দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন আয়ের মানুষের। আয়-ব্যয়ে সামাঞ্জস্য রাখতে না পেরে কেউ কেউ ভাত খাওয়া কমিয়ে রুটির উপর নির্ভরশীল হচ্ছেন। রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সেলিনা আক্তার একজন নিম্ন আয়ের মানুষ। বাবা-মায়ের টানাটানির সংসারে কিছুটা হাল ধরতে পড়াশুনা শেষ না করেই নেমে পড়েন কাজের সন্ধানে। তিন বছর আগে ঢাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় পাঁচ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন তিনি। রোববার দুপুরে লাঞ্চের ছুটির ফাঁকে চাল কিনতে গেছেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। এসময় চ্যানেল আই অনলাইনকে এক অবিশ্বাস্য তথ্য জানান এই পোশাক কর্মী। বললেন, চালের দামের উর্দ্ধগতির কারণে ভাত খাওয়ার পরিমাণ কমাচ্ছেন তিনি। তার সহকর্মীদের মধ্যেও অনেকেই রাতে ভাত না খেয়ে রুটি কিনে খাচ্ছেন।
চালের দাম আসলে নিম্ন আয়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কতটা প্রভাব ফেলছে তা জানার জন্য রাজধানীর কাঁঠাল বাগান, কারওয়ান ও সাতরাস্তায় কথা হয় কয়েকজন রিকশা চালকের সঙ্গে। বাজারে চালের দাম কেমন জানতে চাইলে ক্ষোভ ঝেড়ে তারা বলেন, যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে খেয়ে-দেয়ে বাড়ি পাঠানো যায় না।এক হিসেব দিয়ে তারা বলেন, আগের ১০ কেজি চালের দাম দিয়ে এখন ৮ কেজিও পাওয়া যায় না।
বাবুল নামের একজন রিকশা চালক বলেন, ‘ভাত না খেয়ে তো বাঁচা যাবে না। কিন্তু এখন তো দেখছি খাওয়া কিছুটা কমাতে হবে। এছাড়া উপায় নাই।’
ভোক্তাদের এসব আক্ষেপ আর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বাজার যাচাই করে। কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা।
খোদ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবমতে, এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। আর এক বছরে বেড়েছে ১৭ থেকে ১৮ থাকা।
সংস্থাটির দৈনিক বাজার দর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রোববার মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫৪ টাকায় আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৮ টাকায়।
এ বছর হাওরে বন্যা ও ব্লাষ্ট রোগে ধানের উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়। তবে বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চাল আমদানিতে শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ, বিনা জামানতে চাল আমদানির সুযোগ, এমনকি সরকারি উদ্যোগে চাল কেনাসহ নানা ধরনের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ভেস্তে গেছে সব উদ্যোগ। লাগাম টানা যাচ্ছে না চালের দামের। কিন্তু দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেন না পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী আর মিল মালিকরা। একে অপরের উপার দোষ চাপিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন। আর তাদের এই দোষ চাপানোর মাঝে পিষ্ট হচ্ছেন ভোক্তারা।
চালের দামবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা অজুহাত হিসেবে মিল মালিকদের সিন্ডিকেট, কেউ আড়তদারদের কারসাজি, কেউ অতিবৃষ্টি ও বন্যা, বন্দর ও কাস্টমসের জটিলতাকে দায়ী করেছেন। বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে উল্লেখ করে কেউ কেউ বলছেন, রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। তাই ট্রাক ভাড়া বেড়েছে। এছাড়া বৃষ্টির পানিতে মজুদকৃত চাল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দাম বাড়ছে।
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তদাররা দাম বাড়িয়েছে, তাই খুচরা বাজারের প্রভাব পড়েছে। আর আড়তদাররা মিল মালিকদের দায়ী করে বলছেন, মিলাররা চাল ছাড়ছে না, বাজারে চালের সরবরাহ কম। এ কারণে নতুন করে চালের দাম বেড়েছে।
কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী জনতা ট্রেডার্সের মো. রাসেল চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মিল মালিকরা বলছে তাদের কাছে ধান নেই। অন্যদিকে ভারতও চাল দিবে না। মায়ানমার থেকে চাল আসাটাও অনিশ্চিত। এসব কারণে বাজারে প্রভাব পড়েছে।