নিস্তব্ধ দর্শকদের সামনে একজনের সঙ্গে কথা বলছে বাদামী চুলের সুন্দরী রোবট ইরিকা। সে বলছে, আপনি প্রকল্প ব্যবস্থাপনার উল্লেখ করেছেন, আপনি কি আমাকে আরও আরো বিস্তারিত বলতে পারেন?
নিয়োগকর্তার ভূমিকা পালনকারী ইরিকা কথোপকথন নাও বুঝতে পারে, কিন্তু তাকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ও সেই মূল শব্দগুলো ধরে ফেলতে পারে। রোবটকে আরও মানুষের মতো দেখতে করা বা তাদের কাজকর্ম আরও মানুষের মতো করে তোলা গেলেই তারা সহজে মানুষের জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠবে।
এনডিটিভি জানায়, সম্প্রতি মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ইন্টেলিজেন্ট রোবটের ওপর বার্ষিক আন্তর্জাতিক বার্ষিক সম্মেলনে ঘটে এই ঘটনা।
ইরিকা এবং তার মতো অন্যরা হলো রোবোটিক্স গবেষণার একটি প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। মানুষের মতো দেখতে রোবট আমাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠবে অচিরেই, এমনটি জানান সম্মেলনে উপস্থিত গবেষকরা।
ইরিকার মতো অন্য রোবটরাও জাপানে অভ্যর্থনাকারী হিসেবে কাজ করছে। দৈনন্দিন জীবনে রোবটদের ব্যবহার মানুষের কর্মসংস্থান যে কমিয়ে দেবে তা নিয়ে সংশয় নেই।
মানুষ আর রোবটের সম্পর্ক বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জাপানের মনোবিজ্ঞানী হিরোকো কামিদে বলেন, আজ হোক বা কাল, রোবট আর মানুষ একই সঙ্গে বাঁচবে পৃথিবীতে।
পরিবারে বা কর্মস্থলে রোবট ব্যবহার হলো ‘বহুমুখী মেশিনের মতো যে আলাপচারিতা করতেও সক্ষম’। বিষয়টি যে কতখানি বিপজ্জনক হতে পারে তা নিয়েই কথা বলেন ফ্রান্সের সিএনআরএস বৈজ্ঞানিক ইনস্টিটিউটের রোবোটিক্স বিভাগের প্রধান ফিলিপ সোর্স।
তিনি বলেন, মানুষ, কিন্তু আবার অতখানিও মানুষ নয়! কোন অজানা বা ভালো প্রোগ্রামিং না করা কাজ রোবট করতে পারবে না। তারা কাজ বন্ধ করে দেবে।
এই কারণে মানুষ “মানব দেহের মতো মলিকিউলার সিস্টেম সম্পন্ন” রোবট বেশি পছন্দ করছেন। উদাহরণস্বরূপ বস্টন ডাইনামিক্স এর তৈরি হিউম্যান রোবট অ্যাটলাস। এটি বিভিন্ন ধরণের পৃষ্ঠতলের উপর দৌঁড়াতে পারে, আবার উল্টো ডিগবাজিও দিতে পারে।
ভবিষ্যতে এসব রোবটের সম্ভাব্য ব্যবহারের শঙ্কা থেকেই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের অর্থায়নে তৈরি অ্যাটলাস ভবিষ্যৎ যুদ্ধ বিগ্রহে ‘‘হত্যাকারী রোবট” হয়ে উঠতে পারে।
আবার জাপানি গবেষক মাশাহিরো মরির “ভুতুড়ে উপত্যকার” তত্ত্ব তৈরি হয় ১৯৭০ সালে। রোবটের শারীরিক প্রতিক্রিয়া আমাদের পরিচিত হলে তবেই আমরা ইতিবাচকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাই, কিন্তু যদি তারা বেশি মাত্রায় আমাদের মতই দেখতে হয়ে যায়, তবে তা আমাদের বিরক্তির কারণ হবে।