চোট নিয়ে দিব্যি সিরিজের পর সিরিজ খেলছেন ক্রিকেটাররা। যার প্রভাব পড়ছে পারফরম্যান্সে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সিরিজেও দেখা গেছে অনেক সিনিয়র খেলোয়াড়ও নিজেকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম দেননি। এই ধারার বিপক্ষে সাকিব আল হাসান। দলে ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার পেতে রোটেশন পদ্ধতিতে খেলোয়াড়দের সিরিজ খেলানোর কথা বললেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। উদাহরণ হিসেবে সামনে আনলেন ভারতীয় ফর্মুলা।
বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি করতে বনানী বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীদের কাছে যান সাকিব। সেখানে ক্রিকেট নিয়েও বিস্তর কথা বলেন টাইগারদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
শ্রীলঙ্কায় ৩-০তে সিরিজ হার, এই ফলাফল দেখে কতটা হতাশ আপনি?
হতাশাজনক অবশ্যই। এখানে আসলে লুকোচুরি করার কিছু নেই। বিশ্বকাপের সময় শ্রীলঙ্কার সাথে আমাদের খেলাটা হয়নি। অনেকেই নিশ্চিত ছিল আমরা দুই পয়েন্ট পাবো। এই সিরিজে কিন্তু প্রমাণ হয়েছে সেই জয়টা নিশ্চিত ছিল না। আমরা জিততেও পারতাম, হারতেও পারতাম। এই সিরিজটার কথা যদি বলি, হতাশাজনক। সিরিজ হারলেও একটা ম্যাচ যদি জিতে আসতে পারতাম, আমাদের আত্মবিশ্বাসের জন্য কাজে আসত। সেটা হয়নি।
হয়ত এখন সময় এসেছে ভালোভাবে চিন্তা করে পরিকল্পনা করে পরের তিন-চার বছরের জন্য ভাবার। আমি নিশ্চিত বিসিবিতে যারা আছেন এটা নিয়ে চিন্তা করছেন। ইতোমধ্যেই আমাদের দুজন কোচও নিয়োগ দিয়েছেন। হয়ত পুরো কোচিংস্টাফ একসাথে হলে বোর্ডকে একটা পরিকল্পনা দিতে পারবে। সেভাবে কাজ করতে পারলে আমার মনে হয় আমাদের ক্রিকেট গত চার বছরে যতদূর এগিয়েছে, সেখান থেকেই আবার সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
এই ব্যর্থতার কারণটা কি?
সবসময়ই বলি, এগুলো মিডিয়ার সামনে বলতে চাই না। মানে এটা সবার জানার বিষয় বলে আমি মনে করি না। টিমের সঙ্গে যারা আছে, নীতি-নির্ধারক যারা আছে, কোচিংস্টাফ আছে, খেলোয়াড় আছে, তাদের সঙ্গে আলাপ করে যদি সমস্যা সমাধান করা যায় সেটা ভালো হবে।
সবাই বলছে আপনি থাকলে ফলাফল অন্যরকম হতে পারত..
দেখুন, বলা যায় না। ক্রিকেট এক বলের খেলা। তিন বলে তিনদিন আউট হয়ে গেলে হয়ত কিছু নাও করতে পারতাম, কোনো অবদান নাও রাখতে পারতাম (হাসি)। এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা, ঠিক হতে পারে ভুলও হতে পারে। যখন একজন প্লেয়ার রেডি থাকে তখনই তার খেলাটা উচিত। যখন সে রেডি না, খেলা উচিত না। কিংবা পুরো ফিট না থেকে খেলাটা কঠিন হয়ে যায়। পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে এটা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে যে, আপনি কতটা ফিট কতটা আনফিট। সেটা মেন্টালি হতে পারে ফিজিক্যালি হতে পারে। এই জিনিসগুলো আমাদের বুঝতে হবে। কারণ এখন আধুনিক ক্রিকেট যে অবস্থায় এসেছে, এত পরিমাণে ম্যাচ থাকে যে, এই জিনিসগুলো ম্যানেজ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
যদি অন্যান্য দলের দিকে তাকিয়ে দেখেন, এই জিনিসগুলো কিন্তু কোচিংস্টাফ বলেন, ফিজিও বলেন, ট্রেনাররা বলেন- ওদের মাধ্যমে প্লেয়ারদের সঙ্গে আলোচনা করে ওদের ম্যানেজমেন্ট জিনিসগুলো চালু করেছে। কারণ একটা খেলোয়াড়ের পক্ষে টানা খেলা কখনোই সম্ভব না। তাই এই ব্রেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ। ব্রেকগুলো যখন থাকবে অনেক খেলোয়াড়ের সুযোগ আসবে। পাইপ লাইনে খেলোয়াড়ও তৈরি হবে বলে। তাই এই জিনিসগুলো অনেক বিস্তর আকারে পরিকল্পনা করতে হবে। আমি সামান্য একটু বললাম। এগুলো যখন আলাপ আলোচনা হবে, অবশ্যই এগুলো আসবে।
খেলা উচিত না বললেন, এটা নোটিশ করবে কে?
দেখেন এটা দুই পক্ষেরই দায়িত্ব। বোঝারও দায়িত্ব। যখন একজন খেলোয়াড় বলছে যে- না, আমার মনে হয় আমার ব্রেক নেয়া উচিত। কিংবা কোচিংস্টাফ থেকে বলছে, তোমার এই ব্রেকটা নেয়া উচিত। প্লেয়ারের ক্ষেত্রেও এটা বোঝা উচিত, কোচিং স্টাফদেরও বোঝা উচিত। আমি ভারতের একটা ভালো উদাহরণ দিতে পারি। শেষ বছরে ওদের ক্রিকেট ইতিহাসে কম ইনজুরি হয়েছে খেলোয়াড়দের। এর একটা বড় কারণ ওরা বাই-রোটেশন পলিসিতে খেলেছে। এটাতে যেটা হয়েছে, ওদের অনেক খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। অনেকে এক্সপোজার পেয়েছে।
একই সময়ে ওদের প্লেয়াররা যখন যে এসেছে, তখন ফ্রেশ অবস্থায় খেলতে পেরেছে ও পারফর্ম করতে পেরেছে। যদি দু-একজন দেখেন, বিরাট কোহলিসহ সবাইকে কিন্তু বিশ্রাম দিয়েছে। কোনো না কোনো ফরম্যাটে, কোনো না কোনো সিরিজে সবাই রেস্ট পেয়েছে। তিনটা ফরম্যাটে খুব কম খেলোয়াড়ই এক সিরিজে খেলেছে। এই জিনিসগুলো আমাদের বুঝে কাজ করতে হবে। কোচিংস্টাফ, বোর্ড ও খেলোয়াড়ের মধ্যে খুব ভালো একটা সমন্বয় থাকতে হবে। তা না হলে এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা তৈরি হবে, কিংবা নেতিবাচক কথা তৈরি হতে পারে যদি তথ্যগুলো ঠিকভাবে না যায়।
তামিমের জন্য কোনো বার্তা থাকবে?
না। দেখুন, একজন ক্রিকেটারের এরকম সময় যেতেই পারে। আমার কাছে এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় ওর জন্য খুব ভালো একটা বিশ্রাম করা, রিকভার করা, ফ্রেশ হওয়া এবং শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসা। আমি নিশ্চিত তামিম এটা করবে।
আপনি কবে ফিরবেন খেলায়?
আপাতত কাল হজে যাচ্ছি। আসার পরে আফগানিস্তানের সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটা সিরিজ আছে। দেখা যাক, যদি ফিট থাকি।