অসময়ে বৃষ্টি আর প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্প্রসারিত ৩৬টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ।
সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই ভোট বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি নির্বাচনে মোট প্রার্থী সংখ্যা ৩৮২ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৫ জন। দুই সিটিতে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিল পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩১০ জন। উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ৬টি করে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিল পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৬৯ জন।
এর মধ্যে ডিএনসিসির ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১১৬ জন, সমসংখ্যক ওয়ার্ডে ডিএসসিসি’র সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১২৫ জন। অন্যদিকে ডিএনসিসি’র ৬টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ৪৫ জন এবং ডিএসসিসিতে ২৪ জন।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও কাউন্সিলর পদে দলীয় স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ডিএনসিসি উপনির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি থেকে শাফিন আহমেদ, বাঘ প্রতীক নিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি) থেকে শাহিন খান, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির(এনপিপি) আনিসুর রহমান দেওয়ান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নর্থ সাউথ প্রপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহিমের প্রতীক টেবিল ঘড়ি।
ঢাকা উত্তর সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি, মোট ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ২৯৫টি এবং ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৪৮২টি। এতে মোট ভোটার ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩০ জন এবং নারী ভোটার ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯১ জন। মেয়র পদে পুরো উত্তর সিটিতে নির্বাচন হচ্ছে। আর সাধারণ ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে সম্প্রসিারিত ১৮টি ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টিতে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হচ্ছে।
উত্তর সিটির সম্প্রসারিত ১৮টি সম্প্রসারিত ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ৬ ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ২৪৩টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৪৭২টি। মোট ভোটার ৫ লাখ ৯০ হাজার ৭০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৮৫ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৯২ হাজার ৪২০ জন।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাধারণ ১৮টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ৬টি ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ২৩৫টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ২৫২টি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৯৭ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ২৩৮ জন।
উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচন উপলক্ষে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা থেকে ১ মার্চ সকাল ৬ টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও ডাক বিভাগের গাড়ি এই নির্দেশনার বাইরে থাকবে।
দুই সিটিতে টহল শুরু করেছে ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি কোস্ট গার্ড ও র্যাব দায়িত্ব পালন করছে। ডিএনসিসিতে ২৫ প্লাটুন বিজিবি এবং ডিএসসিসিতে ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও দুই সিটির মধ্যে ডিএনিসিসিতে চার প্লাটুন এবং ডিএসসিসিতে তিন প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
দুই সিটির প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৩ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন আছে। এর মধ্যে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ৭ জন অস্ত্রধারী পুলিশ ও আনসার এবং ১২ জন আনসার সদস্য আছে লাঠি হাতে।
মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যরা ভোটের দুই দিন আগে, ভোটের দিন এবং ভোটের পরের দিনসহ মোট চার দিন মাঠে থাকছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোট কেন্দ্রের বাইরে র্যাব, পুলিশ ও কয়েক প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মাঠে আছে।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আড়াই বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ডিএনসিসিরি মেয়র আনিসুল হক লন্ডনে মারা যান। এতে আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে দুই সিটিতে ২০১৭ সালে ১৮টি করে ৩৬টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর গত ২২ জানুয়ারি দুই সিটির তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি মেয়র ও দুই সিটির ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।