বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিএনপি’র সবচেয়ে বড় সাফল্য নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও বিশাল জনসমর্থন ধরে রাখা। নেতৃত্বের প্রকট সমস্যা নিয়ে বর্তমানে বিএনপি শ্বাসকষ্টে ভুগলেও এর হিমালয়সম আত্মবিশ্বাসের পেছনে রয়েছে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছায়া ।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান দলটির প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বিএনপি আজ তার ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দুই বারের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার হাতে দলের নেতৃত্বের মশাল থাকলেও বিভিন্ন কারণে তাঁর নেতৃত্ব এখন প্রশ্নবিদ্ধ। দলের অগণিত তৃণমূল নেতা-কর্মীর সামনে উপযুক্ত নেতার উপস্থিতি না থাকায় রাজনীতির মাঠ এখন মোটামুটি ফাঁকা। বিএনপির অনুপস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একাই খেলা চালিয়ে গেলেও বিএনপির করার যেনো কিছুই নেই। রাজনীতির মাঠে যতোটুকু শক্তি ও বোধ-বুদ্ধি থাকা প্রয়োজন, একসময়ের প্রবল প্রতাপশালী বিএনপি তা হারিয়ে এখন কেবলই নির্বোধ দর্শক।
বিএনপি রাজনীতির হিতাকাঙ্ক্ষী কিন্তু বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থাহীন এমন অনেকেই বিএনপির ব্যাপারে চরম অদৃষ্টবাদি হয়ে গেছেন । কেউ কেউ বিএনপির এই করুণ অবস্থার পেছনে বিএনপির বর্তমান রাজনীতির নাটের গুরুর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেন। ভুল নেতৃত্ব একটি দলকে কিভাবে ধ্বংসের কিনারে নিয়ে যায় ক্ষমতার মসনদ থেকে ছিটকে পড়া ক্লান্ত বিএনপি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বিএনপিকে বরাবরই আত্মসমালোচনার বাইরে রাখা হয়েছে। বিগত দুই দশকে মা-ছেলেকে কেন্দ্র করে একদল চাটুকার সৃষ্টি করেছে বিএনপি। যাদের একটি ম্যাডাম বন্দনায় ব্যস্ত, আরেকটি তারেক পুজোয় পাগলপ্রায় । তারেক রহমানকে সামনে রেখে বিএনপি রাজনীতির সবচেয়ে ক্ষতিকর ভাইরাসটির নাম ‘ভাইয়া গ্রুপ’। তারুণ্য নির্ভর ভাইয়া-গ্রুপের নেতাকর্মীদের সামনে ভোগ-বিলাসের যত মডেল ঝলমল করে দলের আদর্শ কিংবা রাজনীতির ন্যুনতম কাণ্ডজ্ঞান সেখানে নিদারুণ ছল ছল করে ।
ভবিষ্যতে যাকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি আবর্তিত হতে পারে সেই লন্ডনপ্রবাসী তারেক রহমানের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। দেশীয় রাজনীতিতে দেশপ্রেম ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রনায়কের অনবদ্য মূর্তি জিয়াউর রহমান। বিস্ময়করভাবে জিয়াউর রহমানের তনয় এ ক্ষেত্রে দারুণ সন্দেহজনক!
বিএনপি ধর্মের প্রতি সহনশীল রাজনীতি করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিএনপির এই কমিন্টমেন্টের সুযোগে ধর্মবাদী চরম প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি আস্তানা গেড়েছে জাতীয়তাবাদীদের ঘাড়ে। অবস্থা এমনই যে, বিএনপি যে ‘মডারেট’ রাজনীতির জন্য দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠির কাছে সমাদৃত হয়েছিলো, মৌলবাদী রাজনীতির দাপটে বিএনপির সেই মূল রাজনীতিই এখন চরিত্র হারিয়েছে ।
একজন দেশসেরা মুক্তিযোদ্ধার হাতে সৃষ্ট বিএনপির বর্তমান রাজনীতি দেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে খুবই বাজে অবস্থান নিয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এ ধরণের বিষয়ে বিএনপির অস্পষ্ট অবস্থান দেশের বেশিরভাগ মানুষ ভাল চোখে নেয়নি। রাজনীতিতে কৌশল অবলম্বন করা বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু সব ক্ষেত্রে ‘কৌশল’ প্রয়োগ করতে গিয়ে বিএনপিকে এখন মাশুল দিতে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সত্যিকার বিশ্বাস না থাকলে মেঠো বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে সাময়িক বিভ্রান্ত করা যায় সত্য কিন্তু বিভ্রান্তি কেটে গেলে সেই মানুষগুলোই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে দ্বিধা করে না। বিএনপি এই ইস্যুতে বরাবরই ভুল রাজনীতি করেছে, এখনো করছে।
৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় আছে দেশের অগণিত মানুষ। ভারসাম্যপূর্ণ রাজনীতি, গণতন্ত্র ও একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের তাগিদ থেকেই বিএপিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। বিএনপির ব্যাপারে অনেকের আশঙ্কা বিএনপি তার ভুল রাজনীতি শুধরে নিয়ে আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে কি? সময়ই বলে দিবে বিএনপির আগামীদিনের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি কেমন হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)