অপারেটর’স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রাফিউজ্জামান বলেন,‘ ইউনেস্কো তালিকায় স্থান পাওয়ার আগে থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে বহু বিদেশী পর্যটক আসছে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় এখন অনেক বিদেশীমুখে দেশী রঙ আর পোশাক-সাজগোজ সবার নজর কাড়ে। নববর্ষে বিদেশী পর্যটকদের জন্য ৩ দিনের ট্যুর প্যাকেজ থাকে সাধারণত। রমনা বটমূল থেকে বিদেশী পর্যটকদের নিয়ে আসা হয়মঙ্গলশোভাযাত্রায়’।
এই বর্ণিল আয়োজন ইউনেস্কো’র স্বীকৃতি পাওয়ায় এবার পর্যটক আকর্ষণে নতুন মাত্রা যোগ হবার সম্ভাবনা দেখছেন জানিয়ে তিনি বলেন,‘ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা না থাকলে সামনে বছর বৈশাখে বিদেশী পর্যটক সংখ্যা বাড়বে। এবারের প্রচারণাতে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে আরও ভালোমত তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি আমরা’।
মঙ্গল শোভাযাত্রার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাড়তি পাওয়া। তবে একটি অনুষঙ্গের চেয়ে ‘পহেলা বৈশাখ’ বা বর্ষবরণের উৎসবটি ইউনেস্কো স্বীকৃতি পেলে আরও ভালো হতো বলে মনে করেন ট্যুরিজম ডেভেলপার’স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান জামিউল আহমেদ।
তিনি বলেন,‘পর্যটন ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে মঙ্গলশোভা যাত্রা এখন একটা প্রোডাক্ট। এজন্য দেশের বাইরে ব্যাপক প্রচারণা-ক্যাম্পেইন এর দরকার। তবে মূল প্রচারণার দায়িত্বটা সরকারের, পর্যটন কর্পোরেশনের’।
দেশের অগ্রসরমান পর্যটন শিল্পে মঙ্গল শোভাযাত্রার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকে বড় অর্জন বলে মনে করেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন,‘ ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতিতে আমরা অনুপ্রাণিত। দেশের বর্ষবরণের আয়োজন এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ট্যুরিস্ট প্রোডাক্ট হলো। বাংলাদেশে বেড়াতে আসা বিদেশীদের জন্য নিঃসন্দেহে এই সংবাদ বাড়তি আকর্ষণ যোগাবে। এখন সরকার ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব হবে এই অর্জনকে দেশের বাইরে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা। এজন্য সভা-সেমিনার, ভ্রমণ নিয়ে প্রকাশিত পুস্তিকায় মঙ্গল শোভাযাত্রার বর্ণিল আনন্দকে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের নতুন প্রজন্মকে শেকড়ের টানে বছরে একবারের জন্য হলেও দেশে নিয়ে আসার একটা উপলক্ষ্য হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়া হবে’।