ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার পথে ট্রলারডুবির এক মাস পরও খোঁজ মেলেনি বাংলাদেশী যুবক সোহাগের। জীবিত মানুষটির আশা ছেড়ে মরদেহ দাফন করার সান্তনাটুকু থেকেও বঞ্চিত তার পরিবারে এখন শুধুই আহাজারি।
লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের ইতালির উপকূলে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হন যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় উপজেলার রুটি গ্রামের যুবক ২৫ বছর বয়সী সোহাগ।
গত ৫ আগস্ট ভূমধ্যসাগরে প্রায় ৭’শ অভিবাসী নিয়ে ট্রলারডুবির খবর শোনার পর থেকেই সোহাগের পরিবারে নেমে আসে শঙ্কার কালো ছায়া।
দুর্ঘটনার এক মাসের বেশি হলেও তার হদিস না মেলায় পরিবারটিতে চলছে শোকের মাতম। ওই দুর্ঘটনায় ৫০ জন অভিবাসীর মৃতদেহ উদ্ধার করে ইতালির নৌবাহিনী। তবে সোহাগের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানায় তার পরিবার।
নিখোঁজ সোহাগের চাচা আমিনুল ইসলাম সরকার চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, লিবিয়ায় অবস্থানরত কয়েকজন প্রবাসী তাকে ফোনে জানিয়েছেন, সোহাগ লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ হয়েছেন।
সোহাগ লিবিয়ার আলমোজা শহরের একটি পেট্রোল পাম্পে চাকরি করতেন। সেখানে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে জীবন ও কর্মসংস্থানের তাগিদে দালালদের প্রলোভনে পড়ে অন্যান্য অভিবাসীদের সঙ্গে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। একই ট্রলারে বাংলাদেশী ছিলেন আরো।
ট্রলারে থাকা অবস্থায় হেলাল ফোনে সোহাগের পরিবারকে জানান, সোহাগসহ মোট ১৮ জন এক গ্রুপে ছিলেন। সোহাগ তাদের সাথে ট্রলারে উঠেছিলেন। ট্রলারটি ছাড়ার দুই ঘণ্টা পর ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। অতিরিক্ত যাত্রী থাকার কারণে ফেটে যায় ট্রলারের তলদেশ। যাত্রীরা আতংকিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করলে ট্রলারটি একদিকে কাত হয়ে ডুবতে থাকে।
ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া ওই ট্রলারের যাত্রী ছিলেন আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের রুটি গ্রামের নান্নু মিয়ার ছেলে লিবিয়া প্রবাসী সোহাগ (২৫)। তিনি তিন বছর আগে কাজের সন্ধানে বৈধভাবে লিবিয়া পাড়ি জমিয়েছিলেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানায়, ওই দুর্ঘটনায় ৫০ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে উদ্ধার মৃতদেহের মধ্যে সোহাগের মরদেহ পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছে ইতালিতে অবস্থানরত কয়েকজন প্রবাসী।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ সোহাগের আত্মীয় স্বজনার তার বাড়িতে ভিড় করছেন। পিতা-মাতাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু কোনো সান্ত্বনাই সান্ত্বনা হতে পারছে না তাদের জন্য।