লন্ডনে শুরু হয়েছে আইসিসির সাধারণ সভা। সেখানে উপস্থিত আছেন বিসিবির কর্তারাও। সভায় ইংল্যান্ড ও ভারতীয় বোর্ডকে আগামী দুবছরের মধ্যে তাদের দেশে গিয়ে খেলার প্রস্তাব দেবে বিসিবি। বোঝাবে বাংলাদেশের সঙ্গে খেললে এখন বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান হওয়া যাবে। বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে সেকথাই জানালেন।
আইসিসির সভায় যোগ দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। বোর্ড সভার এজেন্ডার বাইরে বিসিসিআই ও ইসিবিকে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার প্রস্তাব দেবেন তারা।
জালাল ইউনুস বললেন, ‘এই ফোরোমে আলাপ-আলোচনার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। এক দেশ আরেক দেশের সাথে কথা বলে দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলো আরেকবার ঝালাই করে নিতে পারে। আমরা অনেকদিন ধরে ভারতের সাথে সিরিজ খেলছি না। ইংল্যান্ডেও ট্যুর হচ্ছে না। আমরা চাইবো ইংল্যান্ড ও ভারতে গিয়ে খেলতে। আইসিসি সভায় যেহেতু সদস্য দেশগুলোর প্রেসিডেন্ট, সিইওরা থাকবেন। এটা বড় সুযোগ তাদের সাথে আরেকবার আলাপ আলোচনা করার।’
একটা সময় ছিল মাঠের ক্রিকেটে অসহায় আত্মসমর্পণ করত বাংলাদেশ। হয়তো কখনো লড়াই জমত সামান্য। অর্থনৈতিকভাবে কম লাভবান হবে এমন ধারণা থেকে সেসময় ইংল্যান্ড, ভারতের মতো দলগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে আগ্রহ দেখায়নি। পরিস্থিতি পাল্টেছে। মাঠের ক্রিকেটে এখন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী টাইগাররা। অর্থনীতির ক্রিকেটেও গ্যালারিতে দর্শক উপচে ফেলা প্রতিপক্ষ। বিসিবি তাই চাইছে দলগুলো আরো বেশি করে বাংলাদেশের সঙ্গে খেলুক। বিসিবি তাই দেশগুলোর ক্রিকেট বোর্ডের কাছে নিজেদের চাওয়া ও যুক্তিগুলো তুলে ধরবে।
এমনিতে আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচি পরিকল্পনায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নেই বাংলাদেশের। এই এফটিপি তৈরি করা হয়েছিল ২০১৪ সালে। গত দুই বছরে বাংলাদেশ শক্তিধর দেশগুলোকে হারিয়ে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। পরিস্থিতি পাল্টায় এফটিপিটা তাই নতুন করে সাজাতে বিসিবির এই উদ্যোগ।
জালাল ইউনুস তাই বাস্তবতাটাই মনে মনে করিয়ে দিলেন আবারো, ‘বাংলাদেশের এখন যেমন পারফরম্যান্স, তাতে বড় দলগুলোর সঙ্গে খেলার দাবি রাখে। সেই দাবিই জানাবে বিসিবি। পারফরম্যান্স দিয়েই বাংলাদেশ এতদূর এগিয়েছে। তাই ইংল্যান্ড ও ভারতের এখন এমন মনে করার বিষয় নেই যে ট্যুর করলে তা বাণিজ্যিকভাবে কম লাভবান হবে। আর বাংলাদেশ যেখানেই খেলে দর্শকে গ্যালারি ভরে যায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও সেটা দেখা গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেললে কিন্তু এত দর্শক দেখা যেত না। ট্যুর হলে ভারত ও ইংল্যান্ড সেটা বুঝবে।’
এবারের সভায় কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে তারও একটা ধারণা দিলেন এই বিসিবি পরিচালক, ‘আইসিসি গত কয়েকটা মিটিংয়ে গঠনতন্ত্র নিয়ে অনেক আলোচনা করেছে। কিছু পরিবর্তন আসছে। সেগুলো অনুমোদনের ব্যাপার আছে। আইসিসির উইমেন্স উইংয়ে একজন পরিচালক নিযুক্ত হতে পারেন। আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের টেস্ট স্ট্যাটাসের ব্যাপারেও আলোচনা হবে।’
জুলাইয়ে পাকিস্তান দলের বাংলাদেশ সফরের আর কোন সুযোগ দেখছেন না জালাল ইউনুস, ‘এখন আর সুযোগ নেই। অস্ট্রেলিয়া চলে আসবে সামনে। এখন সময় নেই পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ খেলার।’
তবে সিরিজটি অন্য কোন সময়ে হতে পারে কিনা সে ব্যাপারে তিনি বললেন, ‘এখন বলা কঠিন। সামনে হয়তো আলাপ-আলোচনা করবো। অন্য কোন সময়ে যদি খেলা যায়। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতে রাজি আছি। এই সমস্যা সাময়িক ব্যাপার। হয়তো কোন ভুল বোঝাবুঝি ছিল। এটা স্থায়ী কোন সমস্যা না। আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়ে যাবে।’
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টেবিলের সেরা আট দল সরাসরি আগামী বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে। ওই তারিখের মধ্যে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচটি ওয়ানডে খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের নেই কোন ওয়ানডে ম্যাচ। এর মাঝে নতুন কোন সিরিজ আয়োজনের সুযোগও নেই বলে জানালেন জালাল ইউনুস।
আসছে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের অপেক্ষাই এখন বাংলাদেশের। পরে সেপ্টেম্বরের শেষেদিকে সাউথ আফ্রিকা সফর টাইগারদের। টেস্ট দিয়ে শুরু হবে সিরিজ। সফরে রয়েছে দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও একটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ।