২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের কথা দফায় দফায় অস্বীকার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, এ ব্যাপারে সব সংবাদ ভুয়া, তাকে ছোট করার প্রয়াস। অথচ সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, সেই ভুয়া খবরের কারণেই নির্বাচনে জিততে পেরেছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ভয় ছিল, এফবিআই ও অন্যান্য সংস্থার তদন্তে এই অভিযোগগুলো সত্যি প্রমাণিত হলে তার জয়ের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। যতবারই ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা, রুশ হস্তক্ষেপ বা এমন কোনো সংবাদ হয়েছে, প্রায় সবগুলোকেই বানোয়াট খবর বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে ছড়ানো কিছু মিথ্যা খবর নির্বাচনের দিন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বহু সমর্থককে তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
গবেষণাপত্রটি এখনো অন্যান্য গবেষণা দলের দ্বারা যাচাই করানো হয়নি। তবে ভুয়া খবর কীভাবে ভোটারের সিদ্ধান্ত বদলাতে ভূমিকা রাখে, তা বুঝতে এখন পর্যন্ত এটাই প্রথম গবেষণার তথ্য।
গবেষণাটির তথ্য অনুসারে, ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমর্থক থাকা প্রায় ৪ শতাংশ ভোটার মিথ্যা সংবাদ বিশ্বাস করে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ক্লিনটনের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিলেন।
রিচার্ড গান্থার, পল এ. বেক এবং এরিক সি. নিসবেট নামের তিন গবেষণাকারী তাদের গবেষণার জন্য ২০১৬’র নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে সাড়া ফেলে দেয়া তিনটি ভুয়া খবর বেছে নেন। ‘ইউগভ’ নামের ওই জরিপের ২৮১টি প্রশ্নের মধ্যে খবর তিনটিও যোগ করে দেন তারা।
৫৮৫ জন ওবামা সমর্থকের ওপর জরিপটি চালানো হয়, যাদের ২৩ শতাংশ হিলারিকে ভোট দেননি। তারা হয় ভোট দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন, অথবা অন্য কোনো প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন।
ওবামা সমর্থকরা যে তিনটি সংবাদকে ‘সম্ভবত সত্য’ হিসেবে বিশ্বাস করেছিলেন সেগুলো এরকম:
১. হিলারি জটিল রোগের কারণে গুরুতর অসুস্থ (১২ শতাংশ বিশ্বাস করেছিলেন)
২. পোপ ফ্রান্সিস ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন (৮ শতাংশ বিশ্বাস করেছিলেন)
৩. হিলারি বিভিন্ন ইসলামি চরমপন্থি ও জঙ্গি সংগঠন, এমনকি আইএসের কাছেও অস্ত্র বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন (২০ শতাংশ বিশ্বাস করেছিলেন)।
সার্বিকভাবে ওবামার সমর্থকদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এই তিনটির অন্তত একটি সংবাদ বিশ্বাস করতেন। সেই বিশ্বাসীদের ৪৫ শতাংশ হিলারির পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, ভুয়া খবরে বিশ্বাস না করা ভোটারদের ৮৯ শতাংশই ভোট দিয়েছিলেন হিলারিকে।
অবশ্য এটাই একমাত্র প্রমাণ নয়। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি পরিচালিত সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে প্রচারণা চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমগুলোর মোট হার্ড নিউজের ২.৬ শতাংশই ছিল বানোয়াট খবর।