বেসরকারি একটি টেলিভিশনের টকশো’তে একজন সাংবাদিক নারী সাংবাদিককে (মাসুদা ভাট্টি) কটূক্তি করায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন: যদি তার বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে আরও মামলা করা হয় তাহলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কর্মরত নারী সাংবাদিক প্রশ্ন রাখেন: ঐক্যফ্রন্টের একজন নেতা প্রকাশ্যে একজন নারী সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় কটূক্তি করেছেন। আমরা দেখেছি সকালে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, বিকেলের মধ্যে তিনি কোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে বের হয়ে এসেছেন!
‘মাঝখানের পুরোটা সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব ছিল। এমনকি আপনার দলের এবং আপনার সরকারের মন্ত্রিসভার নারী সদস্যরাও নীরব ছিলেন। আপনি বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন?’
এমন জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন: ‘মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল। কিন্তু ওই ভদ্রলোক সকাল হওয়ার আগেই উচ্চ আদালতে আশ্রয় নিয়ে বসে ছিলেন। বিচার বিভাগে তো আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলা করতে পারে না, গ্রেপ্তারও করতে পারে না। সেখানে তিনি আগাম জামিন চেয়েছেন, কোর্ট তাকে জামিন দিয়ে দিয়েছে। যেখানে সারা বাংলাদেশ, সারা বিশ্ব দেখেছে প্রকাশ্যে একজন নারী সাংবাদিকের প্রতি কিভাবে কটূক্তি করা হয়েছে। সেখানে কিভাবে কোর্ট….!!’
কোর্ট জামিন দিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু করার থাকে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন: কোর্ট যদি জামিন দেয় আমাদের কিছু করার নেই। সেক্ষেত্রে আমি বলবো, আমাদের নারী সাংবাদিকরা আপনারাই বা কী করছেন? এক বা দুই মামলায় নাহয় জামিন পেয়েছে, আরও তো মামলা হতে পারে। এর প্রতিবাদও তো হতে পারে। আপনারা প্রতিবাদ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। আপনারা মামলা করেন, আমরা যা করার করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: তিনি যে শিবিরের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন সেটা খুঁজে বের করেন। প্রমাণ তো আছেই। ভিডিও আছে সে শিবিরের মিটিংয়ে গিয়ে বক্তব্য দেওয়ার। এরপরেও সে জামায়াত সমর্থন করে না, এটা কিভাবে বলবে? এটাই তো প্রমাণ, এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী লাগে?
‘তারপরও এটাতে মামলা হয় না। বিচার বিভাগ তো ফ্রী, আমাদের জজ সাহেবরা যেমন বিবেচনা করেন তেমন হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মইনুল নামা
সে কে? আপনারা জানেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় সে পাকিস্তানি বাহিনীর দালালি করে বেড়াতো। ইত্তেফাক থেকে সিরাজুদ্দীন হোসেন সাহেবকে তুলে নেয়া হয়েছিল। এজন্যও সে কম দায়ী ছিল না। ৭৫’এ জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মোশতাক একটি দল করেছিল, আপনাদের মনে আছে? সেই দলের সঙ্গেও এই মইনুল হোসেন যুক্ত ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত হত্যাকারী, খুনিদের নিয়ে সে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিল। তার রাজনৈতিক দলের সঙ্গী কারা? জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিরা। তার কাছ থেকে আর ভালো ভদ্র ব্যবহার কী পাবেন?
নিজে খুন করে ভাইকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রেও মইনুল জড়িত ছিলেন বলে জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন: শুধু তাই না, সে ইত্তেফাকে একটি মার্ডার করে। নিজে মার্ডার করে নিজের ভাইকে ফাঁসানোর প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। এমনকি কাকরাইলের তার যে বাড়ি সেটা নিয়েও ঝামেলা আছে। রাষ্ট্রের সঙ্গে একটি মামলা রয়েছে। সাংবাদিকরা আপনারা খুঁজে দেখতে পারেন। উনার ‘গুণের’ কোন শেষ নেই।
মইনুল হোসেনের পারিবারিক ইতিবৃত্ত তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন: আপনারা অনেকেই জানেন না, উনি গিয়েছিলেন ব্যারিস্টারি পড়তে। সেই সময় ব্যারিস্টারি পড়তে যাওয়া চাট্টিখানি কথা না। তোফাজ্জল হোসেন মানিক কাকা তাকে ব্যারিস্টারি পড়তে পাঠালেন। আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক ছিল। যখন যা লাগতো, সহযোগিতা হত। তা ব্যারিস্টারি পাস করে আসার পর তিনি সাহেব হয়ে গেলেন।
‘‘মানিক কাকা সব সময় পান্তা ভাত খেতেন, পান্তা ভাত খেতে খুব পছন্দ করতেন। ছেলে আসলেন সাহেব হয়ে। তিনি বাংলাদেশের খাবার আর খেতে পারেন না। উনি সাহেবি খাবার খাবেন, খেতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই চাচি এসে মায়ের (ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) কাছে খুব আফসোস করতেন। বলতেন, এখন আমি কী করি? আমার ছেলে ইংরেজি খাবার খাবে! তাকে ইংরেজি খাবার খাওয়ানোর জন্য আবার আলাদাভাবে বাবুর্চি রাখতে হল। সেই যুগে ১০০ টাকা দিয়ে মানিক কাকাকে বাবুর্চি রাখতে হয়েছিল!’’
মইনুলের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে প্রধানমন্ত্রী কাকের পেখম লাগিয়ে ময়ূর হওয়ার অপচেষ্টা হিসেবে মন্তব্য করেন। সেই সঙ্গে বলেন: ইংরেজি খাবার খেয়ে তিনি ইংরেজ হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। খাওয়া শিখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ইংরেজদের ভদ্রতা শিখে আসেননি, কথা বলাটা শিখে আসেননি। এটা হলো বাস্তবতা, এই হল সেই লোক।