আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারার কারণে শেষ পর্যন্ত হলো না বহুল প্রতীক্ষিত ভারত-পাকিস্তান বৈঠক। চিরবৈরী দুই দেশের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠকটি নয়াদিল্লীর দেওয়া শর্ত না মেনে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে বাতিল করা হয়েছে।
বৈঠক না হওয়াকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছে নয়াদিল্লি।
স্বাধীনতার ৬৮ বছরেও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব অবিশ্বাসকে দূর করতে পারেনি চিরবৈরী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তান। কাশ্মির ইস্যুতে আলোচনা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে আবারো ভেস্তে গেল উভয় দেশের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠক। এক বছর আগেই ঠিক ইস্যুতে একমত হতে না পারায় ভেঙে গিয়েছিলো বৈঠক।
রোববার অনুষ্ঠেয় বৈঠকের এজেন্ডা কী হবে তা নিয়ে বানানুবাদ চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে। ভারত চেয়েছিল শুধু সন্ত্রাসবাদ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হোক। কিন্তু পাকিস্তান কাশ্মির ইস্যুতে অনড়। কাশ্মিরের বিছিন্নতাবাদী সংগঠন হুরিয়তকে বাদ দিয়ে ইসলামাবাদ আলোচনায় রাজি থাকলে আলোচনা হবে, নয়তো নয়, দিল্লি শনিবার রাতের মধ্যে পাকিস্তানকে এই বিষয়ে সিন্ধান্ত জানাতে বললে শনিবার দিনভর চলা সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইসলামাবাদ সন্ধ্যাই জানিয়ে দেয়, ভারতের দেওয়া পূর্বশর্তের ভিত্তিতে কোনো আলোচনা হতে পারে না।
ইসলামাবাদের এমন সিদ্ধান্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছে দিল্লী। দিল্লির দাবি তাদের পক্ষ থেকে কোনো পূর্বশর্ত ছিলো না। ইসলামাবাদ অপবাদ দিয়ে আলোচনা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের অজিত ডোভাল ও পাকিস্তানের সরতাজ আজিজের বৈঠকে কাশ্মীর নিয়ে কথার দাবি জানিয়েছিলো পাকিস্তান। ডোভালের সঙ্গে বৈঠকের আগে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও করতে চেয়েছিলেন আজিজ। এই দু’টি বিষয় নিয়েই অনড় অবস্থান নিয়েছিলো নয়াদিল্লি। দিল্লিতে আসা এক ঝাঁক হুরিয়ত নেতাকে আটকও করা হয়। ফলে, বৈঠক বাতিল হয়েছে। স্নায়ুর যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত তাদেরই জয় হয়েছে বলে মনে করছেন মোদী সরকারের কর্মকর্তারা। উফা বিবৃতি ও শিমলা চুক্তি মেনে চলার কথা বলেছিলো। তা মানতে আগেই রাজি হয়েছিলো পাকিস্তান। তাদের সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক।
এনএসএ বৈঠক নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের চাপ আরো বাড়ে সরতাজ আজিজ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের পাল্টা-পাল্টি কথার যুদ্ধে। ইসলামাবাদে সাংবাদিক বৈঠক করে সারতাজ আজিজ বলেন উফা বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে কাশ্মীর-সহ সব বকেয়া বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী আসলে চাইছেন, কাশ্মীরের কথা ভুলে যাক পাকিস্তান। সেটা সম্ভব নয়।
তার দাবি, কাশ্মীর সবচেয়ে বড় বিষয়। পাকিস্তান বছরের পর বছর ধরে হুরিয়তের সঙ্গে কথা বলে এসেছে। তাই হুরিয়তের সঙ্গে কথা না বলার প্রশ্ন নেই। দিল্লিতে সাবির শাহ, বিলাল লোনের মতো হুরিয়ত নেতা আটক হওয়ায় উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র-এর কার্যকলাপ নিয়ে আমাদের কাছে তিনটি নথি আছে।’ তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, ‘এনএসএ বৈঠক না হলে জাতিসংঘ সম্মেলনের সময়ে আমরা ভারতকে এই নথিগুলি দেব। জাতিসংঘ মহাসচিব, কাশ্মীরে জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলিকেও তা দেওয়া হবে।’
আজিজের দাবি, ভারত বারবার সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি ভাঙছে। পাকিস্তান কেবল আত্মরক্ষা করছে।
এরপর পরেই পাল্টা আক্রমণে যায় দিল্লি। সুষমা স্বরাজ সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, উফা বিবৃতির ভূমিকায় সব বকেয়া বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এনএসএ বৈঠকে যে কেবল সন্ত্রাস-সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে, আর সেটাও সেখানে স্পষ্ট বলা আছে। শিমলা চুক্তি মানলে কোনো তৃতীয় পক্ষকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সামিল করার প্রশ্নই নেই। তাই হুরিয়তকে আলোচনায় অংশীদার করা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘ভারত-পাক বৈঠক মাত্রই ‘পূর্ণাঙ্গ’ (কম্পোজিট) আলোচনা নয়। কাশ্মীর-সহ আটটি বিষয় পূর্ণাঙ্গ আলোচনার সূচিতে রাখা হয়েছে। সন্ত্রাস থামলে তবেই কাশ্মীর নিয়ে কথা হতে পারে।’
র-এর কার্যকলাপ নিয়ে নথিকেও কার্যত উড়িয়ে দিয়ে সুষমা বলেন, ‘ওই নথি টিভিতে দেখানোর জন্য নয়। আলোচনার টেবিলে রাখার জন্য। আমরা তো পাকিস্তান থেকে আসা জীবন্ত জঙ্গিকেও হাজির করতে পারি।’
ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার শান্তি আলোচনার প্রধান অন্তরায় কাশ্মির ইস্যু। দুই দেশ তিনবার নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়েছে, দুইবারই কাশ্মির ইস্যু নিয়ে। উভয়পক্ষই কাশ্মির নিজেদের দাবিকরলেও শাসন করে কাশ্মিরের একাংশ।