চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভিআইপি নন, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী: তিতাস প্রসঙ্গে হাইকোর্ট

স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় আলোচনায় উঠে আসা ভিআইপি প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছেন: তারা ভিআইপি নন, তারা (পাবলিক সার্ভেন্ট) প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী।

এক যুগ্ম সচিবের গাড়ির অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি বসে থাকায় ঘাটে আটকে পড়ার পর মাঝ নদীতে অ্যাম্বুলেন্সে তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট একথা বলেন।

এসময় বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ আরো বলেন: ভিভিআইপি’র কথা বললে বলতে হবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই হচ্ছেন ভিভিআইপি। কারণ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তার বিষয়টি থাকে।

এসময় তিতাসের বিষয়টি নিয়ে রিট করা আইনজীবী মো. জহিরুদ্দিন লিমন আইন উদ্ধৃত করে বলেন: কোনো ভিআইপি’র গাড়ি জাহাজ বা ফেরিতে উঠবার ক্ষেত্রে কেবল অগ্রাধিকার পাবে কিন্তু কোনোভাবেই জাহাজ বা ফেরি থামিয়ে রাখতে পারবেন না।

তখন আদালত বলেন: ইয়েস, সারা বিশ্বেই অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেতে দেয়া হয়। আর আমাদের এখানে ঘটেছে তার উল্টোটা।

এরপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুলসহ আদেশ দেন।

হাইকোর্ট তার রুলে তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে কেন ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন। আর আদালত আদেশে তিতাসের মৃত্যুর ঘটনাটি একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত করে আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে সে তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ দেন। এবং এবিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৮ আগস্ট দিন ধার্য করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. জহিরুদ্দিন লিমন। আর রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি এক নম্বর ফেরিঘাটে সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মণ্ডলের গাড়ির অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি বসে থাকায় ঘাটে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যু হয় বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিতাসের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।

তিতাসের মারা যাওয়ার বিষয়ে তার বড় বোন তন্নীসা ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেছেন: চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখে দ্রুত ঢাকায় পৌঁছাতে অর্ধলক্ষ টাকায় ভাড়া করা হয় আইসিইউ সংবলিত অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সটি ঘাটে এসে থামে ওইদিন রাত আটটার দিকে। পরে ঘাটে ফেরি পারাপারের জন্য তারা ঘাট কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য, এমনকি জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করেও সাহায্য চান। কিন্তু কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। তিন ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকার পরে রাত পৌনে ১১ টার দিকে ভিআইপি সাদা রঙের একটি নোয়া মাইক্রোবাসটি ফেরিতে ওঠার পরে ফেরিটি ছাড়া হয়। ফেরিটি ছাড়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই মাঝ নদীতে মারা যায় তিতাস।

এরপর মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল সাপোর্ট এন্ড পিপলস রাইটস এর চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহিরুদ্দিন লিমন গত মঙ্গলবার তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে জনস্বার্থে একটি রিট করেন। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট আজ রুলসহ আদেশ দিলেন।