চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভয়াবহ অর্থ সংকটে গয়না বিক্রি করেও কূল পাচ্ছে না ভারতীয়রা

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় ভারতে লাখ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, দারিদ্র্যতা ঘুচাতে নিজেদের সকল সম্ভাব্য ক্ষেত্র থেকে ঋণ নেওয়া শেষ, সকল সম্বল বিক্রি করাও শেষ, বাকি ছিলো নিত্য ব্যবহৃত স্বর্ণের গয়না। বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন হিসেবে এখন সেই গয়না বিক্রি করে দিচ্ছেন ভারতীয়রা।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে এমনটাই সংবাদ প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ।

প্রতিবেদন অনুসারে, ভাইরাসের নতুন ভয়াবহ ধাক্কায় গ্রামীণ ভারতের অর্থনীতি এবং মানুষের উপার্জনের ওপর মারাত্মক বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলেছে। গ্রামীণ অঞ্চলে ব্যাংকের সংখ্যা কম থাকায় মানুষজন প্রয়োজনের সময় সোনার ওপর নির্ভর করে। এখন সেই স্বর্ণালঙ্কারও বিক্রি করে দিচ্ছেন স্থানীয়রা। তা বিক্রি করেও নিজেদের ঋণ শোধ করতে পারছেন না।

পল ফার্নান্দিস, ৫০ বছর বয়স্ক ক্রুজ লাইনারের ওয়েটার, যিনি চাকরি হারানোর পর সন্তানদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে স্বর্ণ জামানত দিয়ে ঋণ নিয়েছিলেন। এবছর  চাকরি যোগাড়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এবং নিজ উদ্যোগে ব্যবসা শুরুর ব্যর্থ চেষ্টা চালানোর পর পরিবারের ব্যয় মেটাতে সেই স্বর্ণ বিক্রি করে দিয়েছেন।

উপকূলীয় রাজ্য গোয়ার নিজ শহর থেকে তিনি ব্লুমবার্গকে বলেন, যে স্বর্ণ জামানত দিয়ে ঋণ নিয়েছিলাম, এখন তা বিক্রি করে সমস্তটাই শেষ করে দিয়েছি।

লন্ডন ভিত্তিক মেটাল ফোকাস লিমিটেডের পরামর্শক চিরাগ শেটের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গ বলছে, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার প্রভাবে আর্থিক সংকট ভয়াবহভাবে বাড়ায় ২০২০ সালের তুলনায় গ্রাহকরা জামানত রাখা সোনার গয়না বিক্রি বাড়িয়ে দিয়েছে, এটা আন্তর্জাতিক বাজারের একটা বড় সংকট।

তিনি বলছেন, ‘আপনি গত বছর একটি বড় রকমের আর্থিক সমস্যায় পড়েছিলেন এবং আপনার সোনার গয়না জামানত রেখে ঋণ নিয়ে মুক্তি পেয়েছেন। আর এখন তৃতীয় ধাক্কা নিয়ে আর্থিক সমস্যা তৈরি বাড়ছে এবং লকডাউনের কারণে চাকরিও হারাচ্ছে। যা মানুষের মাঝে দ্বিগুণ সংকট তৈরি করেছে।

সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর ও কৃষক নিজেদের স্বর্ণ জামানত দিয়ে ঋণ নিয়েছেন তাদের ঋণ ফেরত দেওয়ার মতো কোনো অবলম্বন থাকে না। ফলে সেই স্বর্ণ বিক্রিই তাদের একমাত্র উপায় হয়ে যায়। কিন্তু তারপর তাদের অবলম্বন কী থাকে-এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতে ২০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ হয় দরিদ্র হয়ে পড়েছে কিংবা দেউলিয়াত্ব বরণ করেছে। তারা দৈনিক ন্যূনতম মজুরিও আয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

ব্রুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লকডাউনের ফলে দরিদ্র মানুষ ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে, চাকরি হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ, অর্থনীতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছেন।

ভারত করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। দেশটিতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৩ হাজার ৯০৭ জন এবং মারা গেছে ৪ লাখ ৮ হাজার ৭৮২ জন মানুষ। এখনো এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। সেই সাথে দেশটিতে বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা।