বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ৩টি ওয়ানডে সিরিজ এবং ৪টি টেস্ট সিরিজের মধ্যে প্রতিটিতেই হারের তিক্ত স্বাদ পায় টাইগাররা। এবার আসছে ইংল্যান্ড তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে। অতীতের সেই ‘সম্মানজনক হারের’ জন্য এখন আর খেলে না বাংলাদেশ বরং জয়টাই যেনো তাদের প্রাপ্য। তাই্ ভিন্ন অভিজ্ঞতাই হবে এবার সফরকারীদের।
তবে আগের সিরিজগুলোতে বাংলাদেশ দলের প্রাপ্তি বা অর্জনও কিন্তু কম নয়। এই দুই দলের প্রতিদন্দ্বিতায় এদেশীয় ভক্তদের কাছে সবচেয়ে জীবন্ত আর আকর্ষণীয় মুহূর্তের জন্ম দিয়েছিলেন রুবেল হোসেন।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের সেই ম্যাচটিতে রুবেলের ৪ উইকেট শিকার জয়ের পাশাপাশি কোয়ার্টার ফাইনালেও পৌঁছে দেয় টাইগারদের। হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন গেড়ে নেয়া শেষ ওভারে তার দুইটি ঝড়ো ইয়র্কারে স্টুয়ার্ট ব্রড আর জেমস অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করা আর দুহাত ছড়িয়ে সেই অনবদ্য উদযাপন। ২০১১ এর বিশ্বকাপেও ‘ব্যাটসম্যান’ শফিউল ইসলাম জয় এনে দিয়েছিলো টাইগারদের। পরাজয়ের শঙ্কার মাঝে তার সময়োপযোগী ২৪ রানের ইনিংস দলকে ভাসায় জয়ের আনন্দে।
সর্বশেষ দুই দেখার দুটিই ওয়ানডে ম্যাচে আর দুটিতেই জয় বাংলাদেশের ঝুলিতে। তবে দুই দেশের ক্রিকেট সিরিজগুলোর ফল বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক। তবে এবার বদলে যাওয়া নতুন ক্রিকেট পরাশক্তির মুখোমুখিই হতে হবে ইংলিশদের।
ওয়ানডে সিরিজ ৩টি
বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড এর আগে তিনম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে তিনবার। তিনটিতেই জয়ী হয় ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ সফরে এসে প্রথম সিরিজটি খেলে তারা ২০০৩ সালের নভেম্বরে। তিনটি ম্যাচেই খালেদ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বিশাল জয় লাভ করে মাইকেল ভনের ইংল্যান্ড। ম্যাচগুলোতে যথাক্রমে বাংলাদেশের ১৪৩, ১৩৪/৯, এবং ১৮২ রানের জবাবে ১৪৭, ১৩৪ এবং ৬৩ বল হাতে রেখেই অনায়াস জয় পায় সফরকারীরা।
এর পর ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবারও তিনম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসে ইংল্যান্ড। ৩-০ তে সিরিজ জিতে নেওয়া এ্যালিস্টার কুকের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তেমন কোন প্রতিরোধই গড়তে পারেনি সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ। প্রথম ২টি ম্যাচ ৬ ও ২ উইকেটেসহ শেষেরটি ৪৫ রানে জিতে নেয় সফরকারীরা। তবে প্রথম ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের ১২৫ রান, দ্বিতীয়টিতে মুশফিকুর রহিমের ৭৬ আর ইমরুল কায়েসের ৬৩ রান বাংলাদেশের প্রাপ্তি।
একই বছরের জুলাইতে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে একটি জয় পায় ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজার বাংলাদেশ। প্রথমটিতে ৬ উইকেটের পরাজয়ের পর দ্বিতীয়টিতে ইমরুল কায়েসের ৭৬ রানে ভর করে ৫ রানে জয় পায় টাইগাররা। শেষেরটিতে অবশ্য ১৪৪ রানের বিশাল জয় তুলে নেয় অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের ইংল্যান্ড।
টেস্ট সিরিজ ৪টি
২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৪ টি টেস্ট সিরিজ খেলে প্রতিটিতেই ২-০ ব্যবধানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। ২০০৩ সালের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে টেস্ট সিরিজ খেলতে আসা মাইকেল ভনের ইংল্যান্ড ম্যাচ দুটিতে ৭ উইকেট এবং ৩২৯ রানের জয় তুলে নেয়। খালেদ মাহমুদের বাংলাদেশ ম্যাচ দুটিতে কোন প্রতিদন্দ্বিতাই সৃষ্টি করতে পারেনি।
এরপর ২০০৫ এ ইংল্যান্ড সফরে গিয়েও ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ২৬১ রান, এবং ইনিংস ব্যবধানে ২৭ রানে পরাজিত হয় হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আফতাব আহমেদের অপরাজিত ৮২, জাভেদ ওমরের ৭১ রান এবং অধিনায়কের ৬৩ রান ছাড়া টাইগারদের পারফরম্যান্স ছিলো শোচনীয়।
আবার ২০১০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে ১৮১ রান এবং ৯ উইকেটের জয়ে ২-০তে টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় অ্যালিস্টার কুকের ইংল্যান্ড। সেই সিরিজে সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত ব্যাটিং ইনিংস উপহার দেয়। তামিম ইকবাল একাই তিনটি অর্ধশতক হাকান। জুনায়েদ সিদ্দিকির শতক, ছাড়াও প্রথম টেস্টেই মুশফিকুর রহিমের দুই অর্ধশতক মাহমুদুল্লাহ ২টি এবং সাকিব দ্বিতীয় টেস্টের শেষ ইনিংসে মাত্র ৪ রানের জন্য শতক বঞ্চিত হন।
বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড শেষ সিরিজটি খেলে ২০১০ এ ইংল্যান্ডের মাটিতে। সেই সিরিজে ঐতিহাসিক লর্ডসের মাটিতে তামিম ইকবালের অসাধারণ শতক এবং অনবদ্য উদযাপন এখনও বাংলাদেশীদের চোখে জীবন্ত। প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটের জয়ের পর দ্বিতীয়টিতে এক ইনিংস ও ৮০ রানে জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ম্যাচটিতেও শতরান করেন তামিম।