বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা ভারত এখন টিকার দানের গভীর বিড়ম্বনায় পড়েছে।
অনুমোদন পেয়ে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনে থাকা দুই কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইনডিয়া এবং ভারত বায়োটেক প্রত্যাশা বা চাহিদা- কোনোটাই পূরণ করতে পারছে না। ফলে খোদ রাজধানীতে শতাধিক টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
বিশ্বে প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের যত টিকা উৎপাদন হয়, ভারত একাই তার ৬০ শতাংশের যোগান দেয়। কেবল টিকা নয়, জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনেও শীর্ষে থাকা ভারত বিশ্ববাজারে পরিচিতি পেয়েছে ‘ফার্মেসি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে।
সেই ভারত কী করে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে এমন দুর্দশার মধ্যে পড়ল?
বিবিসির তথ্য মতে, স্নেহা মারাঠির বয়স ৩১, ভারত সরকার তার বয়সীদেরও করোনাভাইরাসের টিকা দিচ্ছে। কিন্তু অনলাইনে সেই টিকা নেয়ার দিন ঠিক করতেই তার একটা দিনের অর্ধেক সময় লেগে গেছে। তার ভাষায়, টিকার জন্য নিবন্ধনের কাজটা অনেকটা কুইজ খেলার মত। যে আগে সব প্রশ্নের উত্তর দেবে, সেই জিতবে।
নিবন্ধনের সবগুলো ঘর পূরণ করতে সময় লেগেছিল মাত্র ৩ সেকেন্ড, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শেষ মুহূর্তে স্নেহার সেদিনের স্লট বাতিল করে দেয়, কারণ তাদের হাতে আর টিকা ছিলো না।
ফলে ওই তরুণীকে আরেকবার অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য চেষ্টা করতে হয়। বারবার একই ঘটনা ঘটতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তার নিবন্ধনের চেষ্টা সফল হয়।
ভারতে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সী সব নাগরিককে টিকা পেতে কোউইন নামের একটি ওয়েব প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হচ্ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ খুবই কম।
এ অবস্থায় ভারতীয়দের মধ্যে প্রযুক্তি-দক্ষ কেউ কেউ কম্পিউটার সফটওয়্যারে কোড লিখে ভুয়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট তৈরি করছেন বলেও খবর আসছে।
স্নেহা মারাঠি কোডিং জানেন না, তবে তিনি সেই ভারতীয় নাগরিকের একজন, যারা ডিজিটাল বৈষম্যের দেশেও ইন্টারনেটের সুবিধাভোগী।
আর অন্য ভাগে আছে সেই কোটি কোটি ভারতীয়, যাদের স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ নেই, অথচ টিকা নিশ্চিত করার এটাই একমাত্র পথ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকার ৯৬ কোটি ভারতীয়কে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কর্মসূচি শুরু করেছে, অথচ সরবরাহের পরিমাণ এর ধারে কাছেও নেই। লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভারতের দরকার ১৯২ কোটি ডোজের বেশি।
আরও খারাপ খবর হল, টিকার এই ঘাটতি দেখা দিয়েছে এমন এক সময়ে, যখন সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত বিপর্যস্ত, এমনকি তৃতীয় আরেকটি ঢেউয়েরও শঙ্কাও করা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, দুর্বল পরিকল্পনা, ক্রয় প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা এবং অনিয়ন্ত্রিত দাম- এরকম বেশ কিছু বিষয়ে মোদি সরকারের ভুল সিদ্ধান্তই ভারতের টিকাদান কর্মসূচিকে একটি বৈষম্যপূর্ণ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।