আগামী পাঁচ বছরে নতুন ৬০ লাখ কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করছে ভারত। সম্প্রতি ঘোষিত বাজেটে এ পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ ভারতের পক্ষে এই কর্ম সংস্থান আদৌ সম্ভব হবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ ভারতে বেকারত্বের হার অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতের বেকারত্বের ধরণ নিয়ে লিখেছেন ক্রেইগ জেফরি এবং জেন ড্যাসন। তারা ভারতে বেকারত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন।
২০০০ সালের প্রথম দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের মিরাটে কয়েকজন শিক্ষার্থী ঠাট্টার ছলে নিজেদের নাম দিয়েছিলেন ‘নোহোয়ার জেনারেশন’। যাকে বলা যায় ‘কোথাও নেই প্রজন্ম’।
বছরের পর নিষ্ফল প্রচেষ্টার পর এই প্রজন্ম লক্ষ্য করে যে তারা তাদের গ্রামের বাড়ী এবং শহরে অন্ন সংস্থানের স্বপ্নের মধ্যে আটকে আছেন। তারা মনে করেন, বাস্তবতা আর স্বপ্নের ফারাক এত বেশী যে কোনমতে দিন পার করাই তাদের জীবনের অর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেমন আশঙ্কা করা হচ্ছে ভারতের বেকারত্ব সঙ্কট তারচেয়ে অনেক বেশী জটিল
ভারতের লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত যুবক নামমাত্র পারিশ্রমিকে কাজ করছে। অথচ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত জনসংখ্যাতে মুনাফা পাবে বলে যে ধারণা প্রচলিত সেটাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। গত পাঁচ বছরে ভারতে বেকারত্বের অবস্থা আরও পোক্ত হয়েছে। বেকারত্ব নিয়ে উদ্বেগও বেড়েছে।
এখন লক্ষ্য করা বিষয় হলো, ভারতের এই লাখ লাখ বেকার সময় কাটায় কীভাবে? সমাজের অন্যান্য অংশের সঙ্গে তাদের সংযোগ কেমন? তারা ভারতকে কতটা প্রভাবিত বা পরিবর্তন করছে?
উত্তর প্রদেশ এবং উত্তরখান্ড রাজ্যে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে গবেষণা করে দেখা গেছে, সামাজিকভাবে তাদের দুর্ভোগ চরম। বেকার সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ হতাশাগ্রস্ত। তাদের হাতে নেই অর্থ। তারা পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারছে না। অনেক সময় প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় পরিবারে এবং সমাজে তাদের হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। চাকরির অভাবে অনেকেরে বিয়ে হচ্ছে না।
বেকার যুবগোষ্ঠী উপার্জন করতে পারছে না অথচ পরিবার তাদের শিক্ষার পেছনে বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এরাই তরুণ বয়সে সরকারি চাকরি করে দেশের সেবা করার স্বপ্ন দেখে এসেছে।
ভারতের বেকার যুবকরা দিনে দিনে অবসাদগ্রস্ত এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। অথর্ব বলে নিজেদের দোষারোপ করছে বা কেবলই দিন পার করছে। মনে হচ্ছে চারদিকে কেবলই ‘কোথাও নেই প্রজন্ম’।
কিন্তু এদেরই কেউ কেউ দৈনন্দিন জীবনে উদ্যোক্তা হচ্ছে। কোনরকম একটা কাজ খুঁজে নিচ্ছে। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে না। কিন্তু দক্ষতা অনুযায়ী কাজই দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারে।
সম্প্রতি বেকারত্ব বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু এই যুব সম্প্রদায় সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গ্রাম এবং শহরের প্রতিবেশীদের কাজে লাগতে পারে এরা। সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের দেয়া নাগরিক সুবিধা পেতে সহায়তা করতে পারে। তারা নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি, ক্ষুদ্রঋণ, ধর্মীয় সহনশীলতা, পরিবেশের সুরক্ষা এবং উন্নয়নে কাজ করতে পারে। বেকার যুবকদের কেউ কেউ মনে করে, নিজেদের কোন কাজে না লাগলেও তারা পরের প্রজন্মের কাজে লাগতে পারে।
বেকারত্বের এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা এবং ক্যারিয়ার পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে তরুণরা বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছে। অভিভাকরাও একই সমস্যা মোকাবেলা করছেন। অথচ এই ভারতের এমনি বিশ্বের মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তাদের এই অবস্থান নীতি নির্ধাকদেরও বিরাট প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, কীভাবে এই যুব সম্প্রদায়কে সহায়তা করা যায়? ‘মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুর্যাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম’ হয়তো এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারে।