ছিলেন আর জে (রেডিও জকি)। সেখান থেকে ২০১৬ সালের ২ আগস্ট পরিচালক মাবরুর রশিদ বান্নাহর ‘তিনমাসে গল্প’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে আসেন। তখনও ছেলেটি ‘জনপ্রিয় আরজে’। রেডিওর শ্রোতাদের কাছে তার ছিল আলাদা শ্রোতাপ্রিয়তা। কথার জাদুতে মুগ্ধ করতে পারা সেই পেশা ছেড়ে চ্যালেঞ্জ নিয়ে পরে অভিনয়ে নিয়মিত হন। ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে বছর খানেকের মধ্যে তিনি নজর কাড়তে সক্ষম হন দর্শকদের।
বলছি অভিনেতা মুশফিক ফারহানের কথা। সময়ের সম্ভাবনাময় তরুণ অভিনেতা। সমালোচকরা তার অভিনয় দেখে ধরে নিচ্ছেন, আগামীর নাটক মিডিয়ার বরসা হতে পারেন তিনি। এবার ঈদে সেই ক্যারিশমাটা বোধহয় কিছুটা হলেও দেখিয়েছেন ফারহান। আলোচনার তুঙ্গে থাকা এ অভিনেতার সঙ্গে কথা হয় চ্যানেল আই অনলাইনের…
ঈদে আপনার কাজগুলো নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। আপনার মুখ থেকে শুনি সেই গল্প…
ঈদের জন্য নতুন পাঁচটি কাজ করেছি। আর তিনটি কাজ এসেছে বছর দুয়েক আগের করা। এরমধ্যে নতুন তিনটি প্রচার হয়েছে। লকডাউনের কারণে চারটি নাটকের শুটিং করতে পারিনি। নতুন পাঁচটি কাজ হচ্ছে বান্নাহ ভাইয়ের পরিচালনায় তিনটি ‘কালাই’, ‘সুইপারম্যান’, ‘ম্যাডম্যান’। অন্যদুটি রাজ ভাইয়ের পরিচালনায় ‘সেক্রিফাইস’, ‘লাইফ লাইন’। আনন্দের বিষয় ‘লাইফ লাইন’র মাধ্যমে সুমাইয়া শিমু আপু প্রায় ১২ বছর পর অভিনয়ে ফিরেছেন। তার সঙ্গে আমার কাজের সৌভাগ্য হয়েছে। একজন বড়মাপের শিল্পীর আচরণ যা হওয়া উচিত সবটাই শিমু আপুর মধ্যে পেয়েছি। আমি মুগ্ধ হয়েছি, অনেককিছু শিখেছি।
দর্শক-সমালোচকরা বলছেন, আপনার অভিনীত ‘সুপাইপার ম্যান’ ও ‘কালাই’ চমৎকার দুটি কাজ। প্রচারের পর আপনিও নিশ্চয় অভূতপূর্ণ সাড়া পাচ্ছেন? অভিজ্ঞতা জানতে চাই না। জানতে চাই, নাটকে ‘বিহাইন্ড দ্য শুটিং’-এর গল্প…
আমার বাবা নেই ১৮ বছর। শুধু মা আছেন। আমি তার একটিমাত্র ছেলে। মাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেদিন, ঠিক ওইদিন ‘সুপাইপারম্যান’ এর প্রথমদিনের শুটিং করি। জীবনে এমন অবস্থার মুখোমুখি আগে হইনি। মায়ের ওই অবস্থা, ওদিকে ক্যামেরার সামনে আমি; এটা সো টাফ জব। বলে বোঝাতে পারবো না। আল্লাহর রহমত ছিল বলেই কাজটি ভালোভাবে করতে পেরেছি। আমার মা এখন সুস্থ। দৃশ্যটি শেষ করে বান্নাহ ভাইসহ সবাই হাসপাতালে যাই। পরের দিন বান্নাহ ভাই শুটিং করতে চাননি, কিন্তু লকডাউন ও প্রথমদিনের পরিশ্রমের কথা ভেবে পরদিন মাকে হাসপাতালে দেখে শুটিংয়ে যাই। বস্তিতে শুটিং করেছি। গরুর খামার, দুর্গন্ধ সেখানে মেকাপ নিচ্ছিলাম, ছয়দিনের এক বাছুর বাঁধা ছিল আমার মেকাপ টেবিলের পাশে। পরিস্থিতি ফেইস না করলে আসলে বলে বোঝানো যাবে না।
‘কালাই’ হচ্ছে ছাগল নিয়ে অভিনয় করা কাজ। এটা তো আরও অনেক কঠিন। কারণ ছাগল কথা শোনে না। বান্নাহ ভাই যখন অ্যাকশন বলে ছাগল তখন আমার থেকে দৌড় দেয়। বারবার এটা হচ্ছিল। এরপর সময় নিয়ে ছাগলের প্রিয় খাবার কলা ও খোসা হাতে মেখে অভিনয় করেছি। হাতে কলার ঘ্রাণ পাওয়া ছাগল আর সরে যায়নি। এভাবে তিনঘণ্টা পর ছাগল আমার কাছে পোষ মানে। ছাগলের গোসলের দৃশ্যে একেবারে ন্যাচারাল যেন মনে হয় সেকারণে নিজেই বিলের মধ্যে নেমেছি। বিলে মাছ পচা, পানি ময়লা ছিল। কিন্তু আমি সেখানে নেমেছি ছাগল নিয়ে। ডিওপি জাহিদ ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করে নেই। বান্নাহ ভাই এটা আশাও করেননি এতোটা ন্যাচারাল দিতে পারবো। দুদিন শুটিং ঢাকার বাইরে করেছি। যখন ফিরছিলাম ছাগলের প্রতি এতো মায়া জন্মায় যে আমি কিনে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে লালন পালনের সমস্যা হবে ভেবে নিতে পারিনি। ছাগলটার প্রতি বান্নাহ ভাই আমার ইমোশনটা বুঝতে পারছিলেন।
কিন্তু রাস্তার ম্যানহোলের মতো স্থানে ঢুকে পড়া এবং সুপাইপারের চরিত্রটা কেন মনে হলো করি?
সবাই ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে চায়। আমিও চাই এবং সেটা করে দেখিয়েছি। বান্নাহ ভাই যখন আমাকে গল্পটা শোনান, আমি একেবারেই আয়ত্ত করে ফেলি। পরে ইউটিউব গুগল থেকে কিছু শিখে নেই। চিত্রনাট্যে ছিল না এমন দু-একটা সংলাপ আমার শেখার জায়গা থেকে দেই। চরিত্রটি নেয়া সত্যি চ্যালেঞ্জের ছিল। আমাদের জীবনটাই এখন রিস্কের। আর একটি চরিত্রের জন্য যদি একটু রিস্ক না নেই তাহলে কীভাবে হবে!
তিনবছর আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘নায়ক নন; আমি ভার্সেটাইল অভিনেতা হতে চাই’। সেই ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে?
শতকরা হিসেবে হয়তো ৪০ পারসেন্ট কাভার করতে পেরেছি। সত্যি বলছি ভাই, এই ভিউয়ের বাজারে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করা কঠিন। তবে আলহামদুলিল্লাহ্ আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। কালাই, সুপাইপারম্যান একদিনের আগেই মিলিয়ন ভিউ ছাড়াবে আমরা কেউ আশা করিনি। কারণ এ ধরনের কাজ ভিউ আসে খুব কম। কিন্তু এতো ভালোভাবে মানুষ গ্রহণ করেছে যে আমি, বান্নাহভাই সহ সবার প্রত্যাশা উৎরে গেছে। তবে হ্যাঁ, অন্যসময় আমার কাজগুলোতে যে ভিউ কম হয় তা কিন্তু নয়। ঈদ বা উৎসবে কয়েকশ নাটক থাকে। এই সময়ে মানুষের মনের মধ্যে ঢোকাটা খুব কঠিন। এসব কিছু মাথায় নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েই অভিনয় করেছি। দর্শকরা যে পরিমাণ সাড়া দিচ্ছেন, আমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবো কোনো ভাষা নেই। মানুষকে ধন্যবাদ, অভিনন্দন এগুলো লিখতে দেখা যায়। কিন্তু চার পাঁচ লাইনে মন্তব্য মানুষ মন থেকে তখনই লেখে যখন তার মনে প্রবেশ করা যায়। মানুষের বিভিন্ন ইতিবাচক মন্তব্য ও সাড়া আমার কাছে অ্যাওয়ার্ডের চেয়ে বড় মনে হয়।
শুনেছি আপনি মুম্বাই থেকে অভিনয় শেখার কোর্স করেছেন?
এটা ২০১৯ সালের ঘটনা। অনুপম খেরের অভিনয়ের স্কুল (অনুপম খের অ্যাক্টর প্রিপায়ার)। ৩১ দিনের কোর্স ছিল। পুরোটা অভিনয় কেন্দ্রীক। অনেক বেশি অভিনয় শিখেছি এমনটা নয়। তবে আমার ধারণা বদলে গেছে। অভিনয়ের টার্ম বুঝেছি। ধ্যান করে মানুষ যেমন কিছু জিনিস পায়, অভিনয়টাও তেমন, ধ্যানের মধ্যে বসবাস করতে হবে। এই জিনিসগুলো শিখেছি।
অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নে আরজে পেশা ছেড়েছিলেন। অভিনেতা হওয়ার পর এখন কোন স্বপ্ন দেখেন, সিনেমার নায়ক?
মাত্রই আমি হাঁটা শুরু করলাম। আরও অনেক উঁচু-নিচু পথ পাড়ি দিতে হবে। এখন আমি স্বপ্ন দেখি, ইন্টারন্যাশনাল যে প্লাটফর্ম আছে সেগুলোতে ভালো বা হিট কাজ দেয়া। সিনেমায় আমি অনেক ডাক পেয়েছি। ভালো পরিচালক বা আমার ভাবনার সঙ্গে মিলছে না বলে করছি না। নাটকের কথা যদি বলি, সবাই জানে গল্প চিত্রনাট্য মনের মতো না হলে আমি কাজ করি না। চাইলে মাসে ২০দিন শুটিং করা যায়। কিন্তু আমি ৮-১০ করি।