বাড়িতে গরুর মাংস রেখে খাওয়ার গুজবে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর প্রদেশের দাদরি গ্রামে মোহাম্মদ আখলাক নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়। তবে পরে ওই ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাদের ফ্রিজে ছাগলের মাংস ছিলো। ঘটনার পর থেকে এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে।
শুধু গো-মাংস নিয়ে হত্যাই নয়, ভারতে সার্বিকভাবে অসহিষ্ণুতা বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে গত কয়েকদিনে ৪১ ভারতীয় লেখক-সাহিত্যিক তাদেরকে দেওয়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা ফেরত দিয়েছেন।
এর কারণ হিসেবে তারা মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে কথা বলায় গত ৩০ আগস্ট এক ভারতীয় স্কলারকে হত্যাকে তুলে ধরেছেন। এ নিয়ে ভারতজুড়ে চলছে তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, তার দল বিজেপি এ ধরনের ঘটনার সমর্থন করে না। বিরোধীরা এসব ঘটনাকে সামনে এনে মেরুকরণের রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে হরিয়ানা প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মুসলিমরা এ দেশে থাকতে পারবে; কিন্তু এ জন্য তাদের অবশ্যই গো-মাংস খাওয়া ছাড়তে হবে।
মোহাম্মদ আখলাক হত্যাকাণ্ডকে ‘ভুল বোঝাবুঝির ফল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু সেই স্বাধীনতার রয়েছে সীমাবদ্ধতা। আমরা কেউ কারো অনুভূতিতে আঘাত করতে পারি না।’
এখানে দু’পক্ষের সঙ্গেই অন্যায় হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মনোহর লাল।
অবশ্য খাট্টারের ওই বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে তা থেকে পিছু হটেন তিনি। পরে বলেন, ‘আমার বক্তব্যকে পেঁচিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। যদি আমার কথায় কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগে তার জন্য আমি ক্ষমা চাইতে রাজি আছি।’
বিরোধী রাজনীতিকরা অভিযোগ করেন, খাট্টার বলেছেন, মুসলিমদের ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিৎ।
মুখ্যমন্ত্রী এর প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আমি কাউকে পাকিস্তান চলে যেতে বলিনি। আমি বলেছি আমাদের উচিৎ একে অপরের অনুভূতিকে সম্মান করা।’
ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ধর্ম নিয়ে হত্যা-সহিংসতা চালানো ব্যক্তিদের ‘সন্ত্রাসী দল’ ঘোষণা করা উচিৎ এবং এ নামেই ডাকা উচিৎ। তারা ছোটখাট ব্যাপারে ধর্মকে অস্ত্র করে কখনো মানুষ খুন করছে, কখনো আবার যার তার গায়ে কালি ছুঁড়ে মারছে। এরা সমাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
থাপার বলেন, ‘এরা কোনো বিচ্ছিন্ন বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নয়। এরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধারক।’
লেখক-সাহিত্যিকদের পুরস্কার ও সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, অভিনব এই প্রতিবাদ খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। এর মাধ্যমে হয়তো নীরব সরকারের টনক নড়বে।